সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শুধু কোজাগরী পূর্ণিমা তিথিতেই নয়, বারো মাসই করা যায় লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা। ঘট স্থাপন করে বা লক্ষ্মীর সরা সামনে রেখে বৃহস্পতিবার মা লক্ষ্মীর (Laxmi Idol) আরাধনা করেন গৃহস্থরা। অনেক গৃহস্থ ঘরেই লক্ষ্মীর প্রতীক থাকে, তা সামনে রেখেই পুজো করা হয়। কেউ কেউ পুরোহিতকে দিয়ে পুজো করান। অন্যথায় যে কেউই লক্ষ্মীপুজো (Laxmi Puja)করতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে কয়েকটি নিয়ম অবশ্য পালনীয়।
মা লক্ষ্মী সন্তুষ্ট হন ভক্তিতে। ভক্তের কাছে তিনি মূলত সেটাই প্রত্যাশা করেন। তাই তাঁর পূজায় ভক্তিই বড় উপরকরণ, অন্যান্য জরুরি উপকরণও স্বল্পই। যদি ঘট স্থাপন করে পুজো করতে হয়, তবে ঘটের সঙ্গে অল্প পরিমাণ মাটি, সিঁদুর, ধান, আম্রপল্লব, দুর্বা, আতপচাল এবং জল প্রয়োজন। এছাড়া লক্ষ্মীপুজোয় লাগে কাঁঠালি কলা, হরিতকী, চন্দ্রন, ধূপ-দীপ, ফুল ও তুলসীপাতা। মূলত মাটি ও ধানের উপর স্থাপন করতে হয় লক্ষ্মীর ঘট। ঘটে অবশ্যই জল দেবেন। ঘটের উপর রাখবেন আম্রপল্লব, কাঁঠালী কলা ও হরিতকী। ঘটের গায়ে সিঁদুর দিয়ে আঁকতে হয় মঙ্গলচিহ্ন। ঘটের পাশে আঁকতে হয় দেবী লক্ষ্মীর পদছাপ অর্থাৎ আলপনা। একটু জল এখানেও দিতে হয়। বলা হয়, মা লক্ষ্মী যে ভক্তের ডাকে গৃহে এলেন, তাঁর পা ধোয়ার জলই দেওয়া হয় আলপনার উপর।
পুজোর শুরুতেই মাথায় গঙ্গাজল ছিটিয়ে বিষ্ণুকে স্মরণ করে নিজেকে শুদ্ধ করে নিতে হয়। এরপর জল নিবেদন করতে হয় প্রাণশক্তির প্রতীক সূর্যদেবতাকে। এবার মা লক্ষ্মীকে দুর্বা, ফুল ও চন্দন দিয়ে আরাধনা করতে হয়। করতে হয় মন্ত্রপাঠ। ধূপ ও প্রদীপ দেখিয়ে সাধ্যমতো নৈবেদ্য নিবেদন করতে হয় দেবীর প্রতি। লক্ষ্মী দেবীর পুজো শেষ হলে নারায়ণের উদ্দেশে একটি তুলসী অর্পণ করতে হয় ঘটে। পাশাপাশি একটি করে পুষ্প নিবেদন করতে হয় ইন্দ্র, কুবের এবং মা লক্ষ্মীর বাহন পেচকের উদ্দেশেও। মা লক্ষ্মীর প্রণাম মন্ত্র:
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং দেবি মহালক্ষ্মী নমঽস্তু তে।।
নিয়মিত লক্ষ্মী পুজোর সময় যে ভুলগুলি করা উচিত নয়, অর্থাৎ যে ব্যাপারগুলি অবশ্যই স্মরণে রাখতে হয়:
১) ভক্তিই দেবী আরাধনার প্রধানতম উপকরণ। তাই পুজোর সময় অন্যমনস্ক হলে অসন্তুষ্ট হন দেবী।
২) দেবী লক্ষ্মীর উদ্দেশে কখনই তুলসী নিবেদন করবেন না। তা করবেন নারায়ণের উদ্দেশে।
৩) লোহার পাত্র নয়, লক্ষ্মী পুজোয় ব্যবহার করুন তামার পাত্র। লোহা দিয়ে সাধারণত অলক্ষ্মীর পূজা হয়। তাই লক্ষ্মীপুজোয় লোহা না-ব্যবহার করাই রীতি।
৪) লক্ষ্মীপুজোয় ঘণ্টাধ্বনি করার নিয়ম নেই।
মা লক্ষ্মী অল্পেতেই সন্তুষ্ট হন। যদি কেউ মন্ত্র পড়তে অপারগ হন, তবে এক মনে দেবী লক্ষ্মীর ধ্যান করলেই তিনি প্রসন্ন হন। তাঁকে ভক্তিভরে আহ্বান করলে বিনা মন্ত্রেই তিনি ভক্তের সামনে আবির্ভূতা হন। এমনকী কোনও উপকরণ জোগাড় করতে না পারলেও, সে কথা তাঁকে জানালে তিনি রুষ্ট হন না। ভক্তিভরে তাঁর অর্চনা করে পাঁচালি পাঠ করলে তিনি অচলা হয়ে গৃহস্থের ঘরে অধিষ্ঠান করেন। মা লক্ষ্মী শস্য-সুখ-সমৃদ্ধির প্রতীক। তাই প্রতি বৃহস্পতিবার তাঁর আরাধনা করলে সংসারের মঙ্গল হয়। তবে উপরিউক্ত নিয়মগুলো যতটা সম্ভব পালন করা উচিত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.