ফাইল ছবি
বিপ্লবচন্দ্র দত্ত , কৃষ্ণনগর: শুক্রবার থেকে নদিয়ার (Nadia) মায়াপুরের (Mayapur) ইসকন মন্দিরে প্রায় একমাসব্যাপী দোল উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হল। পতাকা তুলে উৎসবের সূচনা করেন ইসকনের প্রবীণ সন্ন্যাসীরা। শান্তিমন্ত্র উচ্চারণ, রাধামাধবের পূজার্চনার পর হয় প্রসাদ বিতরণ।
বিকেলে হয় কীর্তনমেলার অধিবাস। শনিবার থেকে শুরু হয়ে তিনদিনব্যাপী চলবে কীর্তনমেলা। আগামী ১৭ তারিখ থেকে শুরু হয়ে পাঁচ দিনব্যাপী চলবে ৭২ কিলোমিটার নবদ্বীপ মণ্ডল পরিক্রমা। ইসকনের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস বলেন, “করোনার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানতে তো হচ্ছেই, সেই সঙ্গে নির্বাচনী আচরণবিধির কথা মাথায় রেখে দোল উৎসবেও ভারচুয়াল পদ্ধতিকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এবার নবদ্বীপ (Nabadwip)মণ্ডল পরিক্রমার ক্ষেত্রে পরিক্রমার পথে ভক্তদের কোনও রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। সম্পূর্ণ নিজের দায়িত্বে অনলাইনে ইসকনের ঘর বুক করে পায়ে হেঁটে কেউ পরিক্রমায় অংশগ্রহণ করতে পারেন ঠিকই, তবে অন্যান্য বছরের মতো পরিক্রমার নির্ধারিত পথে ইসকন কর্তৃপক্ষ কোথাও অস্থায়ী মণ্ডপ তৈরি করছে না রাত্রিযাপনের জন্য। ভক্তরা স্মার্টফোনে, মায়াপুর টিভি, ইউটিউব চ্যানেলে দোল উৎসব দেখতে পারেন। তবে এখনও ইসকন মন্দিরে প্রবেশের ক্ষেত্রে মাস্ক, স্যানিটাইজার—সহ স্বাস্থ্যবিধির সমস্ত বিষয়কেই সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’
ইসকন সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যান্য বছর দোল উৎসবের অঙ্গ হিসাবে পরিক্রমায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষের সমাগম হত। সঙ্গে থাকতেন স্বেচ্ছাসেবক, পুলিশ, মেডিক্যাল টিম, লাইট অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম, নিরাপত্তারক্ষী এবং প্রসাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য লোকজন। পরিক্রমার পথে বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী মণ্ডপ করে সেখানে পরিক্রমায় অংশগ্রহণকারীরা রাত্রিযাপন করতে পারতেন। অন্যান্য বছর মহারাষ্ট্র, অন্ধপ্রদেশ(Andhra Pradesh), কেরল(Kerala), তামিলনাড়ু(Tamil Nadu)—সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে যেসব ভক্ত আসতেন দোল উৎসবের পরিক্রমায় যোগ দিতে, তাঁদের জন্য আলাদা গ্রুপের ব্যবস্থা করা হত। এবার বিভিন্ন রাজ্য থেকেও ভক্তরা অনেকেই আসতে পারবেন না বলে ধরে নিয়েছে ইসকন কর্তৃপক্ষ। করোনা পরিস্থিতিতে বিদেশিদেরও আসা সম্ভব নয়। পরিক্রমায় অংশগ্রহণকারীদের এবার বিশেষ রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হবে। যাঁরা রেজিস্ট্রেশন করাবেন, তাঁদের বিশেষ পরিচয়পত্র দেবে ইসকন কর্তৃপক্ষ। এর উদ্দেশ্য, লুকিয়ে-চুরিয়ে যাতে কেউ পরিক্রমায় অংশগ্রহণ করতে না পারেন।
২৮ মার্চ পালিত হবে দোল। ২৯ মার্চ অবধি চলবে দোল উৎসব। রসিক গৌরাঙ্গ দাস জানিয়েছেন, “এবার শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ৫৩৫তম আবির্ভাব বর্ষ। ২৮ মার্চ মহাপ্রভুর আবির্ভাব দিবস। এবার দোল উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্রায় একমাসব্যাপী এই উৎসবের মধ্যে রয়েছে শান্তিযজ্ঞ, নৌকাবিহার, রথযাত্রা, বিভিন্ন ভাষায় ভাগবত পাঠ, সেমিনার, ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাঁরা আসতে পারবেন, তাঁদের নিয়ে বিভিন্ন ভাষায় ভজন-কীর্তন, মনোমুগ্ধকর নাটক, দৃষ্টিনন্দন প্রদর্শনী, গঙ্গাপুজো, রাধামাধবকে হাতির পিঠে বসিয়ে মন্দির চত্বর পরিক্রমা, বিনামূল্যে প্রসাদ বিতরণ ইত্যাদি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্যই থাকছে প্রবেশাধিকার। মহাপ্রভুর আবির্ভাব দিবস যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হবে। ওই দিনই হবে বসন্ত উৎসব। তবে আমাদের মন্দির চত্বরে কোনওদিন রং বা আবির খেলা হয় না। ভক্তরা কৃষ্ণের অনুরাগে নিজেদের রঞ্জিত করার সাধনা করেন। সমস্ত অনুষ্ঠান হবে ঠিকই, তবে এবার তা খুবই ছোট আকারে হবে। করোনাবিধি ও আচরণবিধি মেনে সমস্ত কিছু আয়োজন করা হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.