ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: এতদিনে কথাটা ফাঁস করল ইসরো। জানাল, চাঁদের টানেই পৃথিবীর মাটি থেকে চাঁদে পৌঁছনোর কৌশল করেছে তারা। তার সবচেয়ে বড় কারণ জ্বালানি বাঁচানো এবং অবশ্যই খরচ বাঁচানো।
তবে যে এত টাকা খরচ করে, রকেট ছুঁড়ে চন্দ্রযানকে চাঁদে পাঠানোর চেষ্টা। সবই কি চোখের ভ্রম? তা-ও নয়। তবে এ যেন অনেকটা আপামর দেশবাসীর চন্দ্রাহত হওয়ার কাহিনি। পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছতে চন্দ্রযান ২-এর সময় লাগবে ৪৮ দিন। এখানেই প্রশ্ন উঠেছিল। যে অ্যাপোলো ১১-তে চড়ে প্রথম মানুষ পাঠিয়েছিল নাসা, তারও চাঁদে পৌঁছতে সময় লেগেছিল ৪ দিনের কিছু বেশি সময়।
সেটা ১৯৬৯ সাল। তারও বছর দশ আগে মানবহীন যান পাঠিয়েছিল রাশিয়া। সময় লেগেছিল ৩৪ ঘণ্টা। তবে এত দিন সময় লাগছে কেন চন্দ্রযানের? একটি সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবন সেই তথ্য জানিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এই রকেটের নির্মাণে। একইসঙ্গে তার জ্বালানির উপরও নির্ভর করছে এর যাত্রা। কীভাবে? মহাকাশে যে কোনও দূরপাল্লার যাত্রা নির্ভর করে অফুরন্ত জ্বালানি, তীব্র গতি আর যানের সোজাসুজি চলনের উপর। অ্যাপোলো ১১-র জন্য নাসা ব্যবহার করেছিল স্যাটার্ন ফাইভের মতো শক্তিশালী রকেট। যাকে সুপার-হেভি লঞ্চার বলা হত। ঘণ্টায় যার গতিবেগ ছিল ৩৯ হাজার কিলোমিটার। লিফট অফ ক্ষমতা ছিল ১৪০ টন। কিন্তু মাত্র ৪৩ টন ওজনের একটি যানকে নিয়ে উড়ে যায় অ্যাপোলো ১১। যা শক্তির তুলনায় অনেকটাই কম। যানে ছিল লুনার মডিউল, সার্ভিস মডিউল ও কম্যান্ড মডিউল। পৃথিবী ছেড়ে ওড়ার ৪ দিন ৬ ঘণ্টার মাথায় নীল আর্মস্ট্রংদের নিয়ে প্রথমে পৃথিবীর প্রথম কক্ষপথে পৌঁছয় যানটি। তারপর এক লাফে ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে সরাসরি চাঁদে। এই রকেটের পিছনে নাসার খরচ হয়েছিল ১৮৫ মিলিয়ন ডলার। যে পরিমাণ টাকা ইসরোর হাতে নেই।
এই কারণেই প্রচুর জ্বালানি খরচ করে সরাসরি চাঁদে পৌঁছনোর ক্ষমতা তাদের নেই। যার জেরেই পৃথিবীর চার পাশে বেশ কয়েকটি চক্কর কেটে তবেই চাঁদে পৌঁছনোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেই বা কী লাভ?
এত চক্কর কাটলেও তো খরচ হবেই। শিবন জানাচ্ছেন, তাতে তেমন খরচ হবে না। মাত্র ৪ টন ওজন নিয়ে উড়েছে চন্দ্রযান। যার ইঞ্জিন অ্যাপোলো ১১-এর মতো অত শক্তিশালী নয়। তাই চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ভরসায় মহাশূন্যে পা বাড়িয়েছে চন্দ্রযান। শিবন জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র অন বোর্ড প্রপালশন বা চলার পথে জ্বালানি যতটুকু ব্যবহার হচ্ছে, তার স্রেফ কক্ষপথ পাল্টানোর জন্য। এর বাইরে পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের দিকে ফিরে ডিম্বাকারে পাক খেয়ে চলেছে সে। কক্ষপথ পাল্টানোর সময় কিঞ্চিৎ বাড়িয়ে নিচ্ছে গতি। যত এই কাজ সে করছে, ততই চাঁদ তাকে নিজের কাছে টেনে নিচ্ছে। যাত্রাপথের বাকি অংশে তার গতি বাড়ছে কৌশলে। চাঁদের মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে। এভাবেই খরচ বাঁচিয়ে, জ্বালানি বাঁচিয়ে শেষে তার চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশের পালা। তখন আপনা থেকেই নিজের দিকে তাকে টেনে নেবে চাঁদ। সব মিলিয়ে ২৯ দিন পৃথিবীর চারপাশে থাকবে চন্দ্রযান। ১৪ আগস্ট ভোরে লাফিয়ে চাঁদের কক্ষপথে পা রাখবে যানটি। সেখানে বাকি সময় কাটিয়ে ৭ সেপ্টেম্বর ভোরে নামবে চাঁদের মাটিতে।
এই পর্বে আরও একটি তথ্য জানিয়েছে ইসরো। প্রথমে ঠিক ছিল চন্দ্রযানে থাকা অরবিটারের আয়ু হবে ১ বছর। কিন্তু এভাবে জ্বালানি বাঁচানো গেলে সেই আয়ু বেড়ে দ্বিগুণ হবে জানিয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। যা চাঁদের গবেষণায় আরও সাফল্য এনে দিতে পারে ভারতকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.