মণিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: আমফান (Amphan) ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রাম বাংলার পাখির দল। ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে মানুষের মতই গৃহহীন তারা। গাছে মাটির কলসি ঝুলিয়ে তাদের কৃত্রিম বাসা উপহার দিচ্ছে হাওড়ার স্বেচ্ছাসেবীদের দল। পাখিদের নীড়ে ফেরার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন এই সংস্থার সদস্যরা।
ঝড় চলে গেছে, কিন্তু ক্ষত চিহ্ন এখনও রয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গের বুকে। আমফানের তাণ্ডব শেষ করেছে পাখিদের নীড়ে ফেরার আশা। ঝড়ের দাপটে একের পর এক মহীরুহের পতন বাংলার পক্ষীকূলের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে তাদের বাসা। কোথাও আবার দামাল বাতাসের জেরে আঘাত পেয়েছ বহু পাখি। গাছের নীচে মরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে চড়ুই, বুলবুলি, মাছরাঙার ছানাদের ছোট্ট দেহখানি। তবে সেই নীড়হারা পাখিদের জন্য নয়া উদ্যোগ নিয়েছে হাওড়ার স্বেচ্ছাসেবীদের দল। মাটির কলসির ভিতরে দড়ি ডালপালা দিয়ে তারা তৈরি করছে কৃত্রিম বাসা। তা টাঙিয়ে দিয়েছে গাছের ডালে। বাসার মধ্যে জলেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে পাখিদের জন্য। ফলে বন্ধু প্রকৃতির কোলে ‘রেডিমেড’ বাসা পেয়ে মনের আনন্দে গাছের আশেপাশে উড়ে বেড়াচ্ছে পাখির দল। প্রকৃতির কাছে তার সন্তানদের ফিরিয়ে দিতে পেরে বেজায় খুশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ।
আমফানের পরেই পাখিদের নীরাশ্রয় হতে দেখে কৃত্রিম বাসা বানানোর পরিকল্পনা করেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের সদস্যরা। সংস্থার সদস্য শুভ্রদীপ ঘোষ, অর্পন দাস, প্রদীপ রঞ্জন রীত, কল্যাণী পালুই, সায়ন দে, সম্রাট মন্ডলরা আমতা, বাগনান, শ্যামপুর সহ হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আহত পাখিদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এইভাবে তাঁরা কয়েকশো পাখিকে উদ্ধার করে। জীবিতদের খড়কুটো দিয়ে কৃত্রিম বাসা তৈরি করে সেখানে রাখা হয়। আশ্রয় দেওয়া হয় কাঠবিড়ালিদেরও। পাখিদের প্রাথমিক চিকিৎসা করে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। একটু সুস্থ হতেই সেই পাখিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপরই তারা প্রতিটি গাছে বাঁশ দিয়ে কৃত্রিম বাসা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়।
যৌথ পরিবেশ মঞ্চের সদস্যরা নতুন-পুরাতন মাটির কলসি জোগাড় করেন। সেই কলসি উলম্ব রেখে কিছুটা অংশ কেটে তার ভিতরে দড়ি, খড়কুটো, ডালপালা দিয়ে তৈরি করে পাখির কৃত্রিম বাসা। সেই বাসা বিভিন্ন গাছের ডালে টাঙিয়ে দেযন তারা। কলসির মুখগুলিতে সরা বসিয়ে দেওয়া হয়। ওই সরার সাহায্যে একদিকে যেমন কলসির খোলা মুখ বন্ধ হয়ে যায়, তেমনি আবার সরায় বৃষ্টির জলও জমে। আর সেই জল পাখির তেষ্টাও মেটায়। এই বাসা যাতে ভেঙে না পড়ে তাই গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে তা শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হয়। এই পরিকল্পনার অন্যতম প্রধান হোতা অর্পন দাস। তিনি মূক ও বধির। সংস্থার অন্যতম কর্তা শুভ্রদীপ ঘোষ বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই প্রায় ২৫-৩০টা গাছে পাখিদের জন্য এভাবে বাসা তৈরি করে দিয়েছি। আমরা পশু পাখিদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছি। আমফান পরবর্তী সময়ে এই কাজের গুরুত্ব আরও বেশি করে অনুভব করছি। তাই আমরা এই অবলাদের পাশে আছি ও থাকব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.