রাজা দাস, বালুরঘাট: এক কাজে দুই সুফল। নদী থেকে প্রতিমার কাঠামো তুলে কয়েকজন যুবকের বাড়তি আয়ও হল, আর দূষণমুক্ত হল আত্রেয়ী নদী। বিসর্জন দেওয়া প্রতিমার কাঠামো সংগ্রহ করতে মরিয়া ওই যুবকদের উৎসাহ দিতে সক্রিয় বালুরঘাট পুর কর্তৃপক্ষ। দুর্গাপুজোর বিসর্জন তো বটেই, সারা বছর এইভাবেই নদীকে প্রতিমা দূষণ থেকে রক্ষা করা যায়, তার দাবি তুলেছে পরিবেশপ্রেমীরা।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সদর শহর বালুরঘাট। এই শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রেয়ী নদীর সদরঘাটে দশমী থেকে চলছে শতাধিক প্রতিমা বিসর্জন। সারা বছর কমবেশি প্রতিমা ও পূজার সামগ্রীর ভাসান চলে এই ঘাটে। ফলে নদী দূষণ একটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল এখানে। কিন্তু এলাকার কয়েকজন যুবক বাড়তি আয়ের ভাবনায় অন্য পরিকল্পনা করায় বছর দুয়েক ধরে এই সমস্যাটা অনেকটাই
মিটেছে। খুশি প্রশাসন থেকে পরিবেশপ্রেমীরা।
নদী সংলগ্ন কলোনির বাসিন্দা সুনীল ও সমীর বাসফোররা জানাচ্ছেন, বালুরঘাটের আত্রেয়ী নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের পর কাঠামোগুলো তুলে নিয়ে আসেন তাঁরা। প্রত্যেকের ভাগে থাকা কাঠামো বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন হয়। তাই বিষাদের মধ্যেও দশমী বরাবরই আনন্দের আবহ বয়ে আনে তাঁদের কাছে। এই নদী থেকে তোলা এক একটি বড় কাঠামো ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। আর ছোট কাঠামোগুলো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত পান। পাশাপাশি কাঠামোর বাঁশ খুলে তাঁরা নিজেদের বাড়ি মেরামতের কাজেও ব্যবহার করতে পারেন। এবার তাঁরা কয়েকজন মিলে বালুরঘাট পুরসভা থেকে নদীর ঘাটে গিয়েছিলেন। দিন চার,পাঁচেকের এই কাজে তাঁরা একেকজন দশ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করেছেন। মুলত মৃৎশিল্পীদের কাছেই এই সব কাঠামো বা বাঁশ বিক্রি করা হয়। বাজার থেকে কম দামে বাঁশের কাঠামোগুলো বিক্রিও হয়ে যায় তাড়াতাড়ি। শুধুমাত্র দুর্গা নয়, বিসর্জন দেওয়া অন্য প্রতিমাও নদী থেকে তোলেন তাঁরা।
ইদানিং নদী দূষণ রোধে প্রতিমার বিসর্জনে সরকারি নানান পরিকল্পনা নেওয়া হয় এখন। তবু প্রতিমার সঙ্গে থাকা প্রচুর রাসায়নিক পদার্থ নদীগর্ভে চলে যায় বা নদীতে ফেলে দেয় পুজো উদ্যোক্তারা। ফলে ব্যাপকভাবে জল দূষণ ঘটে নদীতে। বালুরঘাটের কল্যাণী সদরঘাটের দৃশ্যটা তেমনই। প্রতিমা বিসর্জন করেই সবার সব দায়িত্ব শেষ প্রায়। কিন্তু কল্যাণী কলোনি এলাকার বেশ কয়েকটি পরিবার নদীতে বিসর্জন
দেওয়া প্রতিমার কাঠামো ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ তুলে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। নিজেদের অজান্তেই তাঁরা আত্রেয়ীকে দূষণমুক্ত করছেন। আর একাজে শামিল যুবকদের সাধুবাদ জানিয়েছেন সকলেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.