ধীমান রায়, কাটোয়া: কয়েকদিন ধরেই রেশন কার্ডের নাম সংশোধনের কাজে ব্যস্ত সকলে। ভোরবেলায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে প্রায় সন্ধে পর্যন্ত খাদ্য দপ্তরের অফিসের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। আর গ্রামে প্রায় দিনভর লোকজন কম থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি শ্মশানের কাছে জঙ্গল থেকে কয়েক লক্ষ টাকার গাছ কেটে নিয়ে পালানোর অভিযোগ উঠল। ঘটনাটি ঘটছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের বাঘমারা গ্রামে।
রবিবার আদিবাসী অধ্যুষিত ৮ – ১০টি গ্রামের মানুষজন সালিশী সভা বসান। তাঁদের দাবি, যে বা যারা এই সমস্ত গাছ লুঠ করেছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তি ও জরিমানা দিতে হবে। ভাতারের মাহাতা পঞ্চায়তের বাঘমারা গ্রামের পাশে রয়েছে একটি শ্মশান। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শ্মশানে বাঘমারা গ্রাম ছাড়াও আশপাশের আমডাঙা, কাঁঠালডাঙা, লাইনডাঙা, রাধামোহনপুর, বেলডাঙা, নূরপুর প্রভৃতি গ্রাম মিলে প্রায় ১০টি গ্রামের মানুষ মৃতদেহ সৎকার করতে ওই শ্মশানে যান। শ্মশানের কাছাকাছি জায়গায় কয়েক বছর আগে স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের মাধ্যমে কিছু গাছ লাগানো হয়েছিল। তার অনেক আগে থেকে ছিল আরও কিছু গাছ। এলাকাটি ওড়গ্রাম জঙ্গলমহল লাগোয়া।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, দিন দশেক আগে কয়েকজনের নজরে পড়ে শ্মশানের কাছে কয়েকটি গাছ কাটা হচ্ছে। যারা গাছ কাটছিলেন, তাদের কাছে স্থানীয় কয়েকজন জানতে চান, গাছকাটার অনুমতি রয়েছে কিনা। অনুমতিপত্র না দেখাতে পারায় তাঁদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন স্থানীয়রা। দু, চারদিন গাছ কাটা বন্ধও ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা রথীন মুর্মু, সহ্কর মুর্মুরা বলেন, ‘আমরা গাছ কাটা বন্ধ করে দেওয়ার পর এই কয়েকদিন ধরে গ্রামবাসীরা ব্যস্ত ছিলাম রেশন কার্ড সংশোধন ও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড সংগ্রহ করার কাজে। অধিকাংশ গ্রামবাসী সেজন্য ভোর থেকে কেউ পঞ্চায়েত অফিস, কেউ বিডিও অফিসে গিয়েছিলাম। সারাদিন সেখানেই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছিল। তারই সুযোগ নিয়ে প্রায় ৩২ – ৩৫ টি গাছ কেটে নিয়ে পালিয়েছে। যেগুলির আনুমানিক মূল্য কয়েক লক্ষ টাকা।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার গ্রামবাসীরা দেখতে পান বাঘমারা শ্মশানের আশপাশে বেশকিছু গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারপর তারা প্রথমে ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নিখিল মাজির কাছে যান। ওই সমস্ত গ্রামের মোড়লরা গ্রামে গ্রামে ঘোষণা করে দেওয়ার পর রবিবার দুপুর থেকে গ্রামবাসীরা সালিশী সভা বসান। রথীন মুর্মু বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, আমডাহ্গা গ্রামের এক ব্যবসায়ী গাছ লুঠ করার কাজে জড়িত। তাকেও সভায় ডাকা হয়েছিল। কিন্তু আসেননি। তাই পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা মাহাতা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান নিখিল মাজি বলেন, ‘আমার এবিষয়ে কিছু জানা নেই। পঞ্চায়েত থেকে গাছ কাটার অনুমতিও দেওয়া হয়নি।” পুলিশ জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ পেলে ঘটনার তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এদিন গ্রামবাসীদের সালিশী সভা ঘিরে অশান্তির আশঙ্কায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছিল।
ছবি: জয়ন্ত দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.