সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রকৃতি নিজেই নিজের মস্ত বড় দলিল। নিজেরই রোষের চিহ্ন রেখে যায় নিজের গর্ভে। প্রত্নতত্ত্বের গবেষণায় সময়ের বুক চিরে ফিরে যাওয়া যায় ইতিহাসের পাতায়। এই যেমন সম্প্রতি ইটালির পম্পেইতে (Pompeii) খননকাজের ফলে ২০০০ বছরের অতীতে ফিরে গিয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন গর্ভবতী এক কচ্ছপের (Tortoise) দেহাংশ। ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠায় ছাইয়ের স্তূপে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছিল কচ্ছপটি। খোঁড়াখুঁড়িতে তার কিছু ডিমও পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি গবেষকদের।
সেই কবে জেগে উঠেছিল মাউন্ট ভিসুভিয়াসের (Mount Vesuvius) সুপ্ত দানব। পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা স্রোতে পুড়ে গিয়েছিল আশেপাশের এলাকা। রোমান নগরী পম্পেই ধসে গিয়েছিল। অতীতের সেসব দিন কেমন ছিল, তা বুঝতে গিয়ে ওই এলাকায় খননকাজে নেমেছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (Oxford university) একদল প্রত্নতাত্ত্বিক। খুঁড়তে খুঁড়তেই যেন উঠে এল জীবন্ত ইতিহাস! উদ্ধার হল কচ্ছপের দেহাংশ। আর আশেপাশে ছড়ানো ডিম (Eggs)। অর্থাৎ সেসময় কচ্ছপটি গর্ভবতী ছিল। মাটির নিচে আশ্রয় নিয়ে নিশ্চিন্তে ডিম পাড়ার সময় অকালে প্রাণ হারিয়েছিল সে। গবেষকদের দাবি, ডিমগুলি পরীক্ষা করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তাঁরা।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ মার্ক রবিনসন ২০০২ সালে এই ধ্বংসস্তূপ আবিষ্কার করেছিলেন। তখনই এই কচ্ছপটি সম্পর্কে জানা গিয়েছিল। তাঁর ধারণা ছিল, কচ্ছপটি গৃহপালিত। ওই চত্বরে যাঁরা থাকতেন, তাঁদের কারও বাড়ি থেকে কচ্ছপটি বেরিয়ে যাওয়ার সময় প্রকৃতির ভয়ংকর রোষে তার মৃত্যু হয়। অথবা আশেপাশের কোনও জায়গা থেকে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে এসেই সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখে পড়েছে সে। তবে সাম্প্রতিক খননকাজ অন্য তথ্য দিচ্ছে। কচ্ছপটি ডিম পাড়ার সময় প্রাণ হারিয়েছে বলে দাবি গবেষকদের।
পম্পেইয়ের ডিরেক্টর জেনারেলের মতে, এটা এমন শহর ছিল যে প্রাণীরা এখানে অবাধে ঘুরতে পারত। প্রসবের জন্য নিরাপদ জায়গা হিসেবেও বেছে নিত পম্পেইকে। খননকাজে এসব তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর পম্পেই ঘুরে আসা অনেক পর্যটকই অবাক। তাঁরা বলছেন, ধ্বংসস্তূপের কাছে কচ্ছপের ডিম দেখেও বুঝতে পারেননি কিছু। জুনাস ভানহালা নামে একজনের কথায়, ”প্রাণীগুলির খোলস, কঙ্কাল দেখেছি, ডিমও দেখেছি, হালকা খয়েরির উপর অনেকটা বালি বালি মতো। হয়ত এতদিন চাপা পড়ে থাকায় পলি জমেছে।” তবে ভিসুভিয়াসের অভিশাপে এভাবে গর্ভবতী কচ্ছপের মৃত্যুর তত্ত্ব সামনে আসায় অবাক বিজ্ঞানী থেকে আমজনতা, সকলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.