Advertisement
Advertisement

Breaking News

These offerings in Kali Puja will stun you

Kali Puja 2022: দেবী নিজে পান না করলেও কালীপুজোয় কেন কাজে লাগে মদ?

কারণ হিসাবে রয়েছে নানা ব্যাখ্যা।

These offerings in Kali Puja will stun you । Sangbad Pratidin
Published by: Sayani Sen
  • Posted:October 22, 2022 5:01 pm
  • Updated:October 22, 2022 5:01 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভাল করে একটু ভাবুন তো, মা কালীকে কখনও মদ খেতে দেখেছেন? মানে, কালীর যে রূপবর্ণনা পাওয়া যায়, তার কোথাও কি মদ্যপানের উল্লেখ আছে? শাস্ত্র কিন্তু কখনই কালীপুজোয় সরাসরি মদ খাওয়ার কথা বলেনি! এমনকী, কালী মদ খাচ্ছেন, এই উল্লেখও কম! তাহলে কালীপুজোয় মদ বা কারণবারি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৈবেদ্য হিসেবে আসছে কোথা থেকে?

Kali Puja

Advertisement

সপ্তদশ শতকের বাশোলি চিত্রে সুরাকুম্ভ হাতে কালী এবং সুরাপানরতা সিদ্ধলক্ষ্মী খুঁজে বের করাটা মুশকিল হবে! শক্তিদেবীর মধ্যে একমাত্র মদ খাওয়ার কথা জানা যায় দুর্গার ক্ষেত্রে। শ্রীশ্রীচণ্ডী বলছে সে কথা। যুদ্ধে মহিষাসুর অহঙ্কারে মত্ত হয়ে প্রবল গর্জন করলে দুর্গা বলেছিলেন, “গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম্যহম/ময়া ত্বয়ি হতেঽত্রৈব গর্জিষ্যন্ত্যাশু দেবতাঃ।“ অর্থাৎ, “রে মূঢ়, যতক্ষণ আমি মধুপান করি, ততক্ষণ তুই গর্জন করে নে। আমি তোকে বধ করলেই দেবতারা এখানে শীঘ্রই গর্জন করবেন!” মধু কিন্তু এখানে মোটেও নিরীহ পানীয় নয়। সংস্কৃতে মদের একটি প্রতিশব্দ মধু। আবার, বেশ কিছু পুরনো পটচিত্রে দেখা যায়, দেবী সিদ্ধলক্ষ্মীও সুরাপান করছেন! কিন্তু কালী? নৈব নৈব চ! ব্রহ্মযামল তন্ত্র বলে, কালী এই বঙ্গদেশের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এখন বঙ্গে কালীর যে রূপটি সর্বাধিক পূজ্যা, সেই দক্ষিণাকালী বা শ্যামাকালীর রূপবর্ণনা কীরকম? এই দেবী কী পান করতে অভ্যস্ত?

[আরও পড়ুন: জানেন, ভূত চতুর্দশীতে কেন চোদ্দ শাক খেতে ও বাড়িতে ১৪ প্রদীপ জ্বালাতে হয়?]

দক্ষিণাকালী করালবদনা, ঘোরা, মুক্তকেশী, চতুর্ভুজা এবং মুণ্ডমালাবিভূষিতা। তাঁর দুই বাম হস্তে সদ্যছিন্ন নরমুণ্ড ও খড়্গ থাকে, দুই ডান হাতে থাকে বর ও অভয় মুদ্রা। তাঁর গায়ের রং মহামেঘের মতো ঘন নীল, তিনি দিগম্বরী। তাঁর গলায় মুণ্ডমালার হার, দুই শব তাঁর কানের গয়না, কোমরে নরহস্তের কটিবাস। তাঁর দন্ত ভয়ানক, তাঁর স্তনযুগল উন্নত, তিনি ত্রিনয়নী এবং শিবের বুকে দণ্ডায়মানা। তাঁর দক্ষিণপদ শিবের বক্ষে স্থাপিত। তিনি মহাভীমা, হাস্যযুক্তা ও মুহুর্মুহু রক্তপানকারিণী। আবার, সিদ্ধকালী আদপেই রক্তপান করেন না। খড়্গ দিযে সিদ্ধকালী আঘাত হানেন চাঁদে। সেই চাঁদ থেকে নিঃসৃত অমৃত পানে তুষ্ট হন এই দেবী। অন্য দিকে, চণ্ড-মুণ্ড বধের সময় দেবী কৌষিকীর ভ্রুকুটিকুটিল ললাটদেশ থেকে উৎপন্না হয়েছিলেন যে কালিকা, পরে যিনি সমাখ্যাতা হবেন চামুণ্ডা রূপে- এষা কালী সমাখ্যাতা চামুণ্ডা ইতি কথ্যতে, তিনিও পান করেন কেবল রক্তই! যুদ্ধে তিনি রক্তবীজ-সহ অনেক অসুরবীরেরই রুধির পান করে তাদের বলহীন করে তুলেছিলেন! তাহলে কালীপুজোয় মদ বা কারণবারি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৈবেদ্য হিসেবে আসছে কোথা থেকে?

KALI-PUJA

একবার দৃষ্টি নিবদ্ধ করা যেতে পারে শ্মশানকালীর রূপবর্ণনায়। তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ রচিত বৃহৎ তন্ত্রসার অনুসারে এই দেবীর ধ্যানসম্মত মূর্তিটি হল শ্মশানকালী দেবীর গায়ের রং কাজলের মতো কালো। তিনি সর্বদা শ্মশানে বাস করেন। তাঁর চোখদুটি রক্তপিঙ্গল বর্ণের। চুলগুলি আলুলায়িত, দেহটি শুকনো ও ভয়ংকর, বাঁ-হাতে মদ ও মাংসে ভরা পানপাত্র, ডান হাতে সদ্য কাটা মানুষের মাথা। দেবী হাস্যমুখে নরমাংস খাচ্ছেন। তাঁর গায়ে নানারকম অলংকার থাকলেও তিনি উলঙ্গ এবং মদ্যপান করে উন্মত্ত হয়ে উঠেছেন। বঙ্গে যে আটটি রূপে কালীকে উপাসনা করা হয়, তার মধ্যে একমাত্র শ্মশানকালীকেই দেখা গেল মদপানে। কিন্তু, এখানেও খটকা তৈরি হয়। কেন না, দেবীর নামের সঙ্গে জুড়ে থাকা বিশেষণটিই বলে দিচ্ছে, ইনি গৃহস্থের উপাস্যা নন! এঁর পূজা কট্টর ভাবেই শ্মশানে প্রশস্ত।

তাহলে গৃহস্থের বাড়ির কালীপুজোতেও কারণবারির চল কীভাবে হল? সেই রহস্যভেদে সবার প্রথমে এগোনো যেতে পারে ইতিহাসের পথ ধরে। এবং, শরণ নেওয়া যাক দেবী চামুণ্ডার। রামকৃষ্ণ ভাণ্ডারকরের মতে, চামুণ্ডা প্রকৃতপক্ষে মধ্যভারতের বিন্ধ্য অঞ্চলের অরণ্যচারী উপজাতি সমাজে পূজিত দেবী। এই সকল উপজাতিগুলির মধ্যে চামুণ্ডার উদ্দেশে পশু ও নরবলি প্রদান এবং মদ উৎসর্গের প্রথা বিদ্যমান ছিল। হিন্দু দেবমণ্ডলীতে স্থানলাভের পরেও চামুণ্ডার তান্ত্রিক উপাসনায় এই সকল প্রথা থেকেই যায়। শুধু এ মত অবলম্বন করেই ক্ষান্ত থাকা যাবে না। কেন না, তন্ত্র মদকে ব্যাখ্যা করেছে অতীব গূঢ় এক রহস্যরূপে। মদ-সহকারে যে তন্ত্রসিদ্ধ পূজাপদ্ধতি বঙ্গের বুকে প্রবর্তন করেছিলেন ঋষি বশিষ্ঠ। জনশ্রুতি বলে, একদা বশিষ্ঠ হাজার হাজার বছর তপস্যা করেও সিদ্ধি অর্জন করতে পারছিলেন না। তখন তিনি বিষ্ণুর নির্দেশে রওনা দেন চিনদেশে। দেবী তারার উপাসনাপদ্ধতি আয়ত্ত করার জন্য। চিনে গিয়ে বশিষ্ঠ দেখেন, সেখানে পঞ্চ ম কার অর্থাৎ মদ্য-মাংস-মৎস্য-মুদ্রা-মৈথুন সহকারে তন্ত্রমতে দেবী আরাধনা করা হয়। সেই সাধনপদ্ধতিই বশিষ্ঠ নিয়ে আসেন বঙ্গে।

Know interesting facts of Barasat's Kali Puja

পণ্ডিতদের বক্তব্য, বৈষ্ণবদের পঞ্চগব্য অর্থাৎ দধি-দুগ্ধ-ঘৃত-গোমূত্র-গোময়ের ঠিক বিপরীতে দাঁড়িয়ে রয়েছে শাক্তদের মদ্য-মাংস-মৎস্য-মুদ্রা-মৈথুন। নিরীহ বৈষ্ণব পূজাপদ্ধতি অস্বীকার করার জন্যই এই উগ্র সাধনপন্থা অবলম্বন। কিন্তু, তাতেও কারণবারির রহস্য পুরোপুরি ভেদ হয় না। তন্ত্র আসলে মদের আড়ালে অন্য অর্থ লুকিয়ে রাখে উপচার ব্যবহারে। লোকনাথ বসু তাঁর হিন্দুধর্ম মর্ম গ্রন্থে লিখছেন, পঞ্চ ম কারের প্রথমটি অর্থাৎ মদ কেবল এক পানীয় নয়। তা আসলে ব্রহ্মরন্ধ্র থেকে ক্ষরিত অমৃতধারা বা সাক্ষাৎ আনন্দ। তন্ত্রসাধনার মাধ্যমে কুলকুণ্ডলিনী জাগ্রত হলে খুলে যায় মস্তিষ্কের উপরিতল বা ব্রহ্মরন্ধ্র। তখন যে আনন্দধারা প্রবহমান হয়, তাই আসলে মদ্য বা কারণ! আবার সাধকজীবন ও দশমহাবিদ্যা গ্রন্থে তারাপ্রণব ব্রহ্মচারীর মত, ‘মা মা’ বলতে বলতে যখন ভক্তি নেশার মতো থিতু হবে অন্তরে, তখন সেই মাদকতাকেই বলতে হবে মদ্য! কালিকা উপনিষদও মদ্য বা কারণবারির এই অন্তর্নিহিত অর্থের দিকেই জোর দিয়েছে। তার নবম শ্লোকে বলা হয়েছে, পঞ্চমকারের বেদসম্মত আধ্যাত্মিক অর্থ বুঝে যিনি দেবীরর পূজা করবেন, তিনিই সতত ভজনশীল, তিনিই ভক্ত। তাঁর প্রচ্ছন্নতা দূর হয়ে মহত্ব প্রকাশিত হয়। তিনি নিরবিচ্ছিন্ন সুখ শান্তি লাভ করে সংসারপাশ থেকে চিরমুক্ত হন। সিদ্ধমন্ত্রজপকারী সাধকের অনিমাদি অষ্টসিদ্ধি লাভ হয়। তিনি জীবন্মুক্ত, সর্বশাস্ত্রবিদ হন। তাঁর হিংসাবৃত্তি বিনষ্ট হওয়ায় তিনি সকল জীবের বিশ্বাসভাজন হন।

কিন্তু, সাধারণ মানুষ মদ্যের এই গূঢ় অর্থ ভুলেছে। বঙ্গে তন্ত্রমতে কালী উপাসনা জনপ্রিয় হওয়ায় একসময় পঞ্চ ম কার-কে কেবল বহিরঙ্গেই ব্যবহার করতে থাকে সুবিধাবাদী শাসকশ্রেণি। সে চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের সময়ের কথা। তখন মদ মানে উল্লাস, মাংসে-মৎস্যে ভোজন, মুদ্রা মানে যৌনসুখের আসন এবং মৈথুন বলপূর্বক শরীরসম্ভোগ! শান্ত বাঙালি চৈতন্যদেবের প্রভাবে এবং ইংরেজ শাসনের নৈতিকতার জেরে যৌনাচারের দিকটি পরে এড়িয়ে গেল ঠিকই, কিন্তু জিভে লেগে রইল মাংস আর মৎস্যের স্বাদ। আর, মাথায় রইল মদের আচ্ছন্নতা। প্রতি বছর কালীপুজোর রাতে যা তুঙ্গে ওঠে। ঠিক বাল্মীকি প্রতিভার ডাকাতরা যা বলেছে- “আজ রাতে ধুম হবে ভারি, নিয়ে আয় কারণ বারি, জ্বেলে দে মশালগুলো, মনের মতন পুজো দেব- নেচে নেচে ঘুরে ঘুরে!”কিন্তু, মা কি ভক্তের এই বিস্মৃতিতে আদৌ প্রসন্ন হন? সন্দেহ আছে!

Kali-Puja

[আরও পড়ুন: কালীপুজো না করেও কীভাবে তুষ্ট করবেন দেবীকে? জেনে নিন উপায়]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement