সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল: দেশের আনাচে-কানাচে রয়েছে অসংখ্য মন্দির। শ্রীকৃষ্ণ, দেবী দুর্গা, মা কালী…নাম বলতে গেলে শেষ হবে না। রয়েছে পবন পুত্র রামভক্ত হনুমানের মন্দিরও। তবে ভূত ছাড়ানো মন্দিরের কথা শুনেছেন? হ্যাঁ! রাজস্থানেই রয়েছে এমনই এক মন্দির। নাম মেহেন্দিপুর বালাজি মন্দির। বালাজি নামে এখানে হনুমানকে পুজো করা হয়। তবে তিনি একা নন। রয়েছেন প্রেতরাজ সরকার ও ভৈরব বাবা। এই তিন দেবতা পূজিত হন একসঙ্গে।এই মন্দির প্রায় ১ হাজার ৮ বছরের পুরনো। বছরভর প্রচুর ভক্ত তাঁর প্রিয়জনকে অশুভ আত্মার কবল থেকে বাঁচাতে এই মন্দিরে নিয়ে আসেন।
কোথায় এই মন্দির?
রাজস্থানের দৌসা জেলা। রাজধানী শহর জয়পুর থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূর।এখানেই রয়েছে প্রাচীন মন্দিরটি। শোনা যায়, এক সময় ১২ জন পুরোহিত এখানে পুজো করলেও এখন ৩ জন সেই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
মন্দিরের ইতিহাস: বালাজি মন্দিরের উৎপত্তির ইতিহাস নিয়ে রয়েছে বিস্তর ধোঁয়াশা। মনে করা হয় যেখানে মন্দিরটি রয়েছে ঠিক সেই জায়গায় এক রাজা খুন হন। রাজার অতৃপ্ত আত্মা বারংবার বালাজির কাছে এসে মুক্তির আবেদন জানাতে থাকে। রাজার প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে বালাজি এখানে নিজের দরবার বসানোর সিদ্ধান্ত নেন। অতৃপ্ত আত্মা ও ভূতে পাওয়া মানুষদের বিচার করার ভার নেন তিনি। নিজের দরবার যথাযথ ভাবে চালানোর জন্য প্রেতরাজ ও বাবা ভৈরবকে যুক্ত করেন। অন্য একটি মতে, এক পুরোহিত স্বপ্নে দেখেন বালাজি মাটিতে পোঁতা একটি মূর্তি উদ্ধার করতে আদেশ দেন তাঁকে। ঘুম ভাঙতেই সেই জায়গায় ছুটে যান তিনি। মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে আসে মূর্তিটি। সেই থেকে মন্দির।
পূজিত দেবতারা: মন্দিরে বালাজি, ভৈরব, ও প্রেতরাজ সরকার একসঙ্গে পূজিত হন। ভক্তদের দাবি এই ত্রয়ীর কৃপাতেই ‘ভূতে’র হাত থেকে রক্ষা পায় লাখ লাখ ‘অসুস্থ’। মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘ভূতে পাওয়া’ মানুষরা এখানে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরে যান। আর সেই কারণেই মেহেন্দিপুরে ভক্তদের ঢল নামে!
বালাজি: রামভক্ত হনুমানের সম্পর্কে আলাদা করে বলার কিছু নেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর প্রচুর মন্দির রয়েছে। ভয়নাশ, শক্তিবৃদ্ধি, মানুষের দুরাবস্থা থেকে বাঁচাতে বালাজি পূজিত হন। মেহেন্দিপুর মন্দিরে তিনিই প্রধান দেবতা।
প্রেতরাজ সরকার: জয়পুরের এক রাজা ছিলেন যিনি ভূত, অশুভ শক্তি, জিন, ডাইনি -সহ আরও অপশক্তিকে নিজের দখলে রাখতে পারতেন। ওই রাজা বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তিনিই প্রেতরাজ সরকার। তাঁকে ‘প্রেতরাজ’ বা ‘প্রেতেদের রাজা’উপাধি দেওয়া হয়। প্রেতেদের রাজা হিসাবে প্রেতরাজ সরকার মন্দিরে আলাদা স্থান দখল করে থাকেন। তিনি যন্ত্রণা পাওয়া আত্মাদের মুক্তি দেন। মন্দিরের গর্ভগৃহে তিনি বিরাজমান। নির্দিষ্ট পূজা পদ্ধতির মাধ্যমে তাঁর উপাসনা করা হয়।
ভৈরব বাবা: ভৈরব বাবা বা কাল ভৈরবকে তা আলাদা করে বলতে হবে না। প্রত্যেকেই জানে মহাদেবের একটি অবতার কাল ভৈরব। সাধু সন্তরা বলা ভালো যাঁরা মূলত ভূত-প্রেত নিয়ে ‘কারবার’ করেন তারা কাল ভরবকে পুজো করেন। এই মন্দিরেও ‘ভূতে পাওয়া’ মানুষদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে তাঁর উপাসনা করা হয়।
ভূতের রাজা, বালাজি, ভৈরব রোগীদের সুস্থ করেন কী করে? জানা যাচ্ছে, রোগীদের সুস্থ হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ, তাঁদের নিজের উপরে বিশ্বাস ফিরে আসা। সাধারণত স্থানীয় চিকিৎসক-ওঝা-পীর-ফকিরের কাছে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পরেই বালাজির কাছে আসার সিদ্ধান্ত নেয় রোগীর পরিবার। ফলে তাঁরা মানসিক ভাবে এক আধ্যাত্মিক সফরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। সেটাই তাঁকে মানসিক বৈকল্য থেকে বেরিয়ে আসার শক্তি জোগায়। ভূত-প্রেত,বিশ্বাস-অবিশ্বাস, কুসংস্কারের যুক্তি-তর্ক সরিয়ে রেখে শুধু সুস্থ হওয়ার আশায় উত্তর বা পশ্চিম ভারত তো বটেই, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে মানুষ আসেন এই ‘ভূতের মন্দিরে’।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.