চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: ঘুম ভাঙছে পাখির কলতানে। দিনভর কিচিরমিচির। আকাশভরা তারা। রাতের গাঢ় অন্ধকারেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে খোলামুখ খনির ওভারবার্ডেনেকর সারি।দিনের আলোয় স্পষ্ট দূরের পঞ্চকোট, বিহারীনাথ পাহাড়। স্পঞ্জ আয়রণের দূষণ নেই। ধূলো উড়িয়ে পে-লোডারের বিকট আওয়াজ নেই। ডাম্পারের ধোঁয়া নেই। সন্ধে নামলেই শিল্পাঞ্চলবাসী শুনতে পাচ্ছেন শেয়ালের ডাক। ব্যাঙের ডাক, ঝিঁঝি পোকার একটানা শব্দ। এ যেন অপার্থিব কোনেও দৃশ্য, যা ইদানিং খুব অচেনা।
তাবড় বিজ্ঞানীরা যা করতে পারলেন না, তা করে দেখাল মারণ ভাইরাস করোনা। ভাইরাস সংক্রমণের ভয় মানুষকে গৃহবন্দি করেছে। লকডাউন জারি হয়েছে দেশজুড়ে। বন্ধ হয়েছে রাস্তায় গাড়ির ঢল। স্তব্ধ হয়েছে কারখানার সাইরেন। আগামীর অর্থব্যবস্থা কোথায় ঠেকবে কেউ জানেন না। তবে লকডাউনের আবহে দূষিত আসানসোলের মানুষ যেন অক্সিজেন ফিরে পেয়েছেন।
কয়েকমাস আগে পরিবেশ, বন ও আবহাওয়া পরিবর্তন মন্ত্রকের অধীন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মাপকাঠিতে আসানসোল দুর্গাপুর নিয়ে উদ্বেগ জনক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। দিল্লির দূষণকে নিঃশব্দেই ছাপিয়ে গিয়েছিল আসানসোল। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ১ লা মার্চ বায়ু দূষণের বিভিন্ন উপাদান ভিত্তিক (প্রমিনেন্ট পলিউট্যান্ট বা) পিএম ২.৫ সর্বোচ্চ ছিল ৩৫২। পিএম১০ আসানসোলে সর্বোচ্চ ছিল ২৮৯। কিন্তু লকডাউনের পর থেকেই দূষণ মাত্রা কমতে শুরু হয়েছে। সোমবার পিএম২.৫ সর্বোচ্চ হয়েছে ৫২ সর্বনিম্ন ২১। বাতাসে ধূলিকনার গড়ের পরিমাণ এখন ৩৮। পিএম১০ আসানসোলে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন এখন ৯৪ ও ৪৭। এয়ার ইনডেক্স গড় ৬৫।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য কাউন্সিলের সদস্য কিংশুক মুখোপাধ্যায় বলেন, “যান চলাচল ও কারখানা বন্ধে হয়ত দেশের অর্থব্যবস্থায় বড় ধাক্কা খাবে, কিন্তু একজন বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসাবে শহরে বসে প্রকৃতির অপার্থিব রূপ উপভোগ করছি। রাতের আকাশে স্বচ্ছ কালপুরুষ দেখতে পাচ্ছি।” ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার সপ্তর্ষি মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “শহরের মধ্যে থেকে শিয়ালের ডাক শুনতে পাচ্ছি। বাড়ির বাগানে মেটে তিতির, দুর্গা টুনটুনি, সিপাহী বুলবুল, কাপাসী, বাজদের দেখতে পাচ্ছি। যা সচরাচর দেখা যায় না।” করোনার জেরে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ কমায় বাড়িতে বসে পরিশুদ্ধ শ্বাস নিতে পারছেন বলেই জানান শিল্পাঞ্চলবাসী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.