বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: উপচে পড়া জনজোয়ার, বৃষ্টি, শর্ট সার্কিট, তুমুল বিশৃঙ্খলা। আকর্ষণীয় পুজোমণ্ডপ দর্শনের আনন্দে নিমেষেই জল ঢেলে দিয়েছিল এতগুলো কারণ। ষষ্ঠীর সন্ধে থেকে তাই মণ্ডপে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কয়েকঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ফের আমজনতার মুখে হাসি ফুটিয়ে প্রবেশাধিকার দেওয়া হল কল্যাণীর (Kalyan) টুইন টাওয়ার মণ্ডপে। সপ্তমীর দিন বেলা বারোটা থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে মণ্ডপের দরজা।
মহাসপ্তমীর দিন বিকেল প্রায় সাড়ে পাঁচটা। প্রায় লক্ষাধিক মানুষ দাঁড়িয়ে লাইনে। শুধু নদিয়া জেলার মানুষ নন, বিভিন্ন জেলা থেকে একাধিক মানুষ এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কেউ নিজের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়েছেন লাইনে। আবার নবদম্পতিরা দাঁড়িয়েছেন লাইনে। কেউ আবার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি করে এসে দাঁড়িয়েছেন লাইনে। বয়স্ক মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে প্রতীক্ষা। ধৈর্যচ্যুতি ঘটে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। ধৈর্যচ্যুতির কোনও ব্যাপারই নেই। বরং চোখেমুখে ছিল যথেষ্ট আনন্দের ছাপ। কল্যাণীর লুমিনাস ক্লাব এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে তৈরি করা মালয়েশিয়ায় টুইন টাওয়ারের (Twin Tower) আদলে পূজামণ্ডপের সামনে তখন লক্ষাধিক মানুষের ভিড়।
শনিবার সন্ধ্যের পর থেকে শুরু হয়েছিল চূড়ান্ত বৃষ্টি। সেই বৃষ্টির মধ্যে ভিজেও লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। পুজো মণ্ডপ এবং পুজো মণ্ডপের ভেতরে আলোর খেলা এবং প্রতিমা দর্শনের জন্য তাঁরা অধীর অপেক্ষায় ছিলেন। ভিড় সামলাতে ওই পুজো কমিটির স্বেচ্ছাসেবক এবং পুলিশ কর্মীরা যথেষ্ট তৎপর ছিলেন। কিন্তু সন্ধের পরেই ঘটে যায় একটা অঘটন। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের (Short Circuit) কারণে তৈরি হয় বড়সড় সমস্যা। পুজো কমিটির তরফে মণ্ডপ দর্শন বন্ধ করে দেওয়ার হয়। তবে সপ্তমীতে (Saptami) ফের সুখবর মিলল।
এই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা অরূপ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ”রবিবার বেলা বারোটার পর থেকে আমরা প্রতিমা এবং মণ্ডপ দর্শনের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রচুর মানুষ অবশ্য তার আগে থেকেই অভিনব মণ্ডপ এবং প্রতিমা দর্শনের জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিলেন। তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য বেলা বারোটার পরে প্রতিমা এবং পণ্ডব দর্শন করার গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। যথেষ্ট সুশৃঙ্খলভাবে দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা যাতে প্রতিমা এবং মণ্ডপ দর্শন করতে পারেন,তার জন্য আমাদের ক্লাবের অনেক স্বেচ্ছাসেবক এবং একাধিক পুলিশকর্মীরা তৎপর রয়েছেন। যদিও ফের শর্ট সার্কিট হওয়ার আশঙ্কায় মণ্ডপের মধ্যে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ মণ্ডপের মধ্যে চেঞ্জার লাইটের মাধ্যমে এবং সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে যে একটা অন্যরকম পরিবেশের তৈরি হচ্ছিল, সেটা বৈদ্যুতিক কারণে আমাদেরকে বন্ধ রাখতে হয়েছে। স্বাভাবিক লাইট জ্বলছে। প্রতিমা এবং মণ্ডপ দর্শন করতে পারছেন মানুষ। তবে রবিবারও সকাল থেকেই আমাদের মালয়েশিয়ার টুইন টাওয়ারের আদলে তৈরি করা মণ্ডপ এবং প্রতিমা দর্শন করার জন্য প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ ভিড় করেছিলেন। দর্শনার্থীরা যাতে সুন্দরভাবে মণ্ডপ এবং প্রতিমা দর্শন করতে পারেন তার জন্য নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন রকমের ব্যবস্থা। আমাদের পুজো কমিটির একাধিক স্বেচ্ছাসেবক মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করছেন। সেইসঙ্গে রয়েছেন একাধিক পুলিশ কর্মীও। আশা করছি,আমাদের পুজো এবার রাজ্যের মধ্যে প্রথম হবে।”
এ প্রসঙ্গে নদিয়ার রানাঘাট পুলিশ জেলার একজন পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, ”রবিবার বেলা বারোটার পর থেকে মন্ডপ খুলে দেওয়ার পর একাধিক মানুষের ভিড় দেখা গিয়েছে।প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ভিড় করেছেন পুজো মণ্ডপ দর্শন করার জন্য এবং প্রতিমা দর্শন করার জন্য। আমরা পুলিশ কর্মীরা যথেষ্ট সচেতন এবং তৎপর রয়েছি। প্রায় ২৫০ পুলিশ কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.