Advertisement
Advertisement
Asteroid

২০৩৮ সালে গুঁড়িয়ে যাবে পৃথিবী! ‘মহাকাশের দানব’ রুখতে আমরা প্রস্তুত?

ডাইনোসরদের অবলুপ্তির পিছনেও কিন্তু গ্রহাণুর 'অনুপ্রবেশ'ই।

Are we prepared for an asteroid hit
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:December 28, 2024 7:02 pm
  • Updated:December 28, 2024 7:06 pm  

বিশ্বদীপ দে: অন্ধকার আকাশ। আর সেই আকাশের বুকে ছুটে আসছে এক আলোর বল। ক্রমে তা বড় হয়ে উঠতেই যেন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে চারপাশ। আর তারপরই সশব্দে তা আছড়ে পড়ল নীল রঙের এই গ্রহের বুকে। যেন মাটি আর আকাশ, সবই কেঁপে উঠল। শক ওয়েভ গ্রাস করল চারপাশ! এমন এক দৃশ্যের কথা বললেই মনে হয় কোনও সাইফাই ছবির দৃশ্য। কিন্তু ২০১৩ সালে রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্ক শহরে আছড়ে পড়েছিল এমনই গ্রহাণু। হাজার দেড়েক মানুষ আহত হলেও শেষপর্যন্ত বড় কিছু ক্ষতি তাতে হয়নি। হ্যাঁ, কিছু বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছিল। ওই পর্যন্তই। কিন্তু ২০৩৮ সালে যদি আছড়ে পড়ে অতিকায় গ্রহাণু? কী হবে? নাসার ঘোষণা শুনে ছড়িয়ে পড়েছিল এই প্রশ্ন, আমরা প্রস্তুত তো? অথচ সংঘর্ষের সম্ভাবনা ৭২ শতাংশ।

শুরুতেই একটা অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স। এমন কোনও গ্রহাণু আসলে ২০৩৮ সালে ছুটে আসছে না। মনে হতেই পারে, ব্যাপারটা তাহলে ঠিক কী? আসলে এটা একটা ‘কাল্পনিক অনুশীলন’। নাসা দেখতে চাইছে আমরা আদৌ প্রস্তুত কিনা এমন এক ‘মহাজাগতিক দানব’কে রুখতে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আরও এক তারিখের কথা। ১৩ এপ্রিল, ২০২৯। ২০০৪ সালে প্রথমবার তার দেখা মিলেছিল। সেই সময় বলা হয়েছিল, পৃথিবীর সঙ্গে ওই গ্রহাণুর সংঘর্ষের সম্ভাবনা ২.৭ শতাংশ। গ্রিক পুরাণে বর্ণিত এক অতিকায় সাপ অ্যাপফিসের নামে তার নামও রাখা হয়েছিল। পরে এখন নাসা জানিয়ে দেয়, সংঘর্ষের সম্ভাবনা শূন্য শতাংশ। কিন্তু ওই গ্রহাণু আবার ফিরে আসতে পারে ২০৩৬ কিংবা ২০৬৮ সালে! পরে দেখা যায়, সব ভোঁ ভাঁ। অর্থাৎ কোনও ধাক্কা-টাক্কার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু যদি ধাক্কা লাগত? বলা হচ্ছে, তাহলে হিরোসিমায় আছড়ে পড়া পরমাণু বোমার থেকে ১০ লক্ষ গুণ এনার্জি বেশি রিলিজ হত! বোঝাই যাচ্ছে, কী ভয়াল ভয়ংকর বিপর্যয় নেমে আসত!

Advertisement

NASA Warns Of A Massive 500-ft Asteroid Racing Towards Earth Today

আর সেই কারণে নাসা এমন সম্ভাবনাগুলির কথা মাথায় রেখেই এগোতে চাইছে। কেননা মহাকাশে নিয়মিত চক্কর কাটছে কোটি কোটি গ্রহাণু। সাইজে কেউ চুনোপুঁটি। কেউ প্রকাণ্ড। এপ্রসঙ্গে বলা যেতে পারে অ্যাস্টরয়েড বেল্টের কথা। মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝের ওই স্থানে যেন থিকথিক করছে গ্রহাণু। যদিও ছবিতে তেমন মনে হলেও, আদতে তাদের মধ্যে ফারাক লক্ষ লক্ষ কিলোমিটার। কেবল গ্রহাণুই নয়, মহাকাশের অন্যত্র রয়েছে ধুমকেতু বা উল্কাও। আর এদের মধ্যে অনেক মহাজাগতিক বস্তুই চলে আসে পৃথিবীর নাগালের মধ্যে।

প্রসঙ্গত, এই ধরনের ‘আগন্তুক’ অতীতে বহুবার পৃথিবীতে আছড়‌ে পড়েছে এবং পৃথিবীর বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রাগৈতিহাসিক কালে পৃথিবীর বুকে রাজত্ব করা ডাইনোসরদের অবলুপ্তির পিছনেও এই ধরনের মহাজাগতিক বস্তুর আছড়ে পড়াকে অন্যতম কারণ হিসেবে দাবি করেন বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক অতীতে বহুবারই গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষে মানব সভ্যতা ধ্বংস হওয়ার নানা জল্পনা ও গুজব শোনা গিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, এই ধরনের গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষের সম্ভাবনা কমই থাকে। যদিও কখনও কখনও অন্য গ্রহের সঙ্গে মহাকর্ষীয় টানের কারণে তারা আচমকাই অনেকটা কাছে চলে আসে। তাই নিয়মিতই এই ধরনের গ্রহাণুর গতিবিধির নিরীক্ষণ করে নাসা। এর মধ্যে নির্দিষ্ট একটি দূরত্বের মধ্যে যারা তাকে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষের একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। এদের বলে নিয়ার-আর্থ অবজেক্ট তথা এনইও। নাসা লক্ষ রাখে এদের দিকে। প্রায় নিয়মিতই শোনা যায়, কোনও না কোনও গ্রহাণু এসে পড়তে পারে পৃথিবীর বুকে। তবে সম্ভাবনা নিতান্তই কম।
কিন্তু এই ধরনের গ্রহাণুদের সবাই যে ‘নিরীহ’ তা নয়। বিজ্ঞানীরা যত গ্রহাণুকে দেখেছেন তাদের একটা তালিকাও তৈরি করেছেন। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ওয়েবসাইটে গিয়ে একবার দেখতেই পারেন।

Asteroid DW chances of impacting the Earth in 2046

এই তালিকার সবচেয়ে ‘বিপজ্জনক’ ২০২৩ভিডি৩। এই গ্রহাণুটি ২০৩৪ সালের নভেম্বরে আছড়ে পড়তে পারে পৃথিবীর বুকে। সম্ভাবনা? ০.২৫ শতাংশ। আপাত ভাবে কম মনে হলেও নেহাত কম কি? তবে এক্ষেত্রে সান্ত্বনার বিষয় হল, গ্রহাণুটি সাইজে বেশ ছোট। ব্যাস ১১ থেকে ২৪ মিটারের মধ্যেই। বরং সেই তুলনায় ১৯৭৯এক্সবি নামের এক গ্রহাণুর কথা বলা যায়। ২০৫৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সেটির পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা। এই গ্রহাণুটি কিন্তু মোটেই ছোট নয়। ৪০০-৯০০ মিটার ব্যাস। অর্থাৎ রীতিমতো বড়সড় সাইজ। কিন্তু এক্ষেত্রে স্বস্তি দিচ্ছে তার আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা। সেটা খুবই কম। ০.০০০০২ শতাংশ। তালিকার তৃতীয় নাম ২০০৮জেএল৩। ব্যাস ২৩-৫০ মিটার। ১ মে ২০২৭, সেটির পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা ০.০১ শতাংশ। এরকম নাম আরও আছে। পাশাপাশি রয়েছে অজানা আরও সব মহাজাগতিক ‘দানব’। কখন কে হাজির হবে বলা দুষ্কর। লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও অভিনীত ‘ডোন্ট লুক আপ’ মনে পড়ে? অ্যাডাম ম্যাকে পরিচালিত ২০২১ সালের এই অসামান্য এই ছবির বিষয়ই হল আচমকা এক গ্রহাণুর আছড়ে পড়া। মিচিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রী আচমকাই আবিষ্কার করে ফেলে এক অজানা ধুমকেতু। তার অধ্যাপক প্রফেসর মাইন্ডি গণনা করে দেখেন আর ছয়মাসের মধ্যে সেটি পৃথিবীর বুকে এসে পড়তে চলেছে! শেষপর্যন্ত সেটাই হয়। ধ্বংস হয়ে যায় আমাদের নীল গ্রহ।

অনেকেই বলবেন, সিনেমায় ওসব অনেক দেখানো হয়। ‘আর্মাগর্ডন’ ধাঁচের ছবি তো সেই কবে থেকে হয়ে আসছে। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেই ‘কল্পনালতা’র ছড়িয়ে পড়ার মতো বিষয় নয়। নাসা সত্যি সত্যি প্রস্তুত হচ্ছে এই ধরনের বিপর্যয়ের মোকাবিলায়। সবচেয়ে বাস্তবানুগ যে প্রক্রিয়া তা হল কাইনেটিক মেথড। অর্থাৎ কোনও গ্রহাণু ধেয়ে এলে অন্য একটি স্পেস শিপ মহাকাশে পাঠিয়ে সেটির গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়া।

Are we prepared for an asteroid hit

কেবল ‘থিয়োরি’ই নয়, ২০২২ সালে হাতেকলমে পরীক্ষা করেও দেখেছে নাসা। ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডাইরেকশন টেস্ট তথা ডার্টের কথা অনেকেরই মনে আছে। আর সেই পরীক্ষার সাফল্য প্রমাণ করে দিয়েছে বিজ্ঞানীরা ঠিক পথেই হাঁটছেন। তবু বাকি সব পথেই পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে চায় নাসা। যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের কোনও বিপদ এলেই তাকে স্রেফ শূন্যেই এক টোকায় উড়িয়ে দেওয়া যায়। পৃথিবী নামের ‘বাড়ি’তে কোনও ‘হামলাবাজে’র দৌরাত্ম্য যে চলতে দেওয়া যাবেই না!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement