সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বামী বিবেকানন্দের (Swami Vivekananda) জীবন ও চিন্তাধারা হয়ে উঠতে পারে আমাদের পাথেয়। সমগ্র মানব সমাজের জন্য যে বাণী তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন তার আবেদন চিরকালীন। তবু বাঙালি তাঁর বলে যাওয়া কথা কি সম্যক অনুধাবন করতে পেরেছে? না হলে কেন গীতাপাঠ (Bhagavad Gita) ও ফুটবল খেলা নিয়ে তাঁর কথা নিয়ে নানা সময়ে বিতর্ক হয়েছে। হয়েছে অপব্যাখ্যা। আসুন জেনে নেওয়া যাক, স্বামীজি ঠিক কী বলেছিলেন এই বিষয়ে?
গত উনবিংশ শতকের শেষে মৃত্যুর মাত্র কয়েক বছর আগে মাদ্রাজে (আজকের চেন্নাই) গিয়েছিলেন বিবেকানন্দ। সেটা ১৮৯৭ সাল। দিয়েছিলেন ‘ভারতীয় জীবনে বেদান্তর প্রয়োগ’ শীর্ষক বক্তৃতা। আর সেখানেই উঠে আসে ফুটবল খেলা ও গীতাপাঠ প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ”আমরা দুর্বল, অতি দুর্বল। প্রথমত আমাদের শারীরিক দৌর্বল্য- এই শারীরিক দৌর্বল্য আমাদের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ দুঃখের কারণ।” পরে সেকথা বিশদে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিবেকানন্দ জানিয়েছিলেন, ”আমাদের যুবকগণকে প্রথমত সবল হইতে হইবে, ধর্ম পরে আসিবে। হে আমার যুবক বন্ধুগণ, তোমরা সবল হও – তোমাদের নিকট ইহাই আমার বক্তব্য। গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের আরও নিকটবর্তী হইবে। আমাকে অতি সাহসপূর্বক এই কথাগুলি বলিতে হইতেছে; কিন্তু না বলিলেই নয়। আমি তোমাদিগকে ভালোবাসি।… তোমাদের বলি, তোমাদের শরীর একটু শক্ত হইলে তোমরা গীতা আরও ভাল বুঝিবে। তোমাদের রক্ত একটু তাজা হইলে তোমরা শ্রীকৃষ্ণের মহতী প্রতিভা ও মহান বীর্য ভাল করিয়া বুঝিতে পারিবে।”
এই বক্তব্য থেকে পরিষ্কার, শরীরকে মজবুত করতে না পারলে কোনও কিছুই করে ওঠা সম্ভব নয়, যুব সম্প্রদায়কে সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর এই বক্তব্যের খণ্ডিত অংশকে আলাদা করে তুলে ধরে এর অপব্যাখ্যা অনেক সময়ই হয়। কিন্তু ‘উপনিষদ ও আত্মার মহিমা ভালো’ করে বুঝতেই যে শক্ত শরীরের কথা বলেছিলেন, তা বলা হয় না। এপ্রসঙ্গে মনে করা যেতে পারে, উপনিষদে বর্ণিত “নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্য” শ্লোকটির কথাও। যার অর্থ ‘বলহীনের দ্বারা আত্মজ্ঞান লাভ হয় না।’ সেদিন সেই কথাই পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বিবেকানন্দ। তাঁর অন্য বাণীর মতো যা শাশ্বত, যা আজও জ্বাজ্জ্বল্যমান দীপস্তম্ভের মতো আমাদের আলো দেখায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.