ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: চন্দ্রযান ওড়ার পর থেকেই বলা হচ্ছিল চাঁদে নামার প্রক্রিয়ার সবটাই ‘লাইভ’ দেখানো হবে। কিন্তু স্পষ্ট হচ্ছিল না ‘সাংবাদিকটি’ কে? অর্থাৎ কে চন্দ্রযানের অবতরণ ‘লাইভ’ দেখাবে? জানা গিয়েছে, অবতরণের এই ভিডিও দেখাবে বিক্রম।
বিক্রমের পাঠানো ভিডিও প্রথমে আসবে ইসরোর কন্ট্রোল রুমে। কী অবস্থায় সে পৌঁছবে, তা বিচার বিবেচনা করে তবেই হবে বাকি কাজ। চাঁদে যদিও আবহাওয়ার ঝক্কি নেই, তার পরও তার পরিস্থিতি কেমন থাকবে, ঝুঁকি সবটা এড়ানো সম্ভব হল কিনা তা পরীক্ষা করার বড় কাজ রয়েছে। সেই কারণেই সম্প্রচারের দায়িত্ব তার উপর দেওয়া হয়নি। জানানো হয়েছে, তাকে স্রেফ ভিডিও রেকর্ড করে ইসরোকে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া আছে। সেই ভিডিও পরীক্ষা করে সরাসরি সম্প্রচার হবে ইসরোর কন্ট্রোল রুম থেকে। এক অর্থে সেই লাইভ দেখানো হবে বিক্রমের মাধ্যমেই। তবে লাইভ দেখতে সময় লাগবে মিনিট পনেরো-কুড়ি।
কারণ, চন্দ্রযান থেকে পাঠানো ভিডিও বা ছবি পৃথিবীতে আসতে সময় লাগবে ১৫ মিনিট। তা পরীক্ষা করা হবে। তার পর হবে সম্প্রচার। যা করতে সাকুল্যে কুড়ি মিনিট লেগে যাতে পারে। ইসরোর ওয়েবসাইটে তা দেখা যাবে। সেই মাহেন্দ্রক্ষণে হাজির থাকার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। বেশ কয়েকটি স্কুলে ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে তিনি ইসরোর কন্ট্রোল রুমে বসে দেখবেন সেই ভিডিও। দেখা যাবে চাঁদের মাটি, গহ্বর, উপত্যকা, চাঁদের পাহাড়। এমনকী, চাঁদের মাটিতে নামার পথে দেখা মিলতে পারে নীল গ্রহ পৃথিবীরও। ইসরো বলছে, সব ঠিকঠাক থাকলে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে রোমাঞ্চকর এমনকী, রোমহর্ষক হতে চলেছে ৬ সেপ্টেম্বর রাতে চাঁদে নামার এই ‘লাইভ’।
এই লাইভের প্রক্রিয়ার শুরুটা সহজ হবে না। একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে বিক্রমকে। ইসরো জানাচ্ছে, ইতিমধ্যেই চাঁদের চতুর্থ কক্ষপথে ঢুকে পড়েছে চন্দ্রযান। এখনও অরবিটারের সঙ্গেই আছে বিক্রম। আরও একটি পাক খেয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে ২ সেপ্টেম্বর অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হবে বিক্রম। এই পর্বেই প্রথম চন্দ্রযানের পার করা দূরত্ব অতিক্রম করে গিয়েছে চন্দ্রযান ২। সেই ঘটনাও নিঃসন্দেহে বড় ঘটনা। তৃতীয় কক্ষপথ ঢুকে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটেছে সেই ঘটনা। এর পরই একে একে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পালা শুরু হবে।
জানা যাচ্ছে, অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকেই শুরু হবে পরীক্ষার পালা। অরবিটার কিছু ছবি বা ভিডিও তুলে ইসরোকে পাঠাবে। অবতরণের জায়গার ছবি দেখে মাটি ও গহ্বর পরীক্ষার পর ছাড়পত্র দেবে ইসরো।
তার পর শুরু হবে বিক্রমের কাজ। ২ সেপ্টেম্বর অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরদিন, অর্থাৎ ৩ তারিখ বিক্রমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে। তার পর থেকে ডিম্বাকার গতিপথ বদলাতে শুরু করবে বিক্রম। গোলাকার কক্ষপথ পেরিয়ে চলে আসবে চাঁদের মাটির কাছাকাছি। একেবারে নামার মুহূর্তটি সবচেয়ে ভয়ের। আগেই বলা হয়েছে তার জন্য বাড়তি সুরক্ষা নেওয়া হচ্ছে। আরও এক দফা পরীক্ষা হবে পরিস্থিতির। বিক্রমের পায়ের তলায় পাঁচটি ইঞ্জিন রয়েছে।
তার চারপাশের চারটির জ্বালানি বন্ধ করা হবে। তার দু’টি কারণ। এক, গতি নিয়ন্ত্রণ। দুই, চাঁদের মাটির ধুলোর থেকে বিক্রমকে বাঁচানো। জ্বালানির ধাক্কায় ধুলো উড়ে বিক্রমের অবতরণে বাধা দিতে পারে। এই ধুলো পরিষ্কারের কাজটি করবে তার পঞ্চম ইঞ্জিন। যেটি থাকবে একেবারে মাঝখানে। এটি চালিয়ে তার অবতরণস্থলের ধুলো সরিয়ে নেবে বিক্রম। অনেকটা ‘ফুঁ’ দেওয়ার মতো। অত্যন্ত স্পর্শকাতর মুহূর্ত এটি। চরম উৎকণ্ঠার এই প্রক্রিয়ার সবটাই ‘লাইভ’ দেখাবে বিক্রম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.