সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দায় ছিল বড়। নিরন্তর সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে সন্তান উৎপাদন করে প্রজাতিটাকে বাঁচিয়ে রাখার। ১০০ বছরের কাছাকাছি পৌঁছেও প্রজননক্ষম ছিল। আনন্দে সঙ্গিনীর সঙ্গে সঙ্গম নয়, নেহাৎই কর্তব্যের টানে নিত্যদিন যৌন মিলন, সন্তানের জন্ম দেওয়া। এতগুলো বছর ধরে এইই ছিল দিয়েগোর কাজ। ভাবছেন তো কে এই দিয়েগো? না, দিয়েগো আমার, আপনার মতো মনুষ্য প্রজাতির কেউ নয়, বৃহদাকার কচ্ছপ। এতদিন তাকে প্রজননের কাজ লাগানো হয়েছে। জীবনসায়াহ্নে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হল নিজের বাসস্থান, গালাপাগোস দ্বীপে। কাজ থেকে অবসরের পর এবার সে জীবনের বাকি দিনগুলো কাটাতে পারবে নিজের মতো করে।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা ক্রুজ দ্বীপে যে কবে দিয়েগোকে কাজের দায়িত্ব দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সঠিক মনে করতে পারছেন না কেউই। ১৯৬০ সালের আগে,পরে। তবে এটুকু সকলের জানা, বৃহদাকার কচ্ছপদের বাসস্থান ওই দ্বীপটিতে প্রজাতি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এগোচ্ছিল। সেসময় ‘জায়ান্ট টরটয়েজ’ প্রজাতির মাত্র ২ পুরুষ ও ১২জন স্ত্রী কচ্ছপ ছিল। আর খানিকটা সময়ে মধ্যে এদের গোটা প্রজাতিই হারিয়ে যেত পৃথিবী থেকে। তা রুখতেই দিয়েগোর শরণাপন্ন হওয়া। গালাপাগোস দ্বীপের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ বিভাগের অনুমতি নিয়েই তাকে আনা হয়েছিল। এই মুহূর্তে সান্টা ক্রুজ দ্বীপে যত কচ্ছপ আছে, তার ৪০ শতাংশ দিয়েগোর বংশধর। সংখ্যা প্রায় ৮০০র কাছাকাছি।
কিন্তু দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে দিয়েগো যে স্রেফ কর্তব্যের খাতিরেই সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে, তাতে তার ক্লান্তি আসেনি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, না। বরং নিত্যনতুন সঙ্গিনী পেয়ে সে যৌন মিলন বেশ উপভোগই করেছে। তবে আর নয়। এবার ছুটি দেওয়ার পালা। গালাপাগোসের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ বিভাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অবসরে পাঠানো হোক বিশালদেহী কচ্ছপকে। কারণ, প্রজাতির সংকট ছিল তা একাই দায়িত্ব নিয়ে সমাধান করে দিয়েছে দিয়েগো। গালাপাগোস জাতীয় উদ্যানের ডিরেক্টর জর্জ ক্যারিয়ন বলছেন, ”প্রজাতিকে বাঁচাতে ওর অবদান সবচেয়ে বেশি।” আরেক সংরক্ষকের কথায়, ”১৯৬০ সালের গণনা আর ২০১৯সালের গণনার তুলনায় করলেই তা বোঝা যায়। আপাতত ১০০ বছর জায়ান্ট টরটয়েজ প্রজাতির বিলুপ্তির কোনও ভয় নেই।”
দিয়েগোর কাজ ফুরিয়েছে। এবার অখণ্ড অবসর। সিদ্ধান্ত হয়েছে, রুটিনমাফিক সঙ্গমের দায়িত্ব আর তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না। বরং এবার তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে নিজের বাসস্থান গালাপাগোস দ্বীপে। সেখানেই নিজের মতো দিন কাটাবে সে। সমস্ত দায়দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন হবে দিয়েগো। আর তার জগৎ মনে রেখে দেবে তার বৃহৎ অবদানের কথা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.