সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাখির প্রস্তুতি শেষ। এবার ভাই বা দাদার হাতে রাখি পরিয়ে গোটা দিন আনন্দে মেতে ওঠা। খাওয়া-দাওয়া, হই হুল্লোড়। তবে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার তাড়া থাকলে, ছবিটা পালটে যাবে অবশ্য। তখন হয় সকালের কোনও এক ফাঁকে টুক করে রাখিটা পরিয়ে দেওয়া। আর নয়তো সেই বিকেলে অফিসফেরত দাদা বা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে রাখি পরানো। তবে খাওয়া দাওয়া তো থাকেই। কিছু আচার, রীতি নীতি মেনে বছরের এই দিনটা পালন করি আমরা প্রায় সবাই। কিন্তু এবছর একটা ছোট্ট ভ্রুকুটি থাকছে রাখিউৎসব পালনের ওপর। এবছর রাখির সঙ্গেই রয়েছে চন্দ্রগ্রহণ।
গ্রহণকে শুভ মানেন না কেউই। বলা হয় কোনও রকম শুভ অনুষ্ঠান গ্রহণ চলাকালীন করা যাবে না। শাস্ত্রীয় মতে, গ্রহণের সময়ে অপবিত্রতা এবং অশুভ শক্তির প্রভাব বেড়ে যায়। বাড়ি, মন্দির সর্বত্রই এর প্রভাব পড়ে। ফলে গ্রহণের সময় পূজা-অর্চনাও বন্ধ রাখা হয়। গ্রহণ শেষ হলে ঘরবাড়ি পরিষ্কারও করেন অনেকে। এবছর রাখিপূর্ণিমা যে সময়ে পড়েছে, সেই সময়ই চন্দ্রগ্রহণ হওয়ার কথা। ফলে অনেকের আশঙ্কা রাখি উৎসবে পড়তে পারে অমঙ্গলের ছায়া। অশুভ হয়ে উঠতে পারে এবারের রাখিবন্ধন। অনেক বোনেরাই সেই অমঙ্গলের আশঙ্কায় ভীত। সেটাই স্বাভাবিক। সাধারণত গ্রহণের সময় আমরা কিছু রীতি পালন করি। যাতে কোথাও খারাপ কোনও প্রভাব পরিবারে না পড়ে। গ্রহণ শুরু হওয়ার আগে দুধ, মধু,দই, চিনি,ঘি মিশিয়ে পঞ্চামৃত তৈরি করে শিবলিঙ্গে ঢালেন অনেকে। আবার বলা হয় গ্রহণের সময়ে দান করলে বহুগুণ বেশি পুণ্য অর্জন করা যায়। তাই গ্রহণের সময়ে নিজের সাধ্য অনুযায়ী কোনও দরিদ্র অথবা অসহায়কে অর্থ, খাদ্য বা বস্ত্র দান করেন অনেকে। কোথাও আবার গরুকে ঘাস এবং পাখিদের শস্য জাতীয় খাবার খাওয়ান অনেকে। সূর্যাস্তের আগে তুলসি পাতা নিয়ে এসে বাড়িতে রাখা খাবার এবং পানীয়ের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে গ্রহণের সময়ে ওই খাবারগুলি অপবিত্র হওয়ার ভয় থাকে না। এই কাজগুলি করলেও, প্রশ্ন কিন্তু থাকছে। চন্দ্রগ্রহণের সময় রাখি পরানো যাবে কি না।
Jharkhand Tribal women from a village near Jamshedpur tie #Rakhi to trees and pledge to protect them#RakshaBandhan pic.twitter.com/wAH4aLxbBF
— India TV (@indiatvnews) August 7, 2017
দিল্লির নেহেরু তারামণ্ডলের প্রধান আধিকারিক এন রত্নাশ্রী জানিয়েছেন, চন্দ্রগ্রহণ পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক বিষয়। এরসঙ্গে শুভ বা অশুভ শক্তির প্রভাব পড়ার কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি আরও জানিয়েছেন, রাত ৯.২০ থেকে ২.২০ পর্যন্ত চন্দ্রগ্রহণের প্রাথমিক পর্যায় দেখা যাবে অর্থাৎ যে সময় ছায়া পড়তে থাকে চাঁদের ওপর, সেই পর্যায় চলবে। যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘পিনামব্রাল এক্লিপস’। এই পর্যায় সচরাচর নজরে আসে না। এরপর শুরু হবে আংশিক গ্রহণ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, রাত ১০.৫২ থেকে আংশিক গ্রহণ শুরু হবে। চলবে ঘন্টা দুয়েক পর্যন্ত। এই পিনামব্রাল এক্লিপস তখনই ঘটে, যখন সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদ সরলরেখায় অবস্থান করে। এর ফলে সূর্যের আলো পৃথিবী ঢেকে দেয় ও চাঁদ পর্যন্ত সেই আলো পৌঁছয় না। ফলে অন্ধকারে ঢেকে যায় চাঁদ। হয় গ্রহণ।
Gorgeous moon rise! Such great detail when seen from space. Next full moon marks #Eclipse2017. We’ll be watching from @Space_Station. pic.twitter.com/Mk6khSN6gI
— Randy Bresnik (@AstroKomrade) August 4, 2017
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কথায় গ্রহণের কোনও প্রভাবই পড়বে না রাখিতে। তবে জ্যোতিষীরা কিন্তু অন্য কথা বলছেন। এবার রাতের দিকে গ্রহণ শুরু হলেও, তার আগে চলে সূতক। সূতক শুরু হয় গ্রহণের ন’ঘন্টা আগে থেকে। এইসময়ও কোনও শুভ কাজ সম্পন্ন করা উচিত নয় বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। তাই এবছর রাখি উৎসব পালন করা উচিত ঘড়ি দেখে, সময় মেনে। যাতে গ্রহণের কোনও প্রভাব প্রিয়জনের ওপর না পড়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.