অল্পবয়সী মেয়েদের সাজানো হয়েছে রাধাকৃষ্ণ
বিপ্লব চন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: প্রাচীনকাল থেকে রাধাকৃষ্ণের নামেই খ্যাত ঝুলন উৎসব। বিভিন্ন জায়গাতেই মহাসমারোহে এই উৎসব পালন করা হয়। কিন্তু, অন্য জায়গার তুলনায় শান্তিপুরের ঝুলন উৎসব একটু অন্যরকম। মাটি বা কাঠের মূর্তির পরিবর্তে এখানে দোলনায় বসিয়ে পুজো করা হয় জীবন্ত রাধাকৃষ্ণকে। মানে এলাকার অল্পবয়সী মেয়েদের রাধাকৃষ্ণ সাজিয়ে করা হয় এই ঝুলন উৎসব। তাই, এই ঝুলনের নাম মানুষ ঝুলন।
বহুদিন ধরেই এই উৎসব অদ্বৈতভূমি নদিয়ার শান্তিপুরের একটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। রাখি পূর্ণিমায় শুরু হয়ে দু’দিন ধরে চলে এই মানুষ ঝুলন। বছরের একাধিক পালাপার্বণ হলেও নদিয়া জেলার শান্তিপুর ও ফুলিয়ার একটি অন্যতম বড় উৎসব হিসেবেই এটি পরিচিত। বিভিন্ন বনেদী বাড়ির ঝুলনের পাশাপাশি মানুষ ঝুলনের প্রথা একসময় এখানকার ঝুলন উৎসবের আকর্ষণকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছিল। যদিও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ঝুলনের উৎসাহ এখন অনেকটাই কমে এসেছে। তবে পুরনো এই প্রথা এখনও টিকে রয়েছে কয়েকটি জায়গায়। কালের নিয়মে সাধারণ মানুষের উৎসাহ অনেকটাই কমে এলেও পুরনো সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে মরিয়া এখনও অনেকেই। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যদিও এবার বৃষ্টির জন্য কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবু অনেক জায়গায় ঝুলনে ঝুলছে রাধাকৃষ্ণরুপী মানুষ। ফুল ও বিভিন্ন রকম বাহারি পাতার সাজে সাজানো হয়েছে তাদের।
গ্রাম বাংলার বারো মাসে তেরো পার্বণের মতো মানুষ ঝুলন এখানকার একটি পুরনো ঐতিহ্য। একসময় মানুষের মধ্যে এই উৎসব নিয়ে প্রচণ্ড উৎসাহও ছিল। অল্পবয়সী মেয়েদের রাধাকৃষ্ণ সাজানোর পাশাপাশি পৌরাণিক নানা কাহিনির ছবিও ফুটিয়ে তোলা হত। অদ্ভুত এই ঝুলন দেখতে ভিড় করতেন প্রচুর মানুষ। শান্তিপুরের লক্ষীতলা পাড়া, সাহাপাড়া, তিলিপাড়া ও বৈষ্ণবপাড়ার মতো বিভিন্ন জায়গায় এই ঝুলন হত। পুরনো ঐতিহ্য মেনে বৈষ্ণব পাড়া বারোয়ারির পক্ষ থেকে এবারও করা হয়েছে মানুষ ঝুলনের আয়োজন। সঙ্গে রাধাকৃষ্ণকে খুশি করতে চলছে নানা অনুষ্ঠান। তবে সাধারণ মানুষের উৎসাহে ভাটা পড়েছে অনেকটাই।
এপ্রসঙ্গে শান্তিপুরের প্রবীণ মানুষরা জানান, মানুষ ঝুলন শান্তিপুরের একটি পুরনো ঐতিহ্য হলেও ইদানিংকালে এই নিয়ে আগ্রহ অনেকটাই কমে এসেছে। মূলত রাতের দিকে এই ঝুলন হয়। আর এই সময় প্রায়ই ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে মানুষ ও উদ্যোক্তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। এর জন্য আগে যাঁরা মানুষ ঝুলনের উদ্যোগ নিতেন, তাঁরা অনেকেই আগ্রহ হারিয়েছেন। এছাড়া আর্থিক কারণ তো একটা আছেই। মূলত পাড়ার কিছু মানুষের আর্থিক সাহায্য ও উদ্যোগে মানুষ ঝুলনের আয়োজন করা হয়ে থাকে। কিন্তু শান্তিপুরের ঐতিহ্যবাহী রাস, দুর্গাপুজো ও কালীপুজো-সহ একাধিক উৎসবের কারণে সাধারণ মানুষের উৎসাহে কিছুটা ভাঁটার টান পড়েছে। যদিও শান্তিপুরের নানা বিগ্রহ বাড়িতে এখনও ঝুলন উৎসবের খামতি এতটুকুও নেই।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.