স্টাফ রিপোর্টার: বুদ্ধি থাকলে কী না হয়! করোনা কালে পাইপের ফাটল বা লিক ধরার বোরস্কোপ যন্ত্রের সাহায্যেই দূর থেকেই রোগী দেখছেন এক ইএনটি চিকিৎসক। নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞদের কাছে খুলে দিয়েছেন টেলি মেডিসিনের নয়া দিশা।
ডা. অভীক জানা। কলকাতার এই ইএনটি সার্জন ২০১৯ সালে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে বোরস্কোপ যন্ত্র রোগী দেখার কাজে ব্যবহার করেন। করোনাকালে এই পদ্ধতিই ‘সুপারহিট’ হয়ে যায়। সংক্রমণের ভয়ে যেখানে বহু ডাক্তার চেম্বার করে বন্ধ করেছেন সেখানে অভীকবাবু এই বোরস্কোপ যন্ত্রের সাহায্যে দূর-দূরান্তের রোগী দেখছেন। ভাবছেন তো কীভাবে?
ডাক্তারবাবু বসছেন নিজের চেম্বারে। আর রোগী স্থানীয় কোনও পলিক্লিনিকে। পলিক্লিনিকের একজনকে বোরস্কোপ যন্ত্র ব্যবহার শেখানো হচ্ছে। তিনিই যন্ত্রের সঙ্গে মোবাইলের সংযোগ ঘটিয়ে স্ক্রিন শেয়ার প্রযুক্তির কল্যাণে রোগীর নাক-কান-গলার ভিডিও সরাসরি পাঠাচ্ছেন ডাক্তারবাবুকে। নাক, কান, গলার ভিতর বোরস্কোপ যন্ত্র ঢুকিয়ে ভিডিও করা হচ্ছে। তা দেখেই ডাক্তারবাবু রোগ নির্ণয় করছেন। ওষুধ দিচ্ছেন। অভীকবাবুর দাবি, এই পদ্ধতিতে প্রায় নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় করে ওষুধ দেওয়া সম্ভব। আর এতে ডাক্তারবাবুদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিও থাকে না।
করোনার শুরু থেকেই ইএনটি ডাক্তারবাবুরা একেবারে সামনের সারিতে থেকেই লড়ছেন। এই শাখার চিকিৎসকরাই প্রথমদিকে করোনা পরীক্ষার জন্য সোয়াব সংগ্রহ করেছেন। এই কাজ করতে গিয়ে বহু চিকিৎসক সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যুও হয়েছে। ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ অটোল্যারিঙ্গোলজিস্ট অফ ইন্ডিয়া’-র অছি পরিষদের সদস্য তথা বঙ্গীয় শাখার কর্তা ডা. দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় জানালেন, “সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়েছেন ইএনটি চিকিৎসকরা। শতাধিক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। এমন পদ্ধতি হলে তো ভালই।”
তবে দ্বৈপায়ন এই পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বলেন, “নাক-কানের ফুটো অত্যন্ত ছোট। অটোস্কোপ, এন্ডোস্কোপ যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়। সেখান বোরস্কোপ যন্ত্র কতটা নির্ভুলভাবে ছবি দেখাতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ থাকছেই। যদিও অভীকবাবুর দাবি, সংক্রমণ এড়াতে বহু ইএনটি ডাক্তার এখন টেলিফোনে রোগী দেখছেন। এই পদ্ধতিতে অনেক সময়ই ভুল হচ্ছে। কিন্তু, বোরস্কোপ ব্যবহার করলে ভুলের মাত্রা অনেকটাই কমে। জানা গিয়েছে, বোরস্কোপ যন্ত্রের দাম মাত্র হাজার টাকা। অর্থাৎ নাগালের মধ্যেই। পলিক্লিনিকে একটি যন্ত্র মজুত থাকলেই হল। স্যানিটাইজ করে একাধিক রোগী দেখা যাবে। ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি, এগরা, চণ্ডীপুরের পলিক্লিনিকে আশা রোগী নিয়মিত দেখছেন অভীক। জানালেন, “২০১৯ সালে গ্যারাজে এই যন্ত্রটির ব্যবহার দেখি। তখনই মাথায় আইডিয়াটি খেলে।” ওই বছরই যন্ত্রের এই অভিনব ব্যবহার নিজের নামে ‘কপিরাইট’ করেন অভীকবাবু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.