Advertisement
Advertisement

Breaking News

Netaji Subhas Chandra Bose

দক্ষিণেশ্বরই ছিল তাঁর শক্তির উৎস, মাতৃমন্দিরে নিয়মিত যেতেন নেতাজি, গাইতেন মায়ের গান

বিবেকানন্দ ও সুভাষচন্দ্র দুজনেই সন্ন্যাসী এবং সৈনিক - ভিন্ন অর্থে ও প্রেক্ষিতে তাঁরা ভাস্বর।

Netaji Subhas Chandra Bose used to go to Dakshineswar Temple
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:October 25, 2024 3:25 pm
  • Updated:October 26, 2024 4:34 pm  

কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়: বাঙালির আবেগের দিনপঞ্জি শুধু নয়, বিশ্ব ইতিহাসের পাতা ওলটালেও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সম্পর্কে একটি কথাই হয়তো সর্বত্র লেখা থাকবে – তা হল, মানুষটি বিস্ময়কর। সুভাষচন্দ্র বসু থেকে যখন তিনি নেতাজি হয়ে উঠলেন, শুধু দেশ নয়, সারা বিশ্বই বোধহয় বিস্মিত হয়েছিল। পরাধীন ভারতবর্ষের একজন নেতার এই অপরিসীম শক্তির পরিচয় আক্ষরিক ভাবেই অবাক করেছিল পৃথিবীর তাবড় নেতৃবর্গকে। যদি ফিরে দেখতে ইচ্ছে করে, যে, সেই শক্তির উৎস ঠিক কোথায়, তবে আরও একবার বিস্মিতই হতে হয়। দেশের সেবা যাঁর কাছে পুণ্যব্রত, তিনি যে নিজেকে গোড়া থেকেই সেইমতো তৈরি করেছিলেন, তা তো অবধারিত।

উল্লেখ করার বিষয় এই যে, নিজেকে তৈরি করার সেই পর্বে তাঁর আশ্রয় হয়ে উঠেছিল দক্ষিণেশ্বরের মাতৃমন্দির। বলা যায়, দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণীর মন্দির ছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কাছে শক্তির উৎসস্থান। মাঝেমধ্যেই নেতাজি এই দেবালয়ে আসতেন, নৌকো করে বেলুড় মঠে যেতেন গঙ্গা পেরিয়ে। মায়ের গান গাইতে গাইতে। তাঁর সঙ্গে থাকতেন প্রফুল্ল সরকারের মতো বিখ্যাত মানুষেরা।

Advertisement

এ অবশ্য আকস্মিক কোনও সমাপতন নয়। ভারতবর্ষের সশস্ত্র বিপ্লবের ধারাটির দিকে চোখ রাখলেই এই শক্তিসাধনার নতুনতর রূপটি স্পষ্ট হয়। সেদিনের ভারতকে পথ দেখাতে অখণ্ডের ঘর থেকে যে ঋষি নেমে এসেছিলেন, তিনিই স্বামী বিবেকানন্দ। দেবতাদেরও অগম যে সাধনার স্তর, সেখানেই তাঁর অধিষ্ঠান। এ উপলব্ধি ছিল স্বয়ং ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের। বিবেকানন্দ শুধু দেশের আত্মিক উন্নতির চেষ্টাই করেননি, বরং এই দেশে ধর্মাচরণের সংজ্ঞাটিকেই বদলে দিয়েছিলেন। ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে উঠেছিল দেশের মুক্তিসাধনা। তাঁর গুরুর মন্ত্র ছিল, জীব ও শিবে প্রভেদ না-করার। বিবেকানন্দ সেই মন্ত্রটিকে চালিত করলেন দেশের মুক্তি ও স্বাধীনতার লক্ষ্যে। নিবেদিতা হয়ে এই ভাবনা ক্রমশ পুষ্টি জোগাচ্ছিল দেশের সশস্ত্র বিপ্লবকে। যার সার্থক উত্তরসূরি সুভাষচন্দ্র বসু।

বিবেকানন্দ ও সুভাষচন্দ্র – দুজনেই সন্ন্যাসী এবং সৈনিক – ভিন্ন অর্থে ও প্রেক্ষিতে তাঁরা ভাস্বর। ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত-রায় তাঁর ‘ভারতে সশস্ত্র বিপ্লব’ গ্রন্থে তাই খুব যথার্থই লিখছেন ” আদর্শের বিনিময়ে আপোস করার প্রবৃত্তি তাঁর চিত্তকে কোনকালে বিড়ম্বিত করতে পারল না। কারণ, তাকে নিয়ত প্রাণশক্তি দান করতে থাকলেন দূর গগনে দীপ্যমান সূর্যের মতো মহাবীর্যবান অপর এক আপসহীন সংগ্রামী- স্বামী বিবেকানন্দ। …দেশবাসী আজ বিস্ময় ও শ্রদ্ধায় বিশ্বাস করে যে, বিবেকানন্দের সর্বসত্তাই বুঝি সুভাষচন্দ্রের মধ্যে পুনর্জন্ম গ্রহণ করে ভারতবর্ষকে ধন্য করেছে।” দক্ষিণেশ্বরকে আশ্রয় করে সুভাষের এই শক্তি-সন্ধান তাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, ঐতিহাসিক পরম্পরাই।

নেতাজি যেখানেই যেতেন তাঁর সঙ্গে থাকত গীতা, জপের মালা এবং মায়ের পায়ের শুকনো জবাফুল। বুঝতে অসুবিধা হয় না শক্তি সঞ্চয় করতে মায়ের চরণ ছিল নেতাজির প্রিয় জায়গা। যখন চিরতরে তিনি এই দেশ ছাড়বেন, সেই মহানিষ্ক্রমণের আগে দক্ষিণেশ্বরে মায়ের পায়ের ফুল ও চরণামৃত আনতে পাঠিয়েছিলেন দুই খুড়তুতো ভাইজি ইলা এবং বেলাকে। এর এক বা দু’দিন পরেই নেতাজির মহানিষ্ক্রমণ ঘটেছিল। দক্ষিণেশ্বর সর্বধর্ম সমন্বয়ের একটা পীঠস্থান। নেতাজি সব অর্থেই ছিলেন বৈদান্তিক জাতীয়তাবাদে গড়ে ওঠা একজন মানুষ। তিনি শক্তির উপাসনা করতেন স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গেই। তাঁকে যখন কারাগারে বন্দি করে রাখা হত তখন তিনি মা কালীর ধ্যান করতেন। যখন চিঠি লিখতেন সবার উপরে লিখতেন ‘কালী মাতা’।

দক্ষিণেশ্বর ভারতীয় আধ্যাত্মিক সাধনার চার হাজার বছরের সংস্কৃতিকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। নেতাজির মতো দেশনায়ক এই পীঠস্থানে নিয়মিত আসতেন শুধু নয় সেই সাধনার ধারাকে নিজের মধ্যে বহনও করেছিলেন। সারা দেশে তাঁকে নিয়ে অসংখ্য প্রত্যাশার মধ্যে, দেশবাসীকে অবাক করে যাওয়ার আগে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের মায়ের পায়ের ফুল নিয়ে তবেই গিয়েছিলেন। আর তাঁর এই যাওয়া তো যাওয়া নয়, আসলে থেকে যাওয়া। যেভাবে সাধনার ইতিহাসে থেকে যান সন্ন্যাসীগণ। সুভাষ একাধারে সন্ন্যাসী এবং সৈনিক। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং শক্তিসাধনার ইতিহাস- দুই ক্ষেত্রেই তিনি ভাস্বর, প্রণম্য, অবিস্মরণীয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement