অভিরূপ দাস: মন্দিরের ভোগে সুস্বাস্থ্যের সিলমোহর! যে সে সংস্থার দেওয়া সার্টিফিকেট নয়, দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের ফুড সেফটি স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই)। কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে অভাবনীয় ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতার দুই মন্দিরের ক্ষেত্রে। বাগবাজার মায়ের মন্দির আর মিন্টো পার্কের ইসকন মন্দির। কলকাতার এই দুই মন্দিরের প্রসাদ পরিচ্ছন্নতা মেনে তৈরি সর্বোৎকৃষ্ট।
খাবারের গুণমান যাচাই করে শংসাপত্র দেয় এফএসএসএআই। শুধু রান্না পদ্ধতি নয়, খুঁটিয়ে দেখা হয় বাজার থেকে শুরু করে রান্নাঘরের হাল-হকিকত। রাঁধুনির পরিচ্ছন্নতা, সাফসুতরো রান্নাঘর, স্বাস্থ্যকর খাবার বানালে তবেই মেলে এফএসএসএআই সিলমোহর। প্রতিটি ক্ষেত্রেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে বাগবাজার মায়ের মন্দির। মন্দিরের প্রসাদের গুণমান বিচার? পুরসভার আধিকারিকরা বলছেন সেটাই দরকার সবার আগে। বাগবাজার মায়ের মন্দিরের ভোগ প্রসাদ পাওয়ার জন্য নিত্যদিন হাজারও ভক্তের লাইন পড়ে।
কিন্তু রান্না করা সেই খিচুড়ি ও আনুষঙ্গিক ব্যঞ্জনাদি কতটা স্বাস্থ্যসম্মত? সাধারণ মানুষের স্বার্থেই কলকাতা পুরসভা ওই মন্দিরের ভোগের গুণগত মান যাচাইয়ে উদ্যোগী হয়েছিল। সেই ভোগের নমুনা পরীক্ষা করে এফএসএসআই দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, মায়ের মন্দিরের রান্না করা ভোগ স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিবর্ধক। হেলাফেলা করে রান্না হয়নি, নিঁখুত পর্যবেক্ষণে প্রসাদ বানিয়েছেন চৌকস রাঁধুনি। নিটফল, মায়ের মন্দিরের ভোগ স্বাদ ও গুণমানে উৎকর্ষের শিখরে। বাগবাজার মায়ের মন্দিরের প্রসাদের দায়িত্বে অমল মহারাজ। ফি দিন এখানে খিচুড়ি ছাড়াও পাঁচমেশালি তরকারি, লাউয়ের তরকারি, পায়েস, চাটনি দেওয়া হয় ভোগে। প্রতিদিন আড়াইশো থেকে তিনশো মানুষ পাত পেড়ে খান।
নিরাপদ ভোগ তৈরি করে এফএসএসএআই-এর শংসাপত্র পেয়েছে মিন্টো পার্কের ইসকন মন্দিরও। দেশের সাতশোর বেশি মন্দিরের এমন ছাড়পত্র থাকলেও কলকাতার কোনও মন্দিরের দখলে এতদিন এই শংসাপত্র অধরা ছিল। কলকাতা পুরসভার খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষের নেতৃত্বেই শংসাপত্র পেল বাগবাজার মায়ের মন্দির আর মিন্টো পার্কের ইসকন মন্দির। প্রতিদিন গড়ে ন’শো মানুষ ভোগ খান কলকাতার মিন্টো পার্কের ইসকন মন্দিরে। ইসকনের প্রসাদের মেনুতে রয়েছে ভাত, ডাল, রুটি, সবজি। সবজির মধ্যে থাকে এঁচোড়, পটলভাজা, ঢেঁড়শভাজা, ঝিঙে-পোস্ত। ইসকনের দয়ালু নিতাই দাসের কথায়, পুরসভা থার্ড পার্টির মাধ্যমে আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সেই ট্রেনিংয়ে শেখানো হয়েছে কীভাবে পরিচ্ছন্নতা মেনে স্বাস্থ্যবান্ধব প্রসাদ তৈরি করতে হয়।
কেন্দ্রীয় সরকারের শংসাপত্র পেতে একাধিক ধাপ পেরোতে হয়। পুরসভা খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের আধিকারিক বিভাকর ভট্টাচার্যর কথায়, প্রথমে ফুড সেফটি অডিট হয়। এরপর হয় ফসট্যাক ট্রেনিং। এই ফুড সেফটি ট্রেনিং অ্যান্ড সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে শেখানো হয় কীভাবে স্বাস্থ্যকর প্রসাদ তৈরি করতে হয়। একাধিক বিষয় রয়েছে প্রশিক্ষণের মধ্যে। যার মধ্যে অন্যতম রান্নাঘরের পরিপাটি। হেঁশেলটা যথেস্ট পরিষ্কার কি না। পুরসভার খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, গ্যাস ওভেনটা হয়তো নড়বড়ে একটা জায়গায় ছিল।
তার বদলে গ্র্যানাইট, নিদেনপক্ষে একটা শক্ত সিমেন্টের স্ল্যাবের উপর রান্না করতে হবে। বিশেষ লক্ষ দিতে হয় টাটকা আনাজপাতি কেনার দিকেও। বিভাকর ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, খুচরো তেল নয়। কিনতে হবে প্যাকেটজাত তেল। যার মধ্যে রয়েছে ফুড সেফটি স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার স্ট্যাম্প। এর পর ঠিকমতো সবজি ধোয়া থেকে রান্না করার সময় ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। এই সব ক্ষেত্রে যোগ্যতা প্রমাণ করে তবেই মেলে ফুড সেফটি স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার ছাড়পত্র। দেশের প্রায় সাতশোর বেশি মন্দির এফএসএসএআই-এর ছাড়পত্র পেয়েছে। তার মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে কলকাতার বাগবাজার মায়ের মন্দির আর ইসকন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.