Advertisement
Advertisement
Mahalaya 2024

মহালয়ার ভোরে তর্পণ, আজও নেমে আসে পূর্বপুরুষের আত্মারা?

জেনে নিন মহালয়ার ভোরে তর্পণের মাহাত্ম্য।

Mahalaya 2024: Know The ritual of Tarpan on Pitripaksha
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:September 13, 2024 2:31 pm
  • Updated:September 13, 2024 2:40 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তর্পণ শব্দটির সঙ্গে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। আর মহালয়ার (Mahalaya 2024) দিন প্রচুর মানুষকে গঙ্গাঘাটে তর্পণ করতেও দেখা যায়। প্রাচীনকাল থেকেই এই সময় প্রয়াত পূর্বপুরুষের আত্মা পৃথিবীর খুব কাছে বিরাজ করে বলে বিশ্বাস। তাই এসময় যদি তর্পণ করা হয় তবে উদ্দেশ্য সফল হয় বলে সবাই মনে করেন। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ থেকে পিতৃপক্ষ শুরু হয়। এই একপক্ষকাল, মানে ১৫ দিন পরলোকগত বিদেহী আত্মার স্মরণে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান করেন হিন্দুরা।

জানা যায়, তর্পণ শব্দটি এসেছে ‘ত্রুপ’ থেকে। এর মানে সন্তুষ্ট করা। ভগবান, ঋষি ও পূর্বপুরুষের আত্মার উদ্দেশে জল নিবেদন করে তাঁদের সন্তুষ্ট করাকে তর্পণ বলা হয়। ভগবান ও পূর্বপুরুষের আত্মার নাম উচ্চারণ করে তাঁদের কাছে সুখ-শান্তির প্রার্থনা করা হয়। পিতৃ ও মাতৃ তর্পণের সময় জল, তিল, চন্দন, তুলসীপাতা ও ত্রিপত্রী আর অন্যান্য তর্পণের সময় তিলের পরিবর্তে ধান বা যব ব্যবহার করা হয়। আর চন্দন, তিল ও যব না থাকলে কুরুক্ষেত্র মন্ত্র পাঠের জলে তুলসী পাতা দিয়ে তর্পণ করতে হয়। এর মধ্যে তিল তর্পণ মানে জল ও তিল একসঙ্গে নিয়ে পূর্বপুরুষের আত্মার উদ্দেশে নিবেদন করতে হবে। পিতৃতর্পণের সময় অবশ্যই তিল ব্যবহার করতে হবে। আর তা কালো তিল হতে হবে। তিল না থাকলে শুধু কুরুক্ষেত্র মন্ত্র পাঠের জলে তুলসী পাতা দিয়া তর্পণ করতে হবে। সনাতন ধর্মের ইতিহাস অনুযায়ী, সূর্য কন্যারাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষের সূচনা হয়। মানুষের বিশ্বাস, এসময় পূর্বপুরুষরা পিতৃলোক ছেড়ে করে তাঁদের উত্তরপুরুষদের বাড়িতে অবস্থান করেন। পরে সূর্য বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশ করলে, তাঁরা পুনরায় পিতৃলোকে ফিরে যান। পিতৃগণের অবস্থানের প্রথম পক্ষে তাঁদের উদ্দেশে তর্পণ করতে হয়।

Advertisement

মহালয়া পক্ষের পনেরোটি তিথি আছে। তাদের নাম হল, প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, চতুর্দশী ও অমাবস্যা। সনাতন মতে, যে ব্যক্তি তর্পণে ইচ্ছুক হন, তাঁকে তাঁর পিতার মৃত্যুর তিথিতে তর্পণ করতে হয়। তবে অমাবস্যার দিন তিথি না থাকলেও সব পূর্বপুরুষের শ্রাদ্ধ করা হয়। যাঁরা নির্দিষ্ট দিনে শ্রাদ্ধ করতে ভুলে যান, তাঁরা এই দিন শ্রাদ্ধ করতে পারেন। এই দিন গয়ায় শ্রাদ্ধ করলে তা বিশেষ ফলপ্রসূ হয়। উল্লেখ্য, গয়ায় সমগ্র পিতৃপক্ষ জুড়ে মেলা চলে। আর বাংলায় মহালয়ার দিন দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। বিশ্বাস অনুযায়ী, এইদিন দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে আবির্ভূতা হন। মহালয়ার দিন অতি প্রত্যুষে চণ্ডীপাঠ করার রীতি রয়েছে। আশ্বিন শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে দৌহিত্ররা মাতামহের তর্পণ করেন। পৌরাণিক বিশ্বাস, পিতৃপক্ষের সময় পূর্বপুরুষরা পাখির রূপ ধরে নেমে আসে পৃথিবীতে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের কোনওভাবেই অসন্তুষ্ট করা উচিত নয়। অতঃপর পিতৃপক্ষের এই বিশেষ সময়ে পশু-পাখিদের সেবা করার বিধানও রয়েছে হিন্দুশাস্ত্রে।

মহাভারত অনুযায়ী, কর্ণের মৃত্যু হলে তাঁর আত্মা স্বর্গে গমন করছিল। সেখানে তাঁকে সোনা ও রত্ন খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয়। কর্ণ ইন্দ্রকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে ইন্দ্র বলেন, ‘তুমি সারা জীবন সোনা দান করেছ। পিতৃগণের উদ্দেশ্যে কোনও খাদ্য প্রদান করনি। তাই স্বর্গেও তোমাকে সোনা খেতে দেওয়া হয়েছে।’ তখন কর্ণ বলেন, ‘আমি পিতৃগণের সম্পর্কে জানতাম না। তাই ইচ্ছা করেই তাঁদের সোনা প্রদান করিনি।’ এই কথা শুনে বিষয়টির সত্যতা অনুধাবন করে কর্ণকে ১৬ দিনের জন্য ফের মর্ত্যে যাওয়ার অনুমতি দেন ইন্দ্র। তারপরই কর্ণ সেখানে গিয়ে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করেন। এই ১৬ দিনকেই পিতৃপক্ষ বলা হয়। অনেকে আবার বলেন, ইন্দ্র না যম কর্ণকে মর্ত্যে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। যাই হোক সনাতন মতে, পিতৃপক্ষে পুত্র কর্তৃক শ্রাদ্ধানুষ্ঠান অবশ্য করণীয় একটি অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের ফলেই মৃতের আত্মা স্বর্গে প্রবেশাধিকার পান। এই প্রসঙ্গে গরুড় পুরাণে বলা হয়েছে, “পুত্র বিনা মুক্তি নাই।” ধর্মগ্রন্থে গৃহস্থদের দেব, ভূত ও অতিথিদের সঙ্গে পিতৃতর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মার্কেন্ডেয় পুরাণে বলা হয়েছে, পিতৃগণ শ্রাদ্ধে তুষ্ট হলে স্বাস্থ্য, ধন, জ্ঞান ও দীর্ঘায়ু এবং পরিশেষে উত্তরপুরুষকে স্বর্গ ও মোক্ষ প্রদান করেন।

Mahalaya

বাৎসরিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যাঁরা অপারগ, তাঁরা সর্বপিতৃ অমাবস্যা পালন করে পিতৃদায় থেকে মুক্ত হতে পারেন। শ্রাদ্ধ বংশের প্রধান ধর্মানুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে পূর্ববর্তী তিন পুরুষের উদ্দেশ্যে পিণ্ড ও জল প্রদান করা হয়, তাঁদের নাম উচ্চারণ করা হয় এবং গোত্রের পিতাকে স্মরণ করা হয়। এই কারণে একজন ব্যক্তির পক্ষে বংশের ছয় প্রজন্মের নাম স্মরণ রাখা সম্ভব হয় এবং এর ফলে বংশের বন্ধন দৃঢ় হয়। ডেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতাত্ত্বিক উষা মেননের মতেও, পিতৃপক্ষ বংশের বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে। এই পক্ষে বংশের বর্তমান প্রজন্ম পূর্বপুরুষের নাম স্মরণ করে তাঁদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পিতৃপুরুষের ঋণ হিন্দুধর্মে পিতৃ-মাতৃঋণ অথবা গুরুঋণের সমান গুরুত্বপূর্ণ।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement