ধীমান রায়, কাটোয়া: সাপ দেখে ভয় পান না, এমন মানুষ প্রায় নেই বললেই চলে৷ কিন্তু পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট ও ভাতারের ছবি একেবারেই আলাদা৷ জ্যান্ত কেউটে সাপকেই দেবী জ্ঞানে পুজো করা হয় এখানে। কেউটে প্রজাতির বিরল ওই সাপকে ঝঙ্কেশ্বরী বা ঝাঁকলাই নামে সম্বোধন করেন গ্রামবাসীরা। বস্তুত এই সাপের সঙ্গেই ঘর করেন গ্রামবাসীরা৷
প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের শুক্ল প্রতিপদ তিথিতে পুজো হয় ঝাঁকলাই বা ঝঙ্কেশ্বরী দেবীর। শনিবার থেকে ঝাঁকলাই পুজো ঘিরে মেতে উঠেছেন এলাকাবাসী। মঙ্গলকোটের মুশারু, পলসোনা, ছোটপোশলা ও নিগন এবং ভাতারের বড়পোশলা, মুকুন্দপুর এবং শিকোত্তর এই সাতটি গ্রামে ঝঙ্কেশ্বরী দেবীর পুজো হয়। ঝঙ্কেশ্বরী আদপে কেউটে প্রজাতির সাপ। গায়ের রং লালচে কালো। তবে সাতটি গ্রামে পুজো হলেও বর্তমানে এই সাপের দেখা মেলে ভাতারের বড়পোশলা ও মঙ্গলকোটের নিগন ছাড়া বাকি সব গ্রামে।
প্রতিবছর শ্রাবণ মাসে ওই গ্রামগুলিতে ঝাঁকলাই পুজো ঘিরে প্রচুর ধুমধাম হয়। শুধুমাত্র স্থানীয় এলাকা থেকেই নয়, ভি্ন জেলা থেকেও বহু মানুষ পুজো দেখতে যান। গ্রামে গ্রামে মেলা বসে। তিন চারদিন ধরে অনুষ্ঠান চলে। বহিরাগত পুন্যার্থীরা জ্যান্ত দেবীকে দর্শনের জন্য ভিড় জমান। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ঝাঁকলাই দেবীর কারণে অন্য কোনও বিষাক্ত সাপ গ্রামে ঘেঁষতে পারে না।
সারাবছরই দেখা মেলে ঝাঁকলাই সাপের। তবে এই সাপ সচরাচর কামড়ায় না বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। কামড়ালেও কেউ হাসপাতালমুখো হন না। কথিত আছে, ঝঙ্কেশ্বরী দেবীর মন্দিরের মাটি ক্ষতস্থানে লেপে দিয়ে মন্দিরের পাশে বিষ পুকুরে স্নান করলেই বিষমুক্ত হয়ে যাওয়া যায়। এটিকে দেবীর আর্শীর্বাদ বলেই আজও বিশ্বাস করেন গ্রামবাসীরা।
তবে সর্প বিশারদ ধীমান ভট্টাচার্যের যুক্তি, আসলে মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকে ঝাঁকলাই। সেই জন্য সাপটি কাউকে আক্রমণ করে না। যদিও কখনও আঘাত পেয়ে কামড়ায় সেক্ষেত্রে বেশি বিষ ঢালে না। তাই বিষের মাত্রা কম হয়। এছাড়া কেউটে প্রজাতির সাপ হলেও ঝাঁকলাই বিষ ছিটিয়ে দেয়। তাই শরীরে বিষ কম ঢোকে।
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.