সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পৃথিবীর ফুসফুস বলে পরিচিতি আমাজনের জঙ্গলে দাবানলের নেপথ্যে লোভী মানুষদের ষড়যন্ত্রকে দায়ী করেছিল পরিবেশবিদদের একাংশ। এবার মেরুপ্রদেশের (Arctic Region) অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, তাপপ্রবাহের দায় বর্তাল মানবজাতির উপরেই। এক সমীক্ষা বলছে, মানুষের একাধিক দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব, তারই ফলাফল এই অস্বাভাবিক উষ্ণতা। এটা মোটেই প্রকৃতির স্বাভাবিক, সাধারণ বদল নয়।
রাশিয়ার শীতলতম মেরু শহর ভারখোয়ানস্কের (Verkhoyansk) গড় তাপমাত্রার পারদ জুন মাসে ৩৮ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠেছিল। সেটাই ছিল সর্বোচ্চ। তাপমাত্রার এত হেরফের দেখে সন্দেহ গভীর হয় পরিবেশ বিজ্ঞানীদের। এই তাপমাত্রা মেরুদেশের গ্রীষ্মের তুলনায় অন্তত আট থেকে দশ ডিগ্রি বেশি। যা শুধু মেরু অঞ্চলেরই নয়, গোটা বিশ্বের উষ্ণতাবৃদ্ধিতে বড়সড় অংশ নিয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রতি ৮০ হাজার বছরে বিশ্ব পরিবেশে এমন বদল আসে। তবে তা স্বাভাবিক, বাইরের কোনও প্রভাব থাকে না। কিন্তু এবার জলবায়ুর যে পরিবর্তন, তা অনেকটাই ‘ম্যান মেড’ বলে দাবি তাঁদের।
ব্রিটিশ পরিবেশবিজ্ঞানীদের একটি দল এই আবহাওয়া বদলের নেপথ্যের কারণ খুঁজে পেতে আগেকার বদলে যাওয়া আবহাওয়ার সঙ্গে আজকের বদলের তুলনা করেছেন। হিসেবনিকেশ, গভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে সাধারণ বদলের সঙ্গে এবার জলবায়ু পরিবর্তনের সংকেতগুলো কিছুটা অন্যরকম, যাতে কার্বন নিঃসরণের (Carbon Emission) মতো মানুষের বহু কার্যকলাপ জড়িত। তারউপর মাস কয়েক আগে রাশিয়ার নরিলস্ক শহরে এক কারখানা থেকে ডিজেল লিক হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল বরফের ভূমিতে। ডিজেলের ক্ষতিকার প্রভাব হিসেবে তুষারজমির উষ্ণতা বেশ খানিকটা বেড়ে গিয়েছে বলে আগেই জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। যার জন্য ওই এলাকায় জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মেরুর তাপপ্রবাহের নেপথ্যে এও এক কারণ এবং অবশ্যই মানুষের তৈরি কারণ।
বলা হচ্ছে, এবছর ইংল্যান্ডের বসন্ত একটু বেশিই রৌদ্রকরোজ্জ্বল ছিল, যা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। একেও আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলাফল বলে চিহ্নিত করছেন বিজ্ঞানীরা। মেরুপ্রদেশের আবহাওয়ার প্রভাব ব্রিটেনের একটা বড় অংশে ভালভাবেই পড়ে। কাজেই, তাঁদের গবেষণায় এই অঞ্চলের তাপমাত্রাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। সবমিলিয়ে, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের নেপথ্যে মানুষের ভূমিকা যে কতখানি, সেটাই স্পষ্ট করে দিল সাম্প্রতিক গবেষণার রিপোর্ট। তাহলে হিমশীতল সাইবেরিয়া – এই চিরাচরিত ধারণা কি এবার হারিয়ে যেতে বসছে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.