সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আজ, রবিবার ফলহারিণী কালীপুজো। সেই পুজোর মহিমা কী? লিখছেন সেবাপীঠ মাতৃমন্দিরের আচার্য স্বামী বেদানন্দ মহারাজ৷ জ্যৈষ্ঠমাসের অমাবস্যা তিথিতে ফলহারিণী মাতারূপে দেবী কালী পূজিতা হন। ধরিত্রীজাত ফলের সঙ্গে এই মাতৃপুজোর কোনও সম্পর্ক নেই। এই ফল মানবজাতির কর্মফলের কথা স্মরণ করায়।
[ আরও পড়ুন: খনা বলে আদৌ কি কেউ ছিলেন? জানুন আসল তথ্য]
ভাবব্যাখ্যা–মানুষ কেবলমাত্র কর্ম করার অধিকারী। কিন্তু ওই কর্মসমূহের ফল দান করার অধিকারিণী একমাত্র বিধাতাস্বরূপা দেবী কালিকা। কর্ম করলে সুকর্ম এবং কুকর্ম দুটিই সৃষ্ট হয়। উল্লিখিত ওই বিশেষ দিনটিতে মা স্বয়ং ভক্তদের সুকর্মের জন্য আশীর্বাদ প্রদান করেন। অপরদিকে সন্তানের কুকর্মের জন্য উদ্ভূত অশুভ ফলের প্রভাব থেকে তিনিই আবার সন্তানদের মুক্ত করেন। অর্থাৎ ওই দিনে মা স্বয়ং যেমন সন্তানদের শুভ ফল প্রদান করেন, তেমনি তিনি সন্তানদের অশুভ ফলও হরণ করে থাকেন। সেই কারণে জ্যৈষ্ঠ অমাবস্যায় মা কালী ফলহারিণী মাতারূপে পূজিতা হন। শ্রীশ্রী চণ্ডীতে উল্লেখ্য একটি বিশেষ মন্ত্রের সূত্র থেকে জানা যায়– ঋষি মার্কণ্ড স্বয়ং মাকে বলেছেন– “মৎসমঃ পাতকী নাস্তি পাপাঘ্নী ত্বৎসমা ন হি। এবং জ্ঞাতা মহাদেবি যথাযোগ্যং তথা করু।।”
ঋষি দেবীমাকে বন্দনা করে বলেছেন, “হে মহাদেবী, আমার মতো পাতকী কেউ নেই আর তোমার মতো পাপহারিণীও কেউ নেই, একথা মনে রেখে যা ভাল বোঝ তাই করো।” মার্কণ্ড ঋষির রচিত ওই মন্ত্রসূত্রটি ধরে আসুন না আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে কর্মফলের প্রতীকস্বরূপ একটি ফল মায়ের চরণ কমলে অর্পণ করে বলি– মাগো আমার ভালমন্দ, বৈধ অবৈধ, তিক্ততা, মধুরতা সবই তোমার শ্রীচরণে নিবেদন করে দিলাম। এবার যে ফল আমার প্রাপ্য সেটাই আমাকে দিও। মনে মনে বলি– কে তুমি জানি না, জানিতে চাহি না, শুধু জানি তুমি আছ মা। জীবন, মরণ, পাপপুণ্য, ভালমন্দ সবই তো তোমার দ্বারাই সৃষ্ট। সেইজন্য তোমার সম্পূর্ণ মহিমা কীর্তন করা আমার সাধ্যাতীত। উপসংহারে শ্রীশ্রী চণ্ডী থেকে আরও একটি মন্ত্র জানিয়ে, আমি আমার রচনার ইতি করলাম। নিম্নে মন্ত্রটি লিখিতভাবে জানাচ্ছি– “পরিপূর্ণা করুণাস্তি চেন্ময়ি। অপরাধপরম্পরাপরং ন হি মাতা সমুপেক্ষতে সুতম্।।”
[ আরও পড়ুন: পালন তো করেন, জানেন অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম্য? ]
বাংলা অনুবাদ– জগদম্বিকে! আমার ওপরে যে তোমার পূর্ণ কৃপাবর্ষণ হচ্ছে এতে আর আশ্চর্যের কথা কী! ছেলে অপরাধের পর অপরাধ করতে থাকে, তবুও মা ছেলেকে উপেক্ষা করে না।” উপরোক্ত মূল রচনাটির পরে আমি আমার একটি ব্যক্তিগত ছোট মন্তব্য লিপিবদ্ধ করে দিলাম। ‘মা’ সতের মা, অসতেরও মা। এই চিরকালীন বাক্যটি সবারই জানা। এই প্রসঙ্গে আমার মনে হয়– সৎসন্তানের কর্মগুলিতে মা তৃপ্তি পান, অন্যদিকে অসৎ সন্তানের অপকর্মে মা অবশ্যই বিষণ্ণ এবং দুঃখ পান। এই মহাসত্যকে অস্বীকার করা অসম্ভব। অর্থাৎ সুকর্মে সুফল মিলবে, অপকর্মে কুফল মিলবে এইটি বিধির অমোঘ বিধান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.