সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আন্টার্কটিকা থেকে ধেয়ে আসছে পৃথিবীর বৃহত্তম হিমবাহ (Iceberg), যার পোশাকি নাম A68a. তার সাম্প্রতিক গতিপ্রকৃতি দেখে বিজ্ঞানীরা বিপদ সংকেত দিচ্ছেন। বলা হচ্ছে, ব্রিটিশ শাসনাধীন এলাকা সাউথ জর্জিয়ার দিকে এগিয়ে আসছে হিমবাহটি। আর তার জেরে বিপদের মুখে পড়তে পারে সিল, পেঙ্গুইনের মতো মেরুপ্রদেশের প্রাণীর দল। বিশালাকার হিমবাহ তাদের স্বাভাবিক চারণক্ষেত্র রোধ করে দাঁড়াতে পারে। ফলে A68a’র গতিপ্রকৃতির দিকে কড়া নজর রাখছে ব্রিটিশ আন্টার্কটিক সার্ভের (BAS) গবেষকরা।
যেমন তেমন নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হিমবাহ। তার আকার কেমন, জানলে চমকে যাবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, A68a’র আকার, আয়তন প্রায় দক্ষিণ আটলান্টিক দ্বীপের সমান। হিসেব বলছে, ৪২০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন, কয়েকশো বিলিয়ন টন ওজন এই হিমবাহটির। তো এহেন দৈত্যাকার একটি হিমবাহ যদি গড়িয়ে আসে, তাহলে পরিস্থিতি কেমন হতে পারে, তা নিশ্চয়ই এবার অনুমান করতে পারছেন। ব্রিটিশ আন্টার্কটিক সার্ভের গবেষক জেরেইন্ট টারলিং বলছেন, “সবচেয়ে বিপদ হতে পারে যদি হিমবাহটা কোথাও এসে থমকে যায়। এর আয়তন যা ভারী, তাতে অন্তত ১০ বছর তা সেখানেই আটকে থাকবে। আর তাতে পেঙ্গুইন, সিলদের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। ওদের সমূহ বিপদ। বাস্তুতন্ত্রে (Ecosystem) এর প্রভাব পড়ে তা বদলে যেতে পারে।”
আন্টার্কটিকা থেকে নেমে আসা বহু হিমবাহই নাকি তাদের গতিপথ শেষ করে এই সাউথ জর্জিয়ায় (South Georgia) এসে। তাই এই এলাকাকে হিমবাহের সমাধিস্থল বলে থাকেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। এখানকার উপকূল অংশে খণ্ডবিখণ্ড বহু হিমবাহের অংশ এমনভাবে পড়ে থাকে, কখনও তা ভাস্কর্যের রূপ নেয়। আসলে, এই অবস্থায় হিমবাহের গতিশীলতা থমকে যায়। আর এগোতে পারে না। তাই থমকে যায়। এরপর খুব ধীরে ধীরে গলতে থাকে। কিন্তু এসব হিমবাহের টুকরো অনেক সময়েই স্থানীয় প্রাণী অর্থাৎ পেঙ্গুইন, সিলদের অবাধ বিচরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। A68a’র ক্ষেত্রে সেই বাধা আরও বড় হয়ে দাঁড়াবে বলেই আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। এছাড়া হিমবাহের যা আয়তন, তাতে হিমশৈলের চূড়া ভেঙে সমুদ্র পড়লে বহু সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি হিমবাহের উদাহরণ আনছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০০৪ সালে A38 নামে এক আন্টার্কটিক হিমবাহ সাউথ জর্জিয়ায় এসে থমকে গিয়েছিল। আর তাতে কয়েকশো পেঙ্গুইন এবং সিল শাবকের মৃত্যু হয়েছিল। স্থানীয় উপকূলে ছড়িয়েছিল তাদের দেহ। সেই দৃশ্য এখনও ভুলতে পারেননি অনেকে। ফের কি তারই পুনরাবৃত্তি ঘটবে? বিশ্বের বৃহত্তম হিমবাহকে নিয়ে এখন সেই চিন্তায় মগ্ন বিশেষজ্ঞরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.