Advertisement
Advertisement

Breaking News

Shivling

দিনে তিনবার বদলে যায় শিবলিঙ্গের রং, এই মন্দিরে বিফলে যায় না কোনও মানত

জনশ্রুতি, শিবলিঙ্গটি দ্বাপর যুগের।

The color of the Shivling changes three times a day
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:February 22, 2025 2:49 pm
  • Updated:February 22, 2025 2:49 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আমরা আবুপাহাড়ের অচলগড়ের অচলেশ্বর মহাদেবের কথা শুনেছি। যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অজস্র কিংবদন্তি। অনুরূপ ভাবে ভারতে আর এক প্রসিদ্ধ অচলেশ্বর মহাদেবের কথাও শোনা যায়। মধ্যপ্রদেশের সীমানা বরাবর রাজস্থানের ধৌলপুর জেলায় এই অচলেশ্বর মহাদেবের মন্দিরের অবস্থান। এখানে ভগবানের লিঙ্গের বিশেষ আশ্চর্য ঘটনা হল- তিনি দিনে তিনবার ভক্তদের আলাদা আলাদা রূপে দর্শন দিয়ে থাকেন।

জনশ্রুতি, শিবলিঙ্গটি দ্বাপর যুগের। পুরাণ অনুসারে এখানে পূর্বে কালীয়াবল অসুরের বাস ছিল। স্থানটিকে জরাসন্ধ ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের স্মৃতি বিজড়িতও বলা হয়। পুরাতত্ত্ব মতে এই শিবলিঙ্গের নীচের শেষ জানা যায় না। অচলেশ্বর শিবলিঙ্গের ব্যাপারে আরও কিংবদন্তী যে, দেবতার স্থানে বিবাহের করা মানত কখনও বিফলে যায় না। এরকম কল্যাণকারী ভগবান শিবের ঈশ্বরীয় চমৎকারিত্বের শেষ নেই। পরম আমাদের এই পুণ্যভূমি ভারতবর্ষে ভগবান শিবের অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত মন্দির রয়েছে। তারই একটি রাজস্থানের ধৌলপুরে অবস্থিত অচলেশ্বর মহাদেব মন্দির। এই মন্দিরে লিঙ্গরূপ ভগবান অচলেশ্বর মহাদেব বিরাজ করছেন। তিনি দিনে তিনবার ভক্তদেরকে আলাদা আলাদা রূপে দর্শন দিয়ে থাকেন।

Advertisement

সূর্যের প্রথম কিরণের সঙ্গে সঙ্গে শিবলিঙ্গের রং লাল দেখায়। দুপুরের পর ভগবান জাফরানি বা কেশর রঙের হয়ে যান। আর বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা যত নামতে থাকে শিবলিঙ্গের রং তত শ্যামল হতে হতে কালো-শ্যামল বরণ ধারণ করে। ভগবানের এই রূপ বদলের পিছনে কী যে কারণ রয়েছে, আজও তা জানা যায়নি। কেউই বলতে পারে না এমনটি কেন হয়। পুরাতত্ত্ব বিজ্ঞানীরাও এ ব্যাপারে নিরুত্তর। ধৌলপুর জেলা রাজস্থানে মধ্যপ্রদেশের সীমানার বরাবর অবস্থিত।

এই এলাকা কুখ্যাত চম্বলের দুর্গম-বিহোড় এলাকা বলে খ্যাত। আগে এখানে পথ বলে সেরকম কিছু ছিল না। এবড়ো খেবড়ো বড় বড় পাথরে সাবধানে পা ফেলে ফেলে কোনওরকমে এগিয়ে যেতে হতো। এই স্থানে সাধারণ লোকজনের থেকে তস্কর, দস্যু, জংলি-জানোয়ার এবং বিষধর সাপেদের উৎপাত ছিল বেশি। যার কারণে, আগে এখানে শিব ভক্তদের কাউকেই বিশেষ যেতে দেখা যেত না। কিন্তু যখনই এই শিবলিঙ্গের আশ্চর্য মহিমার কথা মানুষের কানে পৌঁছাল, তখন থেকে তারা এখানে এসে ভিড় জমাতে থাকল। এই দুর্গম-বিহোড় এলাকাতেই ভগবান অচলেশ্বর বিরাজমান। জায়গাটি বর্তমানে চম্বল রোডে পড়ে। এখনও জায়গাটি জঙ্গলাকীর্ণ। তবে বর্তমানে পথ ঘাটের অনেক উন্নতি হয়েছে। মোটর বাস দ্বারা কাছাকাছি ধৌলপুর রেলস্টেশনের সঙ্গে সংযোগ ঘটেছে।

পণ্ডিত ও পূজারির মতে এই রং বদল হবার কারণেই বিশবলিঙ্গের অচলেশ্বর মহাদেব নাম হয়ে থাকবে। অনুমান করা হয়, মন্দিরটি হাজার বছরেরও বেশি পুরানো। জনশ্রুতি, শিবলিঙ্গটি দ্বাপর যুগের। তবে এই শিবলিঙ্গ এখানে কীভাবে এল বা কে এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা আজও পর্যন্ত রহস্যে ঢাকা। কেউই জানে না সে রহস্য। জায়গাটির মহিমার ব্যাপারে বলতে গিয়ে পূজারি জানালেন, সেই যুগে এই এলাকা ছিল মুনি-ঋষিদের তপস্থলী। তার অনেক পরে তপস্থলী বদলে গিয়ে যৌলগড়ী নগরী রূপে আত্মপ্রকাশ করে। আবার তার বহুকাল পরে নগরী ধ্বংস হয়। তার উপর জঙ্গল ঢেকে যায়। অচলগড়ের মহাদেব সব কিছুর একাই সাক্ষী। পুরাণ অনুসারে জায়গাটিতে কালীয়াবল অসুরের দাপট ছিল। এই স্থানটিকে জরাসন্ধ ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের স্মৃতি বিজড়িত স্থানও বলা হয়।

ধৌলপুরের এই শিবলিঙ্গের ব্যাপারে আর একটি অত্যাশ্চর্য মহত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। এই শিবলিঙ্গের নীচের দিকে শেষ কোথায় তার হদিশ কেউই দিতে পারে না। বিষয়টি জানবার বাসনায় ইতিপূর্বে অনেকবার শিবলিঙ্গের গোড়ায় নীচের দিকে মাটি খুঁড়ে দেখা হয়েছে। অনেক গভীর পর্যন্তই খনন করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুতেই এর মূলে পৌঁছানো যায়নি। শেষে ‘ভগবানের চমৎকার’ ভেবে খনন কাজের ইতি দেওয়া হয়েছে।
এই অচলেশ্বর শিবলিঙ্গের গড়নটিও বেশ অদ্ভুত। উপরে গোল ও নীচে চতুষ্কোণাকার। শোনা যায় অনেক আগে এই শিবলিঙ্গে সর্প বিজড়িত থাকত। ভক্তদের ভিড় বাড়তে থাকলে ও লোকজনের উৎপাতে সেই দৃশ্য এখন অধরা হয়ে গেছে। অচলেশ্বর ভগবানকে ভক্তগণ জাগ্রত দেবতা জ্ঞানেই ভক্তি শ্রদ্ধা ও পূজার্চনা করেন। সকলে তাঁদের মনোবাসনা জানিয়ে প্রার্থনা করেন। ভগবান সকলের সব মনোবাসনা পূরণ করেও থাকেন। তবে এখানে সকলের দেবতার প্রতি আরেকটা ব্যাপারে অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। অচলেশ্বর মহাদেবের স্থানে বিবাহের জন্য করা মানত কখনো বিফলে যায় না। লোকশ্রুতি, যাদের বিবাহে বার বার বাধা আসে, বা ছাঁদনা-তলায় যাবার আগে যাদের বিবাহের পাকা কথা ভেঙে যায়-এই স্থানে প্রার্থনা করলে ভগবান বিবাহের সব বাধা দূর করে দেন। অবিবাহিত ছেলে মেয়েরা যদি এই শিবলিঙ্গের নিকট তাদের মনোমতো পাত্রপাত্রীর সঙ্গে বিবাহের বর প্রার্থনা করে তবে সেই প্রার্থনা ভগবান অতি শীঘ্র পূরণ করে থাকেন। কারও যদি কখনও ধৌলপুর যাবার সুযোগ ঘটে তবে ভগবান অচলেশ্বর মহাদেবের স্থানে মানত করতে যেন না ভোলেন।

(ঋণ: ভারতের আশ্চর্য শিবলিঙ্গ। শ্রীবশিষ্ঠ। সাধনা)

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
News Hub