Advertisement
Advertisement

Breaking News

ইসলাম গ্রহণ করেও কেন সাধনা করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ?

মসজিদে যেতেন, নমাজ পড়তেন। এমনকী গোমাংস ভক্ষণেরও ইচ্ছে হয়েছিল ঠাকুরের।

Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:October 18, 2017 5:34 am
  • Updated:July 13, 2018 6:43 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যত মত তত পথ। সব ধর্মের সার কথাটি এমন সহজ করে আর কেউ বলে যেতে পারেননি। যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণ যেন ধর্ম-সমুদ্র মন্থন করেই তুলে দিয়েছিলেন এ অমৃতবাণী। তবে এ শুধুই তাঁর কথার কথা নয়। জীবন দিয়ে উপলব্ধি করা সত্য। সেই সত্যের কাছে পৌঁছাতে বিভিন্ন ধর্মমতে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন ঠাকুর। এমনকী গ্রহণ করেছিলেন ইসলাম ধর্মও।

যিশুর ভজনা ছেড়ে শক্তির সাধনা, সাহেবের পুজোয় মাতোয়ারা হ্যামিলটনগঞ্জ ]

Advertisement

শ্রীরামকৃষ্ণের বিপুল কর্মকাণ্ডের মধ্যে ইসলাম গ্রহণের দিকটি তুলনায় স্বল্পালোচিত। তবে সাধনমার্গের এ পথেও হেঁটেছিলেন ঠাকুর। জানা যায়, ১৮৮৬-৮৭ সাল নাগাদ  ইসলাম সাধনায় মনোনিবেশ করেন ঠাকুর। গুরু হিসেবে বেছে নেন গোবিন্দ রায়কে। নাম শুনে হিন্দু মনে হলেও তিনি ছিলেন ইসলামে দীক্ষীত। তাঁর পূর্বজীবন সম্বন্ধে যা জানা যায়, তাতে তিনি ছিলেন ক্ষত্রিয় সন্তান। পরে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সে ধর্ম গ্রহণ করেন। নাম হয় ওয়াজেদ আলি খান। এই গোবিন্দ রায়ের কাছেই ইসলাম মতে দীক্ষা নেন ঠাকুর। মন্দির চত্বরে তাঁকে দেখেই ঠাকুর মুগ্ধ হন। পরে তাঁর কাছেই দীক্ষা নেন। শিয়া, সুন্নি ও সুফি- মুসলমানদের এই তিন ভাগের মধ্যে গোবিন্দ রায় ছিলেন সুফি মতের সাধক। সুফি মত অনেকটাই হিন্দু বেদান্তের আদর্শের কাছাকাছি। এই মতেই দীক্ষা নেন ঠাকুর, কলমা বা আল্লা ব্যতীত কেউই উপাস্য নেই-এই মন্ত্র গ্রহণ করেন। সেই সময় মন্দিরে পুজার্চনা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এমনকী হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি বা ছবির দিকেও তাকাতেন না। সাধারণ অহিন্দু দর্শনার্থীর মতো মন্দিরের বাইরেই বসবাস করতেন। প্রসঙ্গত, দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের বাইরেই আছে গাজীপীরের স্থান। কথিত আছে এই গাজিপীর স্বপ্নে দর্শন দিয়েছিলেন স্বয়ং রাসমণিকে। পরে রানিমা তাঁর স্থানে বাতি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

[ সতীর পীঠ তমলুকে বর্গভীমা পূজিতা হন দেবী উগ্রতারা রূপে ]

ইসলাম গ্রহণ প্রসঙ্গে কথামৃতে ঠাকুর নিজে জানিয়েছেন, ইসলাম সাধনায় তিনি এতটাই তন্ময় ছিলেন যে, হিন্দু দেবদেবীর দিকে দেখতে মনও চাইত না। সে সময় গোমাংস ভক্ষণেরও সাধ জেগেছিল ঠাকুরের। যদিও রানি রাসমনির জামাই মথুরমোহনের অনুরোধে সে কাজ তিনি করেননি। কিন্তু নিয়মিত নমাজ পড়তেন। মসজিদে যেতেন। কথামৃতকার ঠাকুরের মুখের কথা তুলে ধরেছেন এইভাবে, ‘গোবিন্দ রায়ের কাছে আল্লা মন্ত্র নিলাম। কুঠিতে প্যাঁজ দিয়ে রান্না ভাত হলো। খানিক খেলুম।’ অন্যত্র বলছেন, ‘…বটতলায় ধ্যান করছি, দেখালে একজন দেড়ে মুসলমান সানকি করে ভাত নিয়ে সামনে এলো। সানকি থেকে ম্লেচ্ছদের খাইয়ে আমাকে দুটি দিয়ে গেল। মা দেখালেন, এক বই দুই নাই। সচ্চিদানন্দই নানা রূপ ধরে রয়েছেন। তিনিই জীবজগৎ সমস্তই হয়েছেন। তিনিই অন্ন হয়েছেন।’

ছাগ রক্তেই ‘তুষ্ট’ হন সোনামুখির শতাব্দীপ্রাচীন পায়রা কালী ]

তিনদিন ইসলাম ধর্মে গভীর সাধনা করেন ঠাকুর। সে সময় ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনও চিন্তা তিনি মাথায় রাখেননি। এবং অচিরেই এ পথে সিদ্ধিলাভ করেন। ঠাকুরের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ নিয়ে সাল তারিখের মতভেদ আছে। বিভিন্ন গ্রন্থে আলাদা আলাদা সময়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। বিভিন্ন ঘটনাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা স্মৃতিচারণায়। স্বামী প্রভানন্দের ‘শ্রীরামকৃষ্ণজীবনে ইসলাম’ বইটিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। ঠাকুরের ইসলাম গ্রহণের কথা লিখেছেন স্বামী নির্বেদানন্দও। কথিত আছে, তিনদিনের সাধনার পর, এক সৌম্যদর্শন ফকিরের সঙ্গে দেখা হয় ঠাকুরের। দু’জনেই দু’জনকে দেখে বিভোর হয়ে যান। ঠাকুরের মনে হয় তিনি মহম্মদের দর্শন পেয়েছেন। যাই হোক, এর আগে অদ্বৈতসাধনমার্গে সিদ্ধিলাভ করে যে অনুভূতিতে পৌঁছেছিলেন, ইসলাম গ্রহণ করেও সেই একই অনুভবে পৌঁছান ঠাকুর। এরপর খ্রিস্ট ও বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেও তিনি সিদ্ধিলাভ করেন। সব ধর্মের পথ পরিক্রমায় মেতেছেন বলেই তিনি এক সহজে বলতে পেরেছেন সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথাটি যা সনাতন ভারতের ঐতিহ্য। ঠাকুরের ভারতবর্ষ তাই সেই উদার ও ঐতিহ্যের ভারতবর্ষ। আজ দীবাপলির প্রাক্কালে সেই সমন্বয়ের সাধনাই বোধহয় আমাদের প্রকৃত আলোর সন্ধান দিতে পারবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement