Advertisement
Advertisement

Breaking News

Maa Kali

সমগ্র সৃষ্টির মূল, মহাকালীর শক্তির রহস্য কী?

মা কালীর শক্তিকে কেবল গভীর ধ্যানের মাধ্যমেই অনুভব করা যায়।

What is the secret of Maa Kali's power
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:October 24, 2024 3:46 pm
  • Updated:October 24, 2024 5:29 pm  

গুরুদেব শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর: মহাকালীর শক্তি এই সমগ্র সৃষ্টির মূল। যা থেকে সবকিছু উৎপন্ন হয় এবং যার মধ্যে সবকিছু বিলীন হয়ে যায়, সেই শক্তি, সেই চেতনা মহাকালী।

চোখের যে বিন্দুটি আপনার আলো দেখতে সহায়ক হয়, সেটি কালো। যদি চোখ থেকে সেই কালো বিন্দুটি মুছে যায়, তবে আলোও অদৃশ্য হয়ে যাবে। একইভাবে রাতের রংও কালো। এখন বলুন, আপনাকে দিনের চেয়ে রাতেই বেশি কিছু দেখা যায়, তাই না? আপনি হয়তো বলবেন যে দিনের আলোতে বেশি দেখা যায় কারণ তখন সূর্য ওঠে, তবে আমি বলব, আপনাকে রাতে বেশি কিছু দেখা যায়। রাতের কারণেই আমরা জানতে পারি যে ব্রহ্মাণ্ডে শুধু একটি সূর্য নয়, অনেক সূর্য রয়েছে। এই সৃষ্টি অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ড, গ্রহ এবং তারকা দ্বারা পূর্ণ। দিনে আমরা কোনও গ্রহকে চিনতে পারি না, তবে রাতে আমরা মাইলের পর মাইল দূরের তারাগুলোকে চিনতে পারি। রাত্রি জ্ঞানদায়ক। এই কারণেই রাত্রিকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এমনকি বেদে “রাত্রি সূক্ত” নামে একটি সূক্তও রয়েছে। রাত্রিকে কালো বলা হয়েছে। যে আপনার মধ্যে জ্ঞানকে জাগ্রত করে, সেই কালীর শক্তি।

Advertisement

যখন আপনি গভীরভাবে মা কালীর(Maa Kali) প্রতীকবাদে প্রবেশ করবেন, তখন এটি খুবই বিস্ময়কর। মা কাটা হাতের বস্ত্র পরিধান করেন। এটি নৈষ্কর্ম্য সিদ্ধির প্রতীক, অর্থাৎ কর্মের ঊর্ধ্বে থাকা। তার জিভ বাইরে বের করা থাকে। আপনি যদি জিভ বের করে কিছু বলার চেষ্টা করেন, তবে আপনার মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হবে না। জিভ বের হওয়া নীরবতার প্রতীক, অর্থাৎ আমাদের মন শান্ত হয়েছে। এজন্য কালী শব্দের বাইরে।

মা কালীর এক হাতে কাটা মস্তিষ্ক থাকে। এর মানে হলো আমাদের সমস্ত সমস্যা মস্তিষ্ক থেকে আসে। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ এবং ঈর্ষা – এই সব ত্রুটি মস্তিষ্ক থেকে উদ্ভূত হয়। জ্ঞানশক্তির মাধ্যমেই এই ত্রুটিগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তার গলায় মুন্ডমালা রয়েছে। তিনি সমস্ত তর্ককে মালার আকারে তার গলায় ধারণ করেছেন, এটি এই কথা প্রকাশ করে যে শিবতত্ত্ব অর্থাৎ পরমাত্মা তর্কের ঊর্ধ্বে। মুন্ডমালা এই বিষয়টিকেও বোঝায় যে, পৃথিবীতে যত বৈচিত্র্যই থাকুক না কেন, সবশেষে সব এক হয়ে যায়। যে শক্তি এই বৈচিত্র্যকে একতায় রূপান্তরিত করে, সেটিই জ্ঞানশক্তি, সেটিই কালী। এজন্য মহাকালী এই পৃথিবীর সৃষ্টির ঊর্ধ্বে ‘পরম জ্ঞান’-এর প্রতীক।

কালী শিবের উপরে দাঁড়িয়ে থাকেন। শিব মানে শান্ত এবং কল্যাণময় তত্ত্ব যা সবার জন্য মঙ্গলজনক। যখন শান্ত শিবতত্ত্ব থেকে চৈতন্যের উৎপত্তি হয়, সেটি কালী। কালী যেমন শক্তিশালী, তেমন শক্তিকে ধারণ করতে শিবতত্ত্বের প্রয়োজন হয়। যেমন একজন জ্ঞানী ব্যক্তির হাতে পারমাণবিক শক্তি সমাজের কল্যাণে ব্যবহার করা যায়, তেমনই শিবতত্ত্বের উপস্থিতিতেই কালী শক্তি মঙ্গলময় হয়ে ওঠে।

দেখতে মা কালীর রূপ ভয়ংকর মনে হতে পারে, কিন্তু পৃথিবীতে তার চিত্রের চেয়ে অনন্য প্রতীক কল্পনা করা সম্ভব নয়। যা গভীর এবং অনন্ত, তা ছোট মনকে ভীত করে তোলে। শিশুরা দিনে নয়, রাতে ভয় পায়। রাতের গভীরতাই ভয় সৃষ্টি করে। যখন আপনি সেই ভীতিকর রূপকে গ্রহণ করেন, তখন জীবনে সব রকমের ভয় শেষ হয়ে যায়। এই কারণেই প্রাচীন ঋষিরা কালীকে এই রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

এই সৃষ্টি, যা আমরা দেখতে বা অনুভব করতে পারি, এটি সমগ্র সৃষ্টির কেবলমাত্র একটি ছোট অংশ। যখন আমাদের দৃষ্টি এই দৃশ্যমান পৃথিবী থেকে উঠিয়ে গভীর, সূক্ষ্ম এবং বিশাল সৃষ্টির দিকে যায়, তখনই আমরা মহাকালীর উপস্থিতি অনুভব করতে পারি। মা কালীর শক্তির বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তাকে কেবল গভীর ধ্যানের মাধ্যমেই অনুভব করা যায়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement