গৌতম ব্রহ্ম: প্রচলিত ওষুধ এই ক্যানসারে কোনও কাজে আসে না। ফুসফুসে এই রোগ ছোবল মারলে মৃত্যু নিশ্চিত। এক বছরও সময় পায় না রোগী। সেই ভয়ংকর ‘স্মল সেল লাং ক্যানসার’ নিরাময়ে আশার আলো দেখাচ্ছেন এক বঙ্গতনয়া ড. ত্রিপর্ণা সেন। নিউ ইয়র্কের ‘মেমোরিয়াল স্লোয়ান কেটারিং ক্যানসার সেন্টার’-এর এই অধ্যাপক-গবেষকই এখন দুরারোগ্য ‘স্মল সেল লাং ক্যানসার’ নিরাময়ে আশার আলো দেখাচ্ছেন। গবেষণা করছেন, ক্যানসার প্রতিরোধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়া প্রোটিন নিয়ে। কর্কট-যুদ্ধে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হয়ে ওঠা সেই গবেষণাই এবার মান্যতা পেল।
মানবশরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অংশগ্রহণকারী কোষে রয়েছে এমএইচসি১। যা নিউক্লিয়েটেড কোষ-দেওয়ালের উপরে খাঁড়ার মতো থাকে। এরা শরীরের দারোয়ান। বাইরের কোনও জীবাণু শরীরে ঢুকলে এরাই দেহের ‘ইমিউন সিস্টেম’কে তা চিনিয়ে দেয়। ‘স্মল সেল লাং ক্যানসার’ হলে শরীরে এমএইচসি১-এর ঘাটতি হয়। ত্রিপর্ণা তাঁর গবেষণায় এমন কিছু ওষুধ ব্যবহার করেছেন যা এমএইচসি১-এর উৎপাদন বাড়িয়ে দেবে। মেরে ফেলবে ক্যানসার কোষ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিওলজি নিয়ে স্নাতক, পরে জেনেটিক্স নিয়ে স্নাতকোত্তর করেন ত্রিপর্ণা। ২০১১-তে পিএইচডি করেন চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটে। দু’ বছর পর পোস্ট ডক্টরেট করতে মার্কিন মুলুকে পাড়ি।
পাঁচ বছর ধরে ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করছেন ত্রিপর্ণা। এখনও পর্যন্ত পাঁচটি ফেলোশিপ পেয়েছেন। সম্মান পেয়েছেন একাধিক। ‘ডিএনএ ড্যামেজ রেসপন্স প্রোটিন’ নিয়েও তাঁর কাজ সমাদৃত হয়েছে বিজ্ঞানীমহলে। ত্রিপর্ণা জানালেন, ‘অনেক সময় মিউটেশনের কারণে কোনও কোষের জিন সিকোয়েন্সে বদল হয়। এই মিউটেনশনগুলিই ক্যানসার সেলকে অমরত্ব দান করে। ত্রিপর্ণা জানিয়েছেন, ‘স্মল সেল লাং ক্যানসার’ আক্রান্ত রোগীদের ‘ডিএনএ ড্যামেজ রেসপন্স’-এর ‘সিগন্যালিং পাথওয়ে’ খুবই সক্রিয়।
নিউ ইয়র্কে গবেষণারত ত্রিপর্ণা এমন কিছু ওষুধ প্রয়োগ করেছেন যা এই ‘রেসপন্স পাথওয়ে’কে কমিয়ে দেয়। তাঁর দাবি, ওষুধগুলি ক্যানসার কোষকে শুধু মারবেই না, ক্যানসারে ব্যবহৃত হওয়া ইমিউনোথেরাপি ওষুধের কার্যকারিতাও বাড়িয়ে দেবে। ইঁদুরের শরীরে ইতিমধ্যেই এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে, মাত্র চোদ্দো দিনেই ধ্বংস হচ্ছে ক্যানসার সেল। সম্প্রতি ত্রিপর্ণার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে একাধিক জার্নালে। এর মধ্যে অন্যতম ‘ক্যানসার ডিসকভারি’, ‘ক্লিনিক্যাল ক্যানসার রিসার্চ’ ও ক্যানসার রিসার্চ। এর আগে টেক্সাসের ‘এমডি অ্যান্ডারসন ক্যানসার সেন্টার’-এ যুক্ত ছিলেন কারমেল কেনভেন্টের এই প্রাক্তনী। এখানে গবেষণা করেই মেডিসিনে নোবেলজয় করেছেন জেমস পি অ্যালিসন। ত্রিপর্ণা জানালেন, “ওঁর আবিষ্কার করা ইমিউনোথেরাপি ড্রাগগুলির কার্যকারিতা বাড়ানোরই চেষ্টা করছি।” সম্প্রতি এই কর্কট গবেষণার জন্য ত্রিপর্ণাকে দু’ লক্ষ মার্কিন ডলার দিয়েছে ‘লাং ক্যানসার ফাউন্ডেশন অফ আমেরিকা’।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.