কৃষ্ণকুমার দাস: পাখির বাসা – রডন স্কোয়্যার। কলকাতার বুকে নবরূপে সজ্জিত জল ও সবুজ বৃক্ষরাজিতে ভরা পরিবেশবান্ধব রডন স্কোয়্যারই হতে চলেছে দেশ-বিদেশের পাখিদের (Birds) নতুন ঠিকানা। নিউটাউনের ইকো পার্ককে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এই উদ্যোগ কলকাতা পুরসভার (KMC)। অভিজাত আবাসনের ফাঁকে তৈরি হয়েছে একটুকরো সবুজ অরণ্য। আমজনতার জন্য শনিবার দুপুরে নয়া উদ্যানটি খুলে দেবে কলকাতা পুরসভা। ফের পাখিদের কলতানে মুখর হয়ে উঠবে তিলোত্তমার পরিবেশ।
আসলে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ৪৩ বছর আগের এক ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতে কলকাতা পুরসভার এই উদ্যোগ। করোনা কালে (Coronavirus) লকডাউনের মধ্যেই এই কাজে কোমর বেঁধে নেমেছিলেন পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। গত ১২ সেপ্টেম্বর নিজে দাঁড়িয়ে থেকে জঞ্জাল সাফাই করে জলাভূমি সংরক্ষণের কাজ শুরু করান তিনি। এরপরই শুরু হয় নব আঙ্গিকে ‘কংক্রিটহীন’ ও পরিবেশবান্ধব সামগ্রী দিয়ে পার্ক নির্মাণ। নতুন বছরের শুরুতে সেই কাজ শেষ হয়েছে। এবার দ্বার খুলে দেওয়ার পালা।
১৯৮৭ সালে দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত জনপদের মাঝে রডন স্কোয়্যারে (Rawdon Square)বেসরকারি বহুতল আবাসন তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন বাম সরকার। সেখানকার সবুজে ঘেরা উদ্যান যাতে নষ্ট না হয়, সেই দাবিতে তুমুল আন্দোলন করেছিল প্রদেশ কংগ্রেস। সেসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিক্ষোভ দেখিয়ে দাবি করেছিলেন,“সবুজ ধ্বংস করে কিছুতেই বহুতল হতে দেওয়া যাবে না। পরিবেশবান্ধব পার্ক গড়তে হবে।” গণ-আন্দোলন এতই চরম আকার নেয় যে কার্যত পিছু হঠতে হয় তৎকালীন সরকারকে। সেসময় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু। তাঁর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার প্রোমোটরদের মাধ্যমে বহুতল আবাসন ও কমিউনিটি হল তৈরির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। তারপর থেকেই রডন স্কোয়্যারের জলাশয় আগাছায় ভরে ছিল।
তিন বছর আগে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কলকাতার বুকে জলাভূমি সংরক্ষণ করে সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু হয়। কিন্তু গ্রিন ট্রাইব্যুনালে এই সংক্রান্ত মামলা শুরু হতেই তা থমকে যায়। তবে মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার পরই ফের কাজে উদ্যোগী হয় পুরসভা। করোনা কালে মাত্র চারমাসে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সবুজ-সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু করান পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। পরিবেশ সংরক্ষণ সাফল্যের মুকুটে এই রডন স্কোয়্যার শহরের আরও একটি পালক হয়ে উঠল।
পুরসভার অন্যতম প্রশাসক দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, “পার্কে কোথাও কংক্রিট রাখা হয়নি। শহরের অন্য উদ্যানের মত পেভার-ব্লক বসেনি, সুড়কি-পাথর-নুড়ি দিয়ে রাস্তা তৈরি হয়েছে। বসানো হয়েছে অজস্র গাছের নতুন চারা। বড় গাছগুলিতে যাতে প্রচুর পরিমাণে পাখি এসে বসতে পারে, তার জন্য পক্ষীবিদ ও উদ্ভিদবিদদের কাজে লাগানো হয়েছে।” সবমিলিয়ে, নতুন রূপে সজ্জিত রডন স্কোয়্যার এখন ভ্রমণপ্রেমীদের অপেক্ষায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.