Advertisement
Advertisement
মেলা

গোপীনাথ ছাড়া বারোদোল মেলার জৌলুস আছে, আনন্দ নেই

গোপীনাথের অনুপস্থিতি এখন আদালতের বিচারাধীন বিষয়৷

Barodol Mela,a famouse ritual in Tehatta, Nadia has stared from today
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:April 15, 2019 9:16 pm
  • Updated:April 15, 2019 9:33 pm  

পলাশ পাত্র, তেহট্ট: গোপীনাথ বিনা বারোদোল মেলা নিয়ে রাজবাড়ির মন খারাপ। আদরের রানি ছোটনের মান ভাঙাতে আস্ত একটা মেলা অষ্টাদশ শতাব্দীতে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় রাজবাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে বসিয়েছিলেন। যা আজকের বাংলার বিখ্যাত বারোদোল মেলা।
সেই মেলায় গত ছ’বছর নেই গোপীনাথ। কয়েক শতক পেরনো মেলায় আজ ফ্রেমবন্দি ছবিতেই তিনি পূজিত হচ্ছেন। মধ্যযুগের কষ্টিপাথরের নির্মিত গোপীনাথ নিয়ে বারোদোলের দর্শনার্থীদেরও মন খারাপ।

                                                   [ আরও পড়ুন: জীবনে সুখ সমৃদ্ধি আনতে এভাবেই পালন করুন নববর্ষ] 

 কৃষ্ণের বারোটি বিগ্রহের পুজো মেলার তিনদিন দর্শনার্থীদের দেখার সুযোগ মেলে। সোমবার থেকে শুরু হল এই মেলা। প্রথমদিন রাজবেশ, দ্বিতীয়দিন ফুলবেশ, তৃতীয় দিন রাখালবেশ৷ রানির মান-অভিমান ভাঙানোকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া মেলা ধীরে ধীরে ধর্মীয় ভাবাবেগেও জারিত হয়েছে৷ সেভাবেই মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে। একমাসেরও বেশি সময় ধরে চলা মেলাকে কেন্দ্র করে কোটি টাকার ব্যবসা নি:সন্দেহে বাজার অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করে।  এই মেলা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের একটি মিলনক্ষেত্রও বটে।

Advertisement

nadia mela

রাাজবাড়ি সূত্রে জানা যায়, উলা মেলায় রানি ছোটনকে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রাজকার্যে ব্যস্ত থাকায় নিয়ে
যেতে পারেননি। রানির মান ভাঙাতে, ১৭৪৪ সালে  মহারাজা মেলা বসান রাজবাড়ির প্রাঙ্গণে।তবে মেলা ঠিক কোন সময়ে হয়, এনিয়ে তর্কবিতর্ক রয়েছে। রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গলে এই মেলার উল্লেখ না থাকাতেই এ সমস্যা হয়। কারণ, কৃষ্ণচন্দ্রের সভা অলংকৃত
করতেন ভারতচন্দ্র। সেক্ষেত্রে, ১৭৫২ সালে রচিত অন্নদামঙ্গলে বারোদোল মেলার উল্লেখ না থাকা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। সেখানে বারোদোল ১৭৬৪ সালে হয় বলে জানা যায়। মেলার শুভ সময় কী হতে পারে, এনিয়ে মহারাজা রাজসভার পণ্ডিতদের কাছে এ নিয়ে বিধান চাইলেন।পণ্ডিতরা পরামর্শ  দিলেন, দোলের পর চৈত্রমাসের শুক্লা একাদশী তিথিতে হরিবিগ্রহকে দক্ষিণমুখে দোলায় বসিয়ে দোলালে শুভ হয়।

                     [ আরও পড়ুন: রাম নবমী উপলক্ষে দু’হাজার কুমারীর পুজো, উৎসবের মেজাজ আদ্যাপীঠে]

হরিভক্তিবিলাস গ্রন্থে এ সমস্তই উল্লেখ রয়েছে। মেলাতে আসবাবপত্র, খাবার, শাড়ি,  সার্কাস থেকে বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠানও দোকান দেয়। যা এই ক’দিনে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় তাঁরই সময়ে প্রতিষ্ঠিত নবদ্বীপের গোপাল, শান্তিপুরের গড়ের
গোপাল, বিরহীর মদনগোপাল, রাজবাড়ির কুলদেবতা নারায়ণ-সহ বারোটি বিগ্রহের একসঙ্গে  পুজো হয়৷ আজও রাজবাড়ির নাটমন্দিরের পূর্ব দিকের খিলানে কাঠের সিংহাসনে এই বিগ্রহরা শোভা পায়। মহারাজা শাক্তের উপাসক হলেও এক্ষেত্রে শাক্ত ও বৈষ্ণব ধারার মেলবন্ধন
ঘটিয়েছিলেন।

অনেক বছর তেহট্টে কৃষ্ণরায়ের বিগ্রহ আসেনা। গত ছ’বছর ধরে অগ্রদ্বীপে রয়েছে গোপীনাথ। এ নিয়ে আদালতেও যাওয়া হয়েছে। ঘটনা প্রসঙ্গে রাজবাড়ির বর্তমান বংশধরদের অন্যতম মণীশচন্দ্র রায় গোপীনাথের অনুপস্থিতিতে মন খারাপের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, ‘গোপীনাথকে অন্যায়ভাবে জোর করে রাখা হয়েছে। বিষয়টি এখন আদালতে। তাই এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে আগের মতোই সমস্ত কিছু মানা হয়।’

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement