Advertisement
Advertisement
Religious News

দেবী ছিন্নমস্তার শরণ নিলেই মনস্কামনা পূরণ, জানেন ঝাড়খণ্ডের এই মন্দিরের দেবী মাহাত্ম্য?

এই মন্দিরের বিশেষত্ব মহাভাণ্ডারার মহাভোগ।

This Jharkhand temple dedicated to goddess Kali draws massive crowd of devotees | Sangbad Pratidin

ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 18, 2023 2:13 pm
  • Updated:August 18, 2023 2:57 pm

সুমিত বিশ্বাস, ঝাড়খণ্ড: ভক্তি ভরে মায়ের কাছে প্রার্থনা করলে মা ছিন্নমস্তা মনস্কামনা পূর্ণ করেন। ছিন্ন মস্তক যে দেবীর। তিনি ছিন্নমস্তিকা। গুপ্তদুর্গা বা প্রচণ্ডচণ্ডিকা নামেও পরিচিত। দশ মহাবিদ্যার তৃতীয় রূপ এই ছিন্নমস্তা। অন্যতম শক্তিপীঠ! দেবীর এই রূপ ভয়ংকর। দেবী নিজের হাতে ধরে রেখেছেন তার ছিন্নমস্তক। আরেক হাতে তলোয়ার। দেবীর গলা থেকে নির্গত হচ্ছে তিনটি রক্তধারা। একটি তাঁর নিজের মুখে। অন্য দুটো তাঁর সহচরীর মুখে প্রবেশ করছে। দেবী নগ্ন অবস্থায় রতি সঙ্গমরত যুগলের দেহের উপর দণ্ডায়মান। তিনি একাধারে দিব্যজননীর জীবনদাত্রী এবং জীবনহন্তা স্বত্তার প্রতীক। তাঁর আত্মবলিদানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে তাঁর মাতৃসত্ত্বা, আত্মবিধ্বংসী ক্রোধ। তিনি যতই ভয়ংকরী হন না কেন, তার চরণে মাথা ঠেকিয়ে ভক্তি ভরে মায়ের কাছে প্রার্থনা করলে সেই ইচ্ছা পূর্ণ হবেই। এই বিশ্বাস থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন সারা বছরই ভিড় জমান ঝাড়খণ্ডের এই দেবী মন্দিরে। হিন্দু ধর্মে (Hindu) তিনি মহাশক্তি নামে পরিচিত।

ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) রামগড় জেলার রাজরাপ্পায় দেবী ছিন্নমস্তার এই মন্দির। কথিত আছে, এই মন্দির ৬ হাজার বছরের প্রাচীন। ছিন্নমস্তার নানা কাহিনি আছে। সবচেয়ে পৌরাণিক কাহিনিটি খানিকটা এরকম – দেবী তাঁর দুই সঙ্গী ডাকিনী এবং শাকিনীকে নিয়ে মন্দাকিনী নদীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন। স্নানরত অবস্থায় দেবীর সঙ্গীরা ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন। খাবারের জন্য দেবীর কাছে অনুরোধ জানান। তখন দেবী তাঁদের অপেক্ষা করার কথা বলেন। কিন্তু খিদের জ্বালায় ছটফট করতে থাকেন দেবীর দুই সঙ্গী। ওই সঙ্গীরা দেবীকে বলেন, “যদি কোনও সন্তান ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ে তখন মা তাঁর সমস্ত কাজ ভুলে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেন। আপনিও তো মা। তাহলে আপনি কেন আমাদের খিদে মেটাচ্ছেন না?” এরপরই দেবী ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে নিজের মাথাই কেটে নেন। রক্তের ধারাকে তিন ভাগে বিভক্ত করেন। রক্তের দুই ধারা দেবী তাঁর সঙ্গীদের দিকে প্রবাহিত করেন। তৃতীয় ধারা থেকে নিজের ক্ষুধা মেটান। এই ঘটনা থেকেই নাকি দেবীর এই রূপ ছিন্নমস্তা নামে পরিচিত। রাজরাপ্পা মন্দিরে দেবীর এই রূপ বিরাজমান আছে। যা সহজে দেখা মেলে না।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘খুন করতেই পারে না আরিফ’, যাদবপুর ছাত্রমৃত্যুতে ভাই গ্রেপ্তার হতেই কলকাতায় কাশ্মীরের মারুফ]

এই মন্দির নির্মাণ নিয়ে নানা কথা প্রচলিত রয়েছে। কেউ বলেন, বিশ্বকর্মা পাথর দিয়েই মন্দির নির্মাণ করেছেন। আবার কারও মতে, মহাভারতের (Mahabharat) সময়কালে এই মন্দির নির্মাণ হয়। বর্তমানে নতুনভাবে তৈরি হয়েছে এই মন্দির। কিন্তু দেবীর মূর্তি প্রাচীন সময়কাল থেকে আজও স্বমহিমায় স্থাপিত আছেন। এই মন্দিরের প্রধান তোরণদ্বার পূর্বমুখী। যেহেতু অসমের (Asam) পর এই মন্দিরটি তন্ত্র সাধনার অন্যতম পীঠস্থান। তাই এই বর্তমান মন্দিরটিকে নির্মাণের সময় তান্ত্রিক শৈলীকে মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়। ফি দিন এই মন্দিরে হয় বলিদান। বলির পর সঙ্গে সঙ্গে জল দিয়ে ধুয়ে দেওয়া হয়। ভক্তরা মনস্কামনা পূরণের জন্য মায়ের কাছে প্রার্থনা করে। লাল কাপড়ে পাথর জড়িয়ে শিলাখণ্ডে বেঁধে রাখেন। সেই ইচ্ছা পূরণ হলে সেই পাথর লাগোয়া দামোদর নদে ভাসিয়ে দেন। মন্দির ছুঁয়ে রয়েছে ভৈরবী নদী। পাশেই দামোদর এবং ভৈরবী নদীর মিলনস্থল।

ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

দেবী ছিন্নমস্তা কিন্তু বাড়িতে পূজা পান না। তাঁর অধিষ্ঠান মন্দিরে (Temple)। যেহেতু মা ছিন্নমস্তা এক সংহাররূপিণী, প্রলয়ংকরী, তাই বাড়িতে তাঁর পূজা করা বা দেবীর দর্শনের পরিণাম ভয়াবহ। তাই তান্ত্রিক, যোগীপুরুষ এবং সন্ন্যাসীরা মন্দিরে পূজা করেন। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও মা ছিন্নমস্তা পূজা পান। বাংলার বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর শহরের বীরভানপুরে আছে এই দেবীর মন্দির। তবে রাজরাপ্পার মন্দির সবচেয়ে বেশি জাগ্রত।

ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

কখন খোলে মন্দিরের দরজা, কীভাবে চলে পূজা পাঠ? মন্দিরের সচিব শুভাশিস পাণ্ডা জানালেন, ভোর চারটের সময় এই মন্দিরের দরজা খুলে যায়। তাকে ‘ব্রহ্ম মুহূর্ত’ বলা হয়। মাকে স্নান করে পুজো দেওয়া হয়। হয় মঙ্গল আরতি। ভোরের এই পুজোয় কাজু, কিসমিস, পেড়া ও পঞ্চ মেওয়া দেওয়া হয়ে থাকে। বেলা ১২ টার সময় অন্ন ভোগে থাকে পায়েস। বেলা পাঁচটা থেকে ছ’টা মায়ের শৃঙ্গার ও আরতি হয়। অর্থাৎ মাকে সাজিয়ে তোলা হয়। এই সময়ে মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে। তারপর সন্ধ্যা ছ’টার পর দরজা খোলে। সন্ধ্যা আরতির সময় মাকে সুজি, লাড্ডু বা হালুয়া দেওয়া হয়ে থাকে। এরপর মাকে সবাই দর্শন করতে পারেন। সন্ধ্যা সাতটায় মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়।

ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

মন্দিরের কর্মী কার্তিক মাহাতো জানান, ফি দিন মায়ের অন্ন ভোগ দেওয়ার পর বেলা ১২ টা ১৫ থেকে ভাণ্ডারা চলে মন্দির চত্বরে। ভাণ্ডারায় থাকে পাঁচমেশালি সবজি দিয়ে খিচুড়ি। যতক্ষণ না পর্যন্ত শেষ হয় তা চলতেই থাকে। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫০ জনের পাত পড়ে। বিশেষ ভাণ্ডারায় লুচি, তরকারিও থাকে। সেই সময় হাজার ভক্ত পাত পেড়ে খান। মায়ের অন্ন ভোগ পায়েস নিতেও বেলা ১২ টার পর লাইন পরে।

[আরও পড়ুন: যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যু: ‘পরনে গামছা, রক্তাক্ত অবস্থায় নিয়ে এসেছিল,’ বিস্ফোরক সেই ট্যাক্সি চালক]

মায়ের মন্দিরের পাশেই শিব মন্দিরে রয়েছে ১৫ ফুট উঁচু শিবলিঙ্গ। ভৈরবী নদীতে স্নান করে মহাদেবের মাথায় জল ঢেলে ভক্তরা মা ছিন্নমস্তার পুজো করেন। শ্রাবণ মাসেও এখানে ভক্তদের ঢল নামে। কীভাবে যাবেন রাজরাপ্পা? রাঁচি বিমানবন্দর থেকে কম-বেশি ৭০ কিলোমিটার। এখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া যায়। এছাড়া রাজরাপ্পা যাওয়ার বাসও রয়েছে। ট্রেনে গেলে রামগড় স্টেশনেও নামা যায়। ওই স্টেশন থেকে মন্দির প্রায় ২৮ কিলোমিটার। মন্দিরে যাওয়ার জন্য বাস বা ছোট গাড়িও রয়েছে। কোন সময়ে যাবেন? বছরের যে কোন সময় এই মন্দিরে যাওয়া যেতে পারে। তবে মঙ্গল ও শনিবার সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়। এছাড়া ভিড় হয় শ্রাবণ মাস-সহ দুর্গাপূজা ও কালীপূজাতে।

দেখুন ভিডিও: 

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement