সুবীর দাস, কল্যাণী: চাঁদের পর সূর্যে যান পাঠিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসের নয়া মাইলফলক স্থাপন করেছে ভারত। গত সপ্তাহে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ইসরোর সৌরযান ‘আদিত্য এল১’কে (Aditya L1) সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে শ্রীহরিকোটা থেকে। আর মঙ্গলবার কক্ষপথ দ্বিতীয়বার বদল করল সৌরযানটি। আর এই ‘আদিত্য’ তৈরির নেপথ্যে রয়েছেন এক বঙ্গ বিজ্ঞানী। প্রাথমিক পরিকল্পনা থেকে মডেল তৈরি এবং তারপর প্রযুক্তি-ঠাসা সৌরযানটিকে লক্ষ্যের পথে এগিয়ে দেওয়ার অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন দিব্যেন্দু নন্দী। IISER, কলকাতার পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক তিনি। হরিণঘাটা ক্যাম্পাসে নিজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়েও এত বড়া কাজ করে ফেলেছেন তিনি।
চন্দ্রযানের (Chandrayaan 3) পর সৌরযান ‘আদিত্য এল১’-এর সফল উৎক্ষেপণ ভারতকে বিশ্ব দরবারে বিশেষ স্থান করে দিয়েছে নিঃসন্দেহে। তবে এই সাফল্যের পিছনে যে অপরিসীম পরিশ্রম আর নিষ্ঠা রয়েছে, তা অতুলনীয়। বিশেষত এমন এক মিশনে সকলকে শামিল করে একেকটা ধাপ এগিয়ে যাওয়া, তা বিজ্ঞানী দিব্যেন্দু নন্দীকে না দেখলে হয়ত বোঝাই যাবে না। তিনি নিজে গবেষক-অধ্যাপক। গবেষণায় আগ্রহী বহু ছাত্রছাত্রীর ‘গাইড’। কিন্তু তার বাইরে দিব্যেন্দুবাবু একক কৃতিত্বে অবদান রেখেছেন দেশের মহাকাশ বিজ্ঞানে এই অগ্রগতির ক্ষেত্রে।
‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় দিব্যেন্দুবাবু জানালেন নিজের কেরিয়ারের কথা। জামশেদপুরে তাঁর জন্ম। শৈশব থেকে বেড়ে ওঠা বারাসত ও কলকাতায়। বিদেশেও কাটিয়েছেন বছর সাতেক। বর্তমানে IISER, কলকাতার ফিজিক্সের (Physics) বিভাগীয় প্রধান। ২০০৮ সালে যোগ দেন ইসরোর বিজ্ঞানীদের দলে। হাতেকলমে ‘আদিত্য এল১’-এর গড়ে ওঠা থেকে উৎক্ষেপণ – পুরো মিশনের সঙ্গেই ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত দিব্যেন্দু নন্দী। জানালেন, ২০১৩ সালে ইসরোর তরফে প্রথম সৌরযান তৈরির নির্দেশ আসে। প্রথমে ছোট একটি মডেল তৈরি করে তারপর তাকে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিতে ক্রমশ আরও উন্নত করে তোলা হয়েছে। সব দিক পরীক্ষা করে ভালভাবে খতিয়ে দেখে তবেই সূর্যের দিকে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক ধাপ তো সফল। পরবর্তী কাজও ‘আদিত্য’ ঠিকমতো করতে পারলে সৌরমণ্ডলের আবহাওয়া ও তার সঙ্গে যুক্ত স্যাটেলাইট সিস্টেম নিয়ে প্রচুর তথ্য পাওয়া যাবে, যা ভবিষ্যতের বিজ্ঞান গবেষণাকে পথ দেখাবে। এমনই বলছেন দিব্যেন্দুবাবু।
এদিকে, সূর্যযান ‘আদিত্য এল১’-এর সফল উৎক্ষেপণ নিয়ে কাজ করা ‘স্যর’কে দেখে অনুপ্রাণিত ছাত্রছাত্রীরাও। দিব্যেন্দু নন্দীর গাইডেন্সে যাঁরা গবেষণা করছেন, সেই সাক্ষী গুপ্তা, চিত্রদীপ সাহারাও ‘আদিত্য’র উৎক্ষেপণ সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন। এই বয়সে এমন অভিজ্ঞতার সাক্ষী থেকে আপ্লুত তাঁরা। বিশেষত স্যরকে নিয়ে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। স্যর যেন এভাবে সদাসর্বদা থাকেন তাঁদের সঙ্গে, এটাই চান জুনিয়র গবেষকরা।
ভিডিও দেখুন:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.