সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রাসাদোপম, আকাশছোঁয়া পুরনো ইমারত সশব্দে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ছে। না, কোনও দুর্ঘটনা নয়, পুরনো লজঝড়ে বিল্ডিং ভেঙে গুঁড়িয়ে নতুন নির্মাণের তোড়জোড়। সেটাই তো স্বাভাবিক। এভাবেই কত পুরনো বাড়ি ভেঙে শূন্য থেকে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে নতুন বহুতল। কিন্তু এভাবে পুরনো বিল্ডিং ভেঙে ফেলা পরিবেশের পক্ষে মোটেই ভাল নয়। সম্প্রতি এই সতর্কবার্তা দিয়ে আর্কিটেক্টদের (Architects) একাংশ জানাচ্ছে, পুরনো বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা বন্ধ করতে হবে। বরং তার রক্ষণাবেক্ষণে নজর দিন।
পুরনো বাড়ি নিয়ে কেন হঠাৎ এমন নয়া সাবধানবাণী স্থাপত্যবিদদের? আসলে এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা চলছিল। প্রাচীন বাড়িগুলো ভেঙে নতুন প্রযুক্তিতে ইমারত তৈরি করলে তা বেশি পরিবেশ বান্ধব হয় কি না, এ নিয়ে তর্কবিতর্ক ছিল। প্রথমে মনে করা হচ্ছিল, প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন বাড়ি থেকে ছড়ানো দূষণ অনেকাংশে রোধ করা যেতে পারে। তবে পরে তা ভুল প্রমাণিত হয়। বরং উলটোটাই সেক্ষেত্রে সত্যি। অর্থাৎ নতুন বাড়ি বানাতে অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ (Carbon Emission) হয়, যা পরিবেশকে অনেকটা দূষিত করে। এই নতুন গবেষণার উপর ভিত্তি করে তাই স্থপতিদের পরামর্শ, পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরি যতটা কম করা যায়, তত পরিবেশের পক্ষে ভাল।
রয়্যাল ইনস্টিটিউট অফ চাটার্ড সার্ভেয়ার (RICS)এর গবেষণা বলছে, নতুন বহুতল তৈরির সময়ে স্টিল-সহ একাধিক সামগ্রী ব্যবহারের সময়েই অন্তত ৩৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ হয়ে তা বাতাসে মেশে। আর সাধারণ বাড়ির ক্ষেত্রে তা আরও বেশি, প্রায় ৫১ শতাংশ। এই ঘাটতি মেটানো সম্ভব সেসব বিল্ডিং তৈরি হওয়ার অন্তত ১০ বছর পর। দ্য আর্কিটেক্ট জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে তুলনা করে দেখানো হয়েছে পুরনো আর নতুন ইমারতের কার্বন নিঃসরণের ক্ষমতা। বলা হয়েছে, পুরনো বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কারের জন্য যেটুকু কার্বন পরিবেশে মেশে, তা নতুন বাড়ি তৈরির চেয়ে অন্তত ২০ শতাংশ কম। বিশেষত বহুতলের ক্ষেত্রে, তা যত পুরনোই হোক, ভেঙে গুঁড়িয়ে সেখানে নতুন ইমারত তৈরি বন্ধ করতে হবে শিগগিরই, এমনই পরামর্শ আর্কিটেক্টদের।
এমনিতেই কার্বন নিঃসরণ কমানো নিয়ে একাধিক পরিবেশ সম্মেলনে আলোচনার ঝড় ওঠে, বিভিন্ন দেশ এই কাজে নিজেদের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে। কার্বন নিঃসরণে লাগাম পরাতে উন্নত দেশগুলির দায়িত্ব অনেকটা বেশি, তাও সকলের জানা। নগরায়নের দাপটে সেকথা দ্রুত ভুলেও যান অনেক রাষ্ট্রনেতা। পুরনো বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ করে পরিবেশে কার্বনের মাত্রা কমানো নিয়ে আর্কিটেক্টদের এই সতর্কবার্তা কতটা গুরুত্ব পাবে, সেটাই এখন দেখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.