Advertisement
Advertisement
পুজো

পুজোয় দুই বাংলার বিভেদ ভুলিয়ে দেন ৪৭৬ বছরের পুরনো নস্করি মা

৯৫০ সনে শুরু হয়েছিল এই পুজো।

Durga Puja 2019: Know the amazing facts of tehatta's puja
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:September 28, 2019 11:58 am
  • Updated:September 28, 2019 7:30 pm  

পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ রইল তেহট্টের নস্করি মায়ের দুর্গাপুজোর কথা।

পলাশ পাত্র, তেহট্ট: পুজোর ক’টা দিন দুই বাংলার আবেগের নাম হয়ে ওঠে নস্করি মা। সীমান্তের কাঁটাতার, ইনসাস রাইফেল, নিরাপত্তা বাহিনীর জংলা পোশাকে লং মার্চের মতো ঘটনাও নস্করি মায়ের মাহাত্ম্যের কাছে কিছুই না। বারুদের গন্ধ, কাঁটাতারের ভ্রূকুটি ভুলে সবাই উমার আগমনে মেতে ওঠেন। মেতে ওঠে গোটা সীমান্ত এলাকা। শিউলি ফুলের বোঁটার রঙের রণংদেহি দেবী দুই দেশের ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে এক অনন্য মিলনোৎসবও গড়ে তোলে। দুই বাংলার মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস, মানত করলে মনস্কামনা পূর্ণ হয়। তাই কাঁটাতারে প্রবল কড়াকড়ির মধ্যেও বৈধ-অবৈধ উপায়ে ওপারের প্রচুর মানুষ দেবী দর্শনে আসেন। তারা দুধ, চিনি সহ পুজোর উপকরণ দেন। ওপারের প্রচুর মূদ্রাও প্রণামীতে পড়ে। এখনও দুই বাংলার সীমান্তের জনপদের মানুষ নস্করিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আখ্যান-উপাখ্যানে বুঁদ।

Advertisement

[আরও পড়ুন:পুরাতনেই ভরসা, আজও গ্রামোফোনে মহিষাসুরমর্দিনী শোনেন এই এলাকার বাসিন্দারা]

জানা যায়, বাংলা ৯৫০ সনে এই নস্করি মায়ের পুজো শুরু হয়েছিল। কথিত আছে, নস্কর বর্মণ নামে এক সাধু এই পুজোর সূচনা করেন। বাংলাদেশের ভেড়ামারায় এক জমিদার বাড়িতে প্রতিমাকে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে প্রবল ঝড়, বৃষ্টি হয়। পুজো আটকে যায়। রাতে নস্কর সাধু স্বপ্নাদেশ পান। পুজো ওইখানেই করতে হবে। সেই মতো সাধু পুজো শুরু করেন। তারপর থেকেই নস্করি মায়ের পুজো নামে খ্যাতি লাভ করে। জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজো করে মায়ের প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। পুরনো রীতি মেনেই কৃষ্ণনবমীতে নিমগাছ তলায় দেবীর বোধন হয়। গোটা এলাকায় একসময় ঘন জঙ্গল ছিল। শ্মশানও গড়ে ওঠে। সেখানেই পঞ্চমুণ্ডের আসনে বসে পুজো করা হত। এখন অবশ্য জঙ্গল বা শ্মশান নেই। পুজোও তান্ত্রিক মতে হয় না। কুমড়ো বা ফল দিয়েই হয় বলি। বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্বে চট্টোপাধ্যায় পরিবার।

naskari-tala
নস্করিতলার প্রতিমা

চট্টোপাধ্যায় পরিবার সূত্রে জানা যায়, এক সময় নস্কর সাধু নিম গাছের নিচে বসে তপস্যা করত। তিনি মারা যাওয়ার পর এই বংশের প্রসন্ন রায়, শ্যামল চট্টোপাধ্যায়রা পুজোর হাল ধরেন। সপ্তমীর দিন অন্নভোগ, অষ্টমীতে লুচি, ক্ষীর হয়। নবমীতে খিচুড়ি, পাঁচ ভাজা, অন্নভোগ ও দশমীতে খই-দই ভোগ দেওয়া হয় মাকে। নস্করি মায়ের পুজো এবার ৪৭৬ বছরে পড়ল। পুজো নিয়ে অনেক কাহিনী রয়েছে। কথিত আছে, কুঠিরঘাটে মা বালিকার রূপে বসেছিলেন। ওই রাস্তা দিয়ে সে সময় যাচ্ছিলেন এক শাঁখারি। মা তাকে ডাকেন। শাঁখারি কাছে যেতেই তিনি শাঁখা পরাতে বলেন। শাঁখারি দাম চান। মা বলেন, নস্করি বাড়ির কুলুঙ্গিতে টাকা আছে। বাড়িতে গিয়ে চাইলেই দিয়ে দেবে। শাঁখারি ওই বাড়িতে পৌঁছে এক মেয়েকে দেখতে পায়। তার কাছে টাকা চাইতে সে ক্ষুব্ধ হয়। জানায়, তাদের বাড়ির কেউ তো শাঁখা পরেনি। শাঁখারি পুনরায় ঘাটের কাছে ছুটতে ছুটতে যায়। কাঁদতে কাঁদতে সে শাঁখা পরা বালিকাকে খুঁজতে থাকে। এই সময় দশহাত তুলে দেবী ঘাট থেকে ওঠেন। শাঁখারি পড়ে যায়। জ্ঞানও হারান। ওই শাঁখারির উত্তরসূরি পালরা মুরুটিয়ার বালিয়াডাঙায় থাকেন। তারা আজও পুজোর আগে নস্করি মায়ের শাঁখা দিয়ে আসেন।

[আরও পড়ুন: উদ্বোধন করবেন অমিত শাহ, প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সল্টলেকের বি জে ব্লকের পুজো]

জেলা ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নস্করি মাকে দেখতে মানুষ আসেন। এই পুজোতে হাত লাগায় স্থানীয় মুসলিমরাও। তাদের মধ্যে অনেক স্বেচ্ছাসেবক থাকেন। তাই দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে মিলনোৎসব হয়ে ওঠে। দশমীতে নস্করিতলা থেকে হোগলবেড়িয়া বাজার হয়ে কুঠিরঘাট পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার পথ নস্করি মাকে কাঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। বিসর্জনের আগে দেবীকে কুঠিরঘাট থেকে হোগলবেড়িয়া বাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটার পথ সাতবার অতিক্রম করা হয়। এ দৃশ্য দেখতে পথের দু’ধারে প্রচুর মানুষ দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকেন। তারপর নস্করিকে কুঠিরঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়। নিষ্ঠা আন্তরিকতার সঙ্গে হওয়া জাগ্রত নস্করি মায়ের পুজোকে কেন্দ্র করে পুজোর দিনগুলো এলাকায় মেলা বসে যায়। সেখানে নাগরদোলা ও বিভিন্ন খাবার বসে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement