বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: নতুন বছর পড়তেই সরস্বতী পুজোর (Saraswati Puja) পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এবছর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহেই মাঘের শুক্লা পঞ্চমী তিথি। গৃহস্থ বাড়ি থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাড়া – সর্বত্রই বিদ্যাদেবীর আরাধনা হয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি পুরোহিতের খানিকটা ঘাটতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। যদিওবা পুরোহিতের সঙ্গে কথা হয়েই যায় আগাম, শেষপর্যন্ত সঠিক সময়ের মধ্যে তিনি আসবেন তো? এই চিন্তা আর দূর হয় না। গত কয়েক বছরে অন্তত এমনই অভিজ্ঞতা আমগৃহস্থের। সেই চিন্তা এবার দূর হতে চলেছে। সৌজন্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুরোহিতরা। তাঁদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যাই বেশি। নদিয়ার (Nadia) বগুলার গৌরহরি মিশন মডার্ন টোলের সদস্য তাঁরা।
সরস্বতী পুজোয় পুরোহিতের ঘাটতি মেটাতে এবার নদিয়ায় শুরু হল বিশেষ ট্রেনিং। ইংরেজি নববর্ষের শুরুতেই পৌরহিত্যের প্রশিক্ষণ (Training) নেওয়ার জন্য এবার নতুন করে ৭০ জনকে দেওয়া হল উপনয়ন। গৌরহরি মিশনের কর্ণধার অভিরাম বিশ্বাস জানিয়েছেন, ”সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অব্রাহ্মণদেরও পৌরহিত্য করার অধিকার রয়েছে। সেই নির্দেশ মেনে আমরা আরও ৭০ জন অব্রাহ্মণকে পৌরহিত্য করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করলাম।”
বগুলা (Bagula) স্টেশন থেকে নেমে মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্ব ঈশ্বর শশধর মল্লিকের বাড়ি। সেই বাড়িই বর্তমানে গৌরহরি মিশন মডার্ন টোলের হেডকোয়ার্টার। ওই টোলের বর্তমানে আরও ৫২টি শাখা রয়েছে। বর্ষবরণের শুরুতেই হেডকোয়ার্টারে সরস্বতী পুজোর কথা মাথায় রেখে প্রশিক্ষণ দেওয়ার নতুন ক্লাস শুরুর আয়োজন করা হয়েছিল। এর আগে ওই মিশন থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে কাননবালাদেবী-সহ বেশ কয়েকজন মহিলা বিভিন্নরকম দেব-দেবীর পুজো করছেন। ওই মিশনের কার্যকরী কমিটির সদস্য মিল্টন বিশ্বাসের কথায়, ”বছরে নির্দিষ্ট দিনে আমরা পৌরহিত্যের প্রশিক্ষণ দেওয়ার শুরু করার আগে উপনয়নের ব্যবস্থা করি। এবার নতুন করে ৭০ জন মহিলা এবং পুরুষকে উপনয়ন দেওয়া হল। তাদের মধ্যে মহিলাদেরই ছিল আধিক্য। বিকল্প পেশা হিসেবে পৌরহিত্যের কাজে উৎসাহিত হচ্ছেন মহিলারা। কোলে বাচ্চা নিয়েও উপনয়ন নিতে এসেছিলেন বেশ কয়েকজন মহিলা। তাঁদের দেখভাল করছিলেন কাননদেবী। তিনি গত দু’বছর ধরে দুর্গাপুজোতেও পৌরহিত্যের ভূমিকা পালন করছেন।”
৭০ জন অব্রাহ্মণদের পৌরহিত্যের প্রশিক্ষণ দেওয়ার শুরুর আগে উপনয়ন (Thread ceremony)দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।ওই মিশনের অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত নলিনী রায় মন্ত্র পাঠ করে উপনয়ন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। চাকদহের নরেন্দ্রপল্লির বাসিন্দা দেবাশিস পাঠকের মাধ্যমে মহিলা এবং পুরুষদের উপনয়ন দেওয়া হয়। এরপর তারা পৌরহিত্যের প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন পুজো মণ্ডপ থেকে শুরু করে বাড়ির পুজোর ক্ষেত্রেও পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করবেন। কেন তাঁরা পৌরহিত্যের প্রশিক্ষণ নিতে উদ্যোগী হয়েছেন, সেই বিষয়ে প্রায় সকলেরই বক্তব্য, ”আমরা পুজো করি বাড়িতে। নিয়মনিষ্ঠা পালন করতে পারি না, না জানার কারণে। তাই আমাদের ইচ্ছে, নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করার। প্রশিক্ষণ নিয়ে অন্তত আমরা বাড়ির পুজোটা নিষ্ঠার সঙ্গে করতে পারব।এরপর যদি পারি, তাহলে পুজো মণ্ডপ শুরু করে অন্যের বাড়িতেও আমরা পৌরহিত্যেরর দায়িত্ব পালন করতে পারব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.