ধীমান রায়, কাটোয়া: মাঝরাতে দেবীর গর্ভগৃহের বন্ধ দরজার সামনে ঢাক বাজানো হয়। ঢাকের সেই বোল শুনে দেবী যোগাদ্যা ‘নৃত্য’ করেন। তবে সে সময় দেবীর ওই নাচের দৃশ্য কেউ দেখতে পান না। শুধুমাত্র ঢাকিই পায়ের নূপুরের শব্দ শুনে তা বুঝতে পারেন। পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামের দেবী যোগাদ্যার (Devi Jogadya) মন্দিরের গর্ভগৃহের সামনে একমাস ধরে পালন করা হয় এই বিশেষ আচার। যে আচার ‘নিশি ঢম্বুল’ বলে পরিচিত।পৌষের সংক্রান্তির দিন থেকে মাঘ মাসের সংক্রান্তির পর্যন্ত পালন করা হয় ‘নিশি ঢম্বুল’। তবে নিয়ম রয়েছে এই ‘নিশি ঢম্বুল’ পালনে শুধুমাত্র এক ঢাকিই শুধু থাকতে পারবেন। দেবীর মন্দিরের কাছে তখন আর কেউ ঘেষতে পারবেন না।
সতীর একান্নপীঠের মধ্যে অন্যতম পিঠ রয়েছে পূর্ব বর্ধমান (Purba Bardhaman) জেলার মঙ্গলকোট থানার ক্ষীরগ্রামে। এখানে পূজিতা হন দেবী যোগাদ্যা। কথিত আছে, সতীর ডান পায়ের বুড়ো আঙুল পড়েছিল ক্ষীরগ্রামে। ক্ষীরগ্রামে ঢোকার মুখেই ক্ষীরদিঘি নামে বড় এক জলাশয় রয়েছে। ক্ষীরদিঘির জলের ওপরেই অবস্থিত দেবীর মন্দির। গর্ভগৃহের অনেকাংশই জলে নিমজ্জিত থাকে। জলাশয়ের জলের মধ্যেই সারাবছর ডুবিয়ে রাখা হয় দেবীর সেই প্রাচীন শিলামূর্তিটি। দিঘির জল কখনও শুকায় না। ফলে দেবীর শিলামূর্তির দর্শনের সুযোগ সারাবছর পান না সাধারন মানুষ। নিয়ম রয়েছে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন ও তিথিতেই দেবীকে জল থেকে তুলে পুজো করা হয়।
বছরের সবচেয়ে বেশি নজকাড়া হয় বৈশাখ মাসের সংক্রান্তি তিথির পুজো। ওই দিন দেবীকে জল থেকে তোলা হয়। এছাড়া আরও চারদিন দেবীর মূর্তি জল থেকে তুলে পুজো করা হয়। দেবী যোগাদ্যাকে নিয়ে এলাকায় নানান জনশ্রুতি রয়েছে। তার সঙ্গে দেবীর আরাধনায় রয়েছে নানান আচার। তেমনই এক ব্যতিক্রমী আচার হল ‘নিশি ঢম্বুল’।
পুজো কমিটির সম্পাদক বরুণ চক্রবর্তী জানান, প্রতিবছর পৌষমাসের সংক্রান্তির দিন থেকে মাঘমাসের সংক্রান্তির দিন অর্থাৎ টানা একমাস ধরে পালন করা হয় এই ‘নিশি ঢম্বুল’। এই আচার অনুযায়ী মধ্যরাতে প্রায় আধঘণ্টা সময় ধরে একজন ঢাকি দেবীর গর্ভগৃহের দরজার সামনে ঢাক বাজান। তখন কাছাকাছি কেউ থাকতে পারবেন না। ঢাকের আওয়াজ কারও কানে গেলে যতক্ষণ না বাজনা বাজানো শেষ হচ্ছে ততক্ষণ সেই ব্যক্তিকে সেখানেই ওই অবস্থায় থাকতে হবে। এমনকী মধ্যরাতে রাস্তায় যদি কোনও পথচারী যান তখন যদি তিনি ‘নিশি ঢম্বুলে’র ঢাকের আওয়াজ পান তাহলে তাকে রাস্তায় বসেই ঢাক বাজানো শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
প্রচলিত, ‘নিশি ঢম্বুলে’র ঢাক বাজানোর সময় ঢাকি মন্দিরের ভিতর থেকে ভেসে আসা নূপুরের আওয়াজ শুনতে পান। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী তখন ঢাকের তালে তালে নৃত্য করেন। বরুনবাবু জানান, সারা বছরের পুজোর সময় ঢাকের বোল যা যা বাজানো হয়ে থাকে সেই বোলগুলির সবক’টিই ‘নিশি ঢম্বুলে’র সময় বাজাতে হয়। মাঘ মাসের শেষদিন দেবীকে বিশেষ পুজো দিয়ে ‘নিশি ঢম্বুল’ উদযাপন করা হয়। সেদিন ছাগবলি দেওয়া হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.