Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2021

Durga Puja 2021: জৌলুসহীন জমিদারবাড়ি, উত্তর দিনাজপুরের বাহিন বাড়ির পুজো এখন বারোয়ারি

জঙ্গলঘেরা জমিদার বাড়ি পুজোর ক'টাদিন কোলাহলে মুখর হয়ে ওঠে।

Past are the glorious days, North Dinajpur zamindar house Durga Puja goes public | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 28, 2021 6:11 pm
  • Updated:September 28, 2021 7:09 pm  

শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: আস্ত ইতিহাস যেন থমকে দাঁড়িয়ে আছে এখানে। এই প্রজন্ম শুধুই চেয়ে দেখছে প্রাচীন স্থাপত্য। খয়েরি রঙের সুরম্য ইমারত। সারি সারি ইটের পাঁজর থেকে সবুজ গাছগাছালির জঙ্গল উঁকি দিচ্ছে অবিরত। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে জমিদারী প্রথার এক টুকরো নিদর্শন দাঁড়িয়ে বিহার ঘেঁষা উত্তর দিনাজপুরের (North Dinajpur) খরস্রোতা নাগর নদীর পাড়ে। দীর্ঘ অবহেলায় বিবর্ণ হয়েছে সেদিনের রাজরাজত্বের সুউচ্চ বাড়ি। তবু শরৎ এলে ঝলমলে স্মৃতিচিহ্নটুকু আঁকড়ে সাধারণ বাসিন্দাদের অন্তহীন উচ্ছ্বলতা। দেবী দুর্গা আসছেন যে! আসছে দুর্গাপুজো (Durga Puja 2021)।

Advertisement

করোনার (coronavirus) কাঁটা পেরিয়ে এবার ৯৪ তম বর্ষে পা দিল বাহিন জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো। তবে অনেক বছর আগেই অতীত হয়েছে বাহিন জমিদারবাড়ির দেবী আরাধনা। সেই সাজানো গোছানো তালুক আর নেই। সর্বজনীন পুজোয় পরিবর্তিত হয়েছে আজ। তবে ইতিহাসবিদ আনন্দগোপাল ঘোষের দাবি, জমিদারবাড়ির পুজো বারোয়ারি পুজোর ইতিহাস মাত্র ৩৫ বছরের।

[আরও পড়ুন: শক্ত হয়ে গিয়েছিল হৃদপিণ্ডের পেশি, SSKM হাসপাতালে বিরল অস্ত্রোপচারে নতুন হার্ট পেল রোগী]

নদীপাড়ের ঝোপজঙ্গলের আড়াল থেকে দেখা যায় দুর্গা দালান। রাজবাড়ির মতো কংক্রিটের চোখধাঁধানো স্থাপত্য। একসময় হাতি বেঁধে রাখার কংক্রিটের ছোট ছোট স্তম্ভগুলোর একটির চিহ্ন এখনও জ্বলজ্বল করছে। ঘোড়ার আস্তাবলের চিহ্ন আজও দেখা মেলে। তখন রাজকীয় মেজাজে দুর্গাপুজো হত। অফুরান জাঁকজমক। বাংলা-সহ বিহারের প্রত্যন্ত এলাকার উৎসাহী মানুষজন নদী পেরিয়ে জমিদার ঈশ্বরপ্রসাদ রায়চৌধুরীর দুর্গাপুজোয় শামিল হতেন।

সেদিনের প্রাসাদোপম এখন ধুলো আর জঙ্গলের নিশ্চিত ডেরা। পলেস্তারা খসা দেওয়ালের বুকে বাসা বেধেছে বট অশ্বত্থ। তবে প্রায় হানাবাড়িতে পরিণত হওয়া য দ্বিতল বিশিষ্ট বিশাল বাড়ির কয়েকটি ঘর নিয়ে এ বছর পুলিশ ক্যাম্প গড়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা দুর্গেশ ঘোষ এবং শ্যামল চৌধুরী বলেন, ”অষ্টাদশ শতকে চূড়ামনের জমিদারি বাড়ি স্থানান্তরিত হয় বাহিনে। বাহিনের প্রথম জমিদার ঈশ্বরপ্রসাদ রায়চৌধুরী মহাসমারোহে প্রথম দুর্গাপুজো আয়োজন করেন। ওপাড়ে বিহারের বাসিন্দারা নৌকা করে নদী পেরিয়ে জমিদারবাড়ির পুজোয় অংশ নিতেন। পুজোর চারদিন গ্রামবাসীদের হেঁশেলে উনুন জ্বলত না। জমিদারবাড়িতেই আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে দু’বেলা খাওয়া ব্যবস্থা হত।”

পুত্র গগনেন্দ্রপ্রসাদ রায়চৌধুরীর তিন কন্যা ছিল। কোনও পুত্রসন্তান ছিল না। মেয়ের ঘরের উত্তরসূরী রুদ্রেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরীর দায়িত্বে কয়েকবছর জমিদারবাড়ির দুর্গাপুজো হয়েছিল। ভারত স্বাধীন হতেই ইংরেজরা পাততাড়ি গুটোতেই স্তব্ধ হয়ে যায় জমিদারবাড়ির জৌলুসময় দুর্গাপুজো।

দীর্ঘবছর পুজো বন্ধ ছিল। সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে পুজোর মন মেজাজ। এখন গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে দেবী আরাধনার আয়োজনে সামিল হন। তবে সেদিনের ঝাঁ চকচকে আড়ম্বর না থাকলেও সেরা মহোৎসবের প্রাণ জেগে উঠে এইসময়।জঙ্গলভরা ইমারতের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জলভরা নদী।দুপুরে গাঁয়ের বধূরা নদীঘাটে স্নান সেরে প্রায় অন্ধকারে ঢাকা ঘরমুখো হন। প্রবীণের অনেকেই এখনও মধ্যাহ্নে জিরোতে বিস্মৃতিতে তলিয়ে যাওয়া জমিদারবাড়িতে ভিড় জমান। সারা বছরভর পর্যটকদের আনাগোনা আজও অব্যাহত। পাশেই হিন্দু মিলন মন্দিরে এখন দেবীপুজোর প্রস্তুতি চলছে।

[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে পুরোদমে শুরু পুজোর প্রস্তুতি, সেজে উঠছে ৪০০ বছরের পুরনো নন্দকুমারের বনেদিবাড়ি]

তবে মহামারীর তাণ্ডবে এবার নমো নমো করে পুজোর আয়োজন চলছে।কয়েক বছর আগে মন্দির থেকে চার কেজি ওজনের সোনার দুর্গাপ্রতিমা-সহ সিংহবাহিনী চুরি হয়ে যায়। ভগ্নদশা ভবনের দোতলায় পর্যটকদের উঠেনামা সম্প্রতি বন্ধ রয়েছে। তবে গ্রামবাসীরা পুজোর ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। আড়ম্বর নেই ঠিকই, পুজোর নির্মল আনন্দে ভাঁটা পড়েনি।অষ্টমীতে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি অন্নভোগ পৌঁছে দেওয়ার রীতি অটুট। সাবেক রীতি মেনে একচালায় দেবী দুর্গা পূজিত হন।

পুজো কমিটির সদস্য সমর দাস কিংবা বিলু দাসদের কথায়, ”ছোটবেলায় জমিদারবাড়িতে পুজোয় প্রসাদ খেতে আসতাম। এখন আমরাই সেই পুজোর আয়োজন করছি। তফাত শুধু, জমিদার আর নেই। এখন এটা বারোয়ারি পুজো।” রায়গঞ্জ শহর থেকে প্রায় ১১কিলোমিটার দুরে বাহিন প্রত্যন্ত গ্রাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শোভা আর ইতিহাস দেখতে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর সহ উত্তরবঙ্গের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকদের আনাগোনা বছরভর।পরিত্যক্ত প্রাচীন ইমারতের অন্দরে প্রবেশ করলেই লহমায় মন আলোড়িত হয়ে উঠবে। মনে হবে হারানো ঘটনার উৎসভূমির সামনে আপনি। আর দেবী আরাধনার পরতে পরতে ইতিহাসের হাতছানি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement