সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শুক্রবার মকর সংক্রান্তি (Makar Sankranti 2022)। পৌষ মাসের শেষদিনে পালিত এই উৎসবের সময়ই দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপে আয়োজিত হয় গঙ্গাসাগর মেলা। কপিল মুনির আশ্রমকে কেন্দ্র করেই পুণ্যস্নানে অংশ নেন পুণ্যার্থীরা। জানেন কি কে ছিলেন কপিল মুনি (Kapil Muni)? তাঁর মন্দিরের আসল কাহিনিটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। তাহলে জেনে নেওয়া যাক—
ঠিক কত বছর আগে গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজন করা হয়েছিল তা জানা যায় না। তবে তা যে বহু যুগ আগের কথা, তাতে সন্দেহ নেই। আর্য ও অনার্য সভ্যতার এক অপূর্ব মিলনস্থল এই মেলা। যার কেন্দ্রে রয়েছে কপিল মুনির আশ্রম। বৈদিক ঋষি কপিল সংখ্যা দর্শনের অন্যতম প্রবর্তক। তাঁর তেজের কথা আমাদের পুরাণ ঘাঁটলেই বেরিয়ে পড়ে। এক দৃষ্টিতেই তিনি ভস্মীভূত করে দিয়েছিলেন সগর রাজার ষাট হাজার পুত্রকে। কিন্তু কেন? সেই কাহিনি সত্যিই চমকপ্রদ।
আসলে সগর রাজা একটি অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন। সেই যজ্ঞের ঘোড়াকে লুকিয়ে কপিল মুনির আশ্রমেই বেঁধে রেখেছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র। আসলে ইন্দ্র ভয় পেয়েছিলেন ওই যজ্ঞকে। সেটিকে বানচাল করে দিতে তাঁর এই পরিকল্পনা। এদিকে নিরুদ্দেশ ঘোড়া খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে একসময় কপিল মুনির আশ্রমেই উপস্থিত হন সগর রাজার পুত্ররা। সেখানেই ঘোড়াটিকে খুঁজে পেয়ে তাঁদের ধারণা হল, কপিল মুনিই এই চক্রান্তের মূলে।
এরপর তাঁরা উত্যক্ত করতে শুরু করেন মুনিকে। আর তাতেই ঘটে যায় অনর্থ। আচমকাই ধ্যানমগ্ন ঋষি চোখ খুলে তাকান। তাঁর ক্রোধের আগুনে রাতারাতি ভস্ম হয়ে যায় সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র।
শেষ পর্যন্ত কী হয়েছিল সগর রাজার ছেলেদের? তাঁদের আবার ধরাধামে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল। আর সেই কাজ করেছিলেন তাঁদের বংশের পঞ্চম প্রজন্মের উত্তরপুরুষ ভগীরথ। তাঁর তপস্যায় সন্তুষ্ট হন ব্রহ্মা। শেষ পর্যন্ত প্রজাপতির বরে তিনি ‘স্বর্গের নদী’ গঙ্গাকে নিয়ে এসেছিলেন পৃথিবীতে। কিন্তু গঙ্গাকে ধারণ করবেন কে? ওই স্রোতস্বিনী নদীটিকে নিজের জটা আবদ্ধ করেছিলেন মহাদেব। শেষ পর্যন্ত শঙ্খ বাজিয়ে তাঁকে পথ দেখিয়ে গঙ্গাসাগর প্রাঙ্গণে নিয়ে আসেন ভগীরথ। শেষপর্যন্ত গঙ্গার পুণ্যবারিস্পর্শে বেঁচে ওঠেন সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র।
এই হল কাহিনি। সেই কাহিনি আজও ফিরে ফিরে আসে প্রতিটি মকর সংক্রান্তির দিনে। গঙ্গা ও বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থল গঙ্গাসাগরে ভিড় জমান পুণ্যার্থীরা। উদ্দেশ্য একটাই। গঙ্গার পবিত্র জলে পুণ্য এই তিথিতে স্নান করে পুণ্য সঞ্চয় করা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.