চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: কীভাবে সংক্রমিত হচ্ছে করোনা? কারণ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত গবেষকরা। গবেষকদের একাংশের ধারণা, বাদুড় থেকে ছড়াচ্ছে করোনা। কেউ বা বলছেন প্যাঙ্গোলিনের নাম। এবার ভারতীয় গবেষকরা দাবি তুললেন বাদুর থেকেই SARS-CoV-2 এর উৎপত্তি। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডঃ সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায় ও তাঁর ছাত্র অভিজ্ঞান চৌধুরির একটি নতুন গবেষণার সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকান মেডিক্যাল জার্নালে। ‘জার্নাল অফ মেডিক্যাল ভাইরোলজি’তে প্রকাশিত রিপোর্টে নানা যুক্তি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, হর্ষসুশ ব্যাট অর্থাৎ বাদুর থেকেই নোভেল করোনার উৎপত্তি। পাশাপাশি এই ভাইরাসের চরিত্র চিহ্নিত করে প্রতিহত করার একটি উপায়ের সন্ধান দেওয়া হয়েছে ওই গবেষণায়।
গবেষণার রিপোর্টে রয়েছে, করোনা ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে স্পাইক প্রোটিন। স্পাইক নামক প্রোটিনের জন্যই করোনা ভাইরাস মুকুটের মতো দেখতে হয়। এই স্পাইক প্রোটিনই মানুষের এসিই -২ (এনজিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম -২) রিসেপ্টারের সঙ্গে যুক্ত। এই স্পাইক প্রোটিনের মাধ্যমেই ভাইরাস ফুসফুসের কোষগুলোর পর্দায় অবস্থিত রিসেপ্টরে আটকায় এবং পরে কোষের পর্দা ভেদ করে কোষের ভিতরে ঢুকে পড়ে। ফুসফুসের বা কোষের ভিতরে ঢুকে ভাইরাসটির আরএনএ তন্তুটি কোষের নিজস্ব প্রোটিন তৈরির মেশিনারি ব্যবহার করে। এবং ভাইরাল প্রোটিন তৈরির মাধ্যমে ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে এই ভাইরাস ফুসফুস ও গলার কোষকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করে। রোগীর নিউমোনিয়া হয়। চরম ইনফেকশনে রোগীর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
গবেষণার মুখ্যবিজ্ঞানী ডক্টর সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায় বলেন, “গবেষণায় দু’টি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এক, নোভেল করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি এবং দুই সংক্রমণ প্রতিহিত করার উপায়। বায়োফরমেটিক্স প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি বাদুর থেকেই এর উৎপত্তি। মানব শরীরের এসিই-২ কে যে পদ্ধতিতে করোনার স্পাইক প্রোটিন অ্যাটাচ করছে তা শুধুমাত্র বাদুরের মধ্যেই লক্ষ্য করা গিয়েছে। মানব দেহের কোষে, বিশেষত ফুসফুসের কোষে এই স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে ফাংশনাল অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারলেই প্রতিষেধক তৈরি সম্ভব।” আরেক বিজ্ঞানী কেএনইউয়ের ছাত্র অভিজ্ঞান চৌধুরি বলেন, “করোনা ভাইরাসজনিত কোষের ইনফেকশনকে প্রতিহত করতে হলে যা প্রয়োজন তা হল কোনভাবেই ওই ভাইরাসকে ফুসফুসের কোষের রিসেপ্টরে সংযুক্ত হতে না দেওয়া। যাতে কোষের পর্দা ভেদ করে সে ভেতরে ঢুকতে না পারে এবং বংশবৃদ্ধি করতে না পারে। গবেষণার এই রিপোর্টটি প্রতিষেধক তৈরি করতে সাহায্য করবে।”
উল্লেখ্য কোভিড-১৯ এর সংক্রমণকারি ভাইরাসটি এবং নিকট অতীতের দুটো মহামারি সার্স ও মার্সের সংক্রমণকারী ভাইরাসগুলো একই করোনা ভাইরাস পরিবারের সদস্য, যদিও সামান্য জিনগত ভিন্নতা আছে তাদের। কোভিড-১৯ সংক্রমণকারী ভাইরাস এর সঙ্গে সার্স করোনা ভাইরাসের জিনগত মিল ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বলে একে SARS-CoV-2 নামে অবহিত করা হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.