শেখর চন্দ্র, আসানসোল: মায়ের মূর্তির কাঠামোয় তাঁদের বাড়ির মাটি এনেই প্রথম প্রলেপ পড়ে। কিন্তু তাঁরাই থাকেন পুজোয় ব্রাত্য। কোনও মন্দিরে তাঁরা অবাধে যাতায়াত করতে পারেন না। তাঁরা হলেন পতিতাপল্লির বাসিন্দা বা যৌনকর্মী। সেই যৌনকর্মীরা এবার নিজেরাই পুজোয় ফল কাটলেন, নিজেরাই ভোগ রান্না করলেন, নিজেদের ইচ্ছামতো পুজো করলেন, আবার পুষ্পাঞ্জলিও দিলেন। আর সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে আসানসোলের নিষিদ্ধপল্লি এলাকা চবকাতে।
দেশের অন্যতম বৃহৎ নিষিদ্ধপল্লি এলাকা কুলটির লছিপুর। আর সেখানেই ধুমধাম করে হচ্ছে এবার দুর্গাপুজো। আসানসোলের লছিপুর, চবকা, এবং সীতারামপুর। চবকা এলাকায় যৌনকর্মীর সংখ্যা ৫৪৫, লছিপুরে ৮৩২। পুজোয় জমজমাট থাকে লছিপুর ও চবকা। কিন্তু তাঁদের ছিল না কোনও পুজো। পুজোয় মাকে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও উপায় ছিল না। তবে সমাজের চোখে পিছিয়ে থাকা মহিলাদের পুজো শুরু হয়েছে এবার।
শুধু তাই নয়, এবার থেকে সরকারি অনুদানও মিলছে এই পুজোয় (Durga Puja 2022)। শুধু যৌনকর্মীদের পুজো নয়, হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি ছবিও ধরা পড়েছে এখানে। কারণ এই পুজো কমিটির সম্পাদক হলেন বানেরা বিবি, সভাপতি মর্জিনা বিবি। পুজোয় পুরোভাগে কবিতা, পায়েল, টুম্পা,লতা, রীতারা। দুর্বার মহিলা সমিতির পক্ষে রবি দত্ত জানান, যৌনকর্মীদের এই পুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকেন পাশের গ্রাম চন্দনতলা, বটতলা, এবং ঘাটালের গ্রামের বাসিন্দারা। যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে নাচ গান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় চারদিন।
জানা গিয়েছে, বেলরুইয়ের জমিদার, রায় পরিবারের হাত ধরেই নাকি এখানে এসেছিলেন পতিতারা। তাঁদেরই জমিতে এখানে নিষিদ্ধপল্লি তৈরি হয়েছে। আর সেই পরিবারের বদান্যতায় এবারে দুর্গাপূজা শুরু হল। সার্বিকভাবে যৌনকর্মীরা উদ্যোগ নিলেও এই রায় পরিবারের সদস্যরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। জমিদার বাড়ির পক্ষে শিবদাস রায় বলেন, ‘‘আমরা এখনও পর্যন্ত যৌনকর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। এই যে অভিনব পুজো, সে পুজোতেও কিন্তু আমরা পাশে তাদের রয়েছি।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.