সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: লকডাউনে দেড় মাস ধরে বন্ধ সমস্ত কলকারখানা। ফলে অনেকটাই দূষণমুক্ত নদীগুলি। ব্যতিক্রম নয় শিলিগুড়ি লাগোয়া ফুলবাড়ি এলাকার মহানন্দা নদীও। এখানেও কমেছে জলদূষণ। এর ফলে ফুলবাড়ি ব্যারেজে মহানন্দা নদীতে প্রায় কুড়ি থেকে পঁচিশ বছর পর ফিরেছে নদিয়ালি মাছ। সেই সঙ্গে দেদার উঠছে অন্যান্য মাছও। ফলে চওড়া হাসি পরিবেশপ্রেমীদের মুখে। স্থানীয় মৎস্যপ্রেমীদের মধ্যেও খুশির হাওয়া। দূষণমুক্ত হওয়াতেই নদীর স্বচ্ছ জলে প্রায় হারিয়ে যাওয়া নদিয়ালি মাছ ফিরেছে বলে দৃঢ় বিশ্বাস অনেকেরই। এই তালিকায় রয়েছেন পুলিশ, আইনজীবী থেকে শুরু করে সব ধরনের মানুষই।
মহানন্দা নদীতে ফুলবাড়ি ব্যারেজে সারা বছরই মাছ ধরেন স্থানীয়রা। তা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রিও হয় স্থানীয় শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি-সহ আশপাশের বিভিন্ন বাজারে। তবে একসময় মুড়ি-মুড়কির মতো মহানন্দায় বিচরণ করা নদিয়ালি মাছ গত কুড়ি বছরে প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। কালেভদ্রে একটা দুটো মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়লে তা ছিল বিশেষ দ্রষ্টব্যের বিষয়। লকডাউনের ফলে দূষণ কমে যাওয়ায় নদিয়ালির পাশাপাশি ট্যাংরা, বরোলি-সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা বেশি মিলছে। মিলন ধারা নামে এক মৎস্যজীবী জানান, ‘আগের তুলনায় এখন বেশি পরিমাণে মাছ পাওয়া যাচ্ছে। বাবা কাকাদের মুখে শুনেছি আগে বরোলি, নদিয়ালি মাছ প্রচুর পাওয়া যেত। যা ইদানিং পাওয়া যাচ্ছিল না বললেই চলে। তবে মাছ পেলেও লকডাউনের জন্য খদ্দের মিলছে না।’ ফলে নিজেরা খেয়েই পেট ভরাতে হচ্ছে বলে আক্ষেপ তাঁর।
শিলিগুড়ির পরিবেশপ্রেমী সংস্থা অপ্টোপিকের সম্পাদক দীপজ্যোতি চক্রবর্তী জানান, দূষণ কমার কারণে নদীগুলি শ্বাস নিতে পারছে। এক সময় মহানন্দার জল থেকে হারিয়ে যাচ্ছিল শ্যাওলা পর্যন্ত। সে কারণে মাছেরা খাদ্য না পেয়ে এই এলাকায় ভিড়ত না। দেড় মাসের লকডাউনে নদীতে ফিরেছে শ্যাওলা। তাই এই এই মাছগুলি আবার ভিড় করছে নদীতে। তাঁর দাবি, সপ্তাহে অন্তত একদিন যদি লকডাউন করে চলা যায় তাহলে গোটা দেশকে অনেকটাই দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব। উত্তরবঙ্গের আরও একটি পরিবেশপ্রেমী সংস্থা হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের সহ-সম্পাদক প্রদীপ নাগ মনে করেন, মূলত নদীতে কলকারখানার বর্জ্য থেকে শুরু করে গাড়ি ধোয়া কিংবা শৌচকর্ম বন্ধ হওয়াতে দূষণ অনেকটাই কমেছে। লকডাউনে মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না। ফলে দূষণ ঘটানোর সুযোগ মিলছে না। সেই সুযোগে নদীতে ফিরেছে হারিয়ে যাওয়া নদী বরোলি মাছ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.