কৃষ্ণকুমার দাস: ভয়ংকর দূষণের রাহুগ্রাস থেকে কলকাতাবাসীকে বাঁচাতে হাতে সময় মাত্র চার মাস।
অক্টোবরের আগে অক্সিজেন জোগানের মাত্রা কয়েকগুন বাড়িয়ে আমফান ঘূর্ণিঝড়ে কলকাতা তথা বাংলায় ধ্বংস হওয়া ১১ কোটি কার্বন ইউনিটের হাত থেকে বাঁচাতে হবে রাজ্যবাসীকে। কারণ, কুয়াশা শুরু হলেই বাতাসে দূষণের মাত্রা অস্বাভাবিক বাড়তে শুরু করে। বস্তুত এই কারণেই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে ‘নগর-বনসৃজন’ ও ‘গ্রামীন সবুজায়ন’, দুই কর্মসূচি একসঙ্গে নিয়ে গাছ বাঁচাতে নামছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি শহরে বাড়ি তৈরির প্ল্যান অনুমোদনের সময় ‘আরবান-ফরেস্ট’ করার প্রস্তাব থাকলে ওই অংশের সম্পত্তিকর মাত্র ১০ শতাংশ দিলেই হবে। শুধু তাই নয়, স্কুল, কলেজ ও বেসরকারি সংস্থাকে এবার থেকে সন্নিহিত গাছ সংরক্ষণ ও পরিচর্যার দায়িত্বও নিতে হবে। আমফান ঝড়ে সাড়ে ১৫ হাজার গাছের ক্ষতি মেটাতে তাই এবার কলকাতা জুড়ে ‘নয়া সবুজ বিপ্লব’ অভিযানে সরকারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে কর্পোরেট ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। শহরের সবুজ ফেরানোর নয়া অভিযান শুরু হচ্ছে আগামী ৫ জুন, শুক্রবার। দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরের সামনে পুরসভা ও বনদপ্তরের এই যৌথ কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানাবে।
কলকাতা তথা দক্ষিণবঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সবুজ পুনরুদ্ধার নিয়ে শনিবার পুরভবনে একটি বর্ধিত বৈঠক হয়। ছিলেন কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, উদ্ভিদবিজ্ঞানী, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং স্বেচ্ছাসেবীরা। বৈঠকে ঠিক হয়েছে শহরে কী কী গাছ লাগানো হবে এবং কী পদ্ধতিতে হবে তা দেখতে বিশেষজ্ঞ এবং বন, পরিবেশ ও পুরসভার উদ্ভিদবিদদের নিয়ে একটা বিশেষ কমিটি হবে। সেই কমিটিই সবুজায়ন কর্মসূচি ঠিক করবে। তবে সবাই বৈঠকে গাছ বসানোর চেয়ে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যায় গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। বৈঠকে নদী ও পরিবেশবিদ কল্যাণ রুদ্র বলেন, “ম্যানগ্রোভ দেওয়াল না থাকায় সুন্দরবনের মৌসুনি, জি প্লট ও সাগরদ্বীপ দিয়েই ঘূর্ণিঝড় আমফান ঢুকেছে। উপকূলে ম্যানগ্রোভ থাকলে ওই ঝড়ে এতটা ক্ষতি করতে পারত না।” বনদপ্তরের তথ্য, এবার ঘূর্ণিঝড়ে রাজ্যে প্রায় ১৬ লাখ গাছ ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু প্রতিবছর সরকার ২ কোটি গাছ বিডিও মারফত বন্টন করে। আর দেড় কোটি গাছ ‘সবুজশ্রী’ প্রকল্পে বিলি হয়। কিন্তু এবছর আরও তিন কোটি মিলিয়ে মোট সাড়ে ছয় কোটি গাছ লাগানো হবে। যেখানে একটা ক্ষতি হয়েছে সেখানে ১০টি গাছ লাগানো হবে। রাজ্যজুড়ে বৃক্ষরোপন অভিযান হবে ১৪ জুলাই, বনমহোৎসব কর্মসূচিতে। বৈঠকে বনমন্ত্রী রাজীব বন্দে্যাপাধ্যায় জানান,“ শহরে তিন বছরের সাড়ে ১২ হাজার, আর দশ বছরের বয়স্ক সাড়ে চার হাজার গাছ প্রতিস্থাপন হবে কলকাতায়। জারুল, নিম ও দেবদারু ঝড়ে ক্ষতি কম হয় বলেই শহরে বসবে।”
পুরসভা সূত্রে খবর, বনদপ্তর বর্ষাতেই কলকাতায় ৩০ কিমি রাস্তায় বিশেষ বনসৃজন প্রকল্প সম্পূর্ণ করবে। এগুলি ভবানীপুর, আলিপুর, চৌরঙ্গী রোড, বালিগঞ্জ, রাসবিহারী, গড়িয়াহাটের মূল রাস্তা। বৈঠকের পর বন ও পরিবেশ কর্তাদের সঙ্গে বসে রাস্তাগুলি নির্বাচন করেন পার্ক ও উদ্যান দফতরের প্রশাসক দেবাশিস কুমার। কলকাতায় গাছ লাগানোর পাশাপাশি উপড়ে পড়া গাছগুলি পুনঃস্থাপনের সঙ্গে হেলে পড়া গাছ সোজা করতে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে পুরসভা। ক্রেন দিয়ে সোজা করার পাশাপাশি বাঁশ দিয়ে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পুনঃস্থাপন করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে অনেক রাস্তায় মাটির নিচে জল, বিদ্যুৎ ও কেবলের লাইন আটকে যাচ্ছে। পুরমন্ত্রী জানান, “রাস্তার পাশে মাটিতে অল্প শিকড় যায় এমন গাছ এবং ফাঁকা জায়গায় বড় শিকড়ের গাছ লাগানো হবে। গাছ লাগাতে গিয়ে শহরের পাখিদের কথাও মাথায় রাখা হচ্ছে।” এবার ঝড়ে অন্তত ১০ হাজার ম্যানগ্রোভ ধ্বংস হয়েছে। ম্যানগ্রোভের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে আগামী সপ্তাহে সুন্দরবন যাচ্ছেন বনমন্ত্রী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.