এবছর করোনা আবহেই পুজো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাবগুলিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি৷ কলকাতার বাছাই করা কিছু সেরা পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন অরবিন্দ সেতু সর্বজনীন দুর্গাপূজা সমিতির পুজোর প্রস্তুতি৷
বিশ্বদীপ দে: ‘পথের পাঁচালী’-র (Pather Panchali) সঙ্গে বাঙালির প্রাণের সম্পর্ক। বিভূতিভূষণের কলম থেকে তাকে সেলুলয়েডে এনেছিলেন সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray)। সংস্কৃতিমনা বাঙালির হৃদয়ে সেই থেকেই রয়ে গিয়েছে এক টুকরো নিশ্চিন্দিপুর। সেখানে হরিহর রায়ের পরিবারের দারিদ্রের সঙ্গে চিরকালীন পল্লিজীবনের জলছবি মিলেমিশে আছে। অপু-দুর্গার একঘেয়ে জীবনে বৈচিত্র বয়ে এনেছিল দুর্গাপুজো। ধনীর বাড়ির পুজোর প্রাঙ্গনে ভাইবোনের উৎসবমুখর হয়ে ওঠার সেই মুহূর্তই এবার অরবিন্দ সেতু সর্বজনীন দুর্গাপূজা সমিতির পুজোর (Durga Puja 2020) থিম। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষেই এই বিশেষ পরিকল্পনা। ‘পাঁচালীর দুগ্গা’।
এর আগে ২০১৪ সালের পুজোতে সত্যজিৎ রায়ের করা প্রায় তিনশোটি বইয়ের মলাট দিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল এই ক্লাব। এবার আবারও সত্যজিতে ফেরা। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা মিন্টু পাত্র বলছিলেন, ‘‘আমরা পুরো প্যান্ডেলটাকে দু’ভাবে সাজাচ্ছি। হরিহর রায়ের বাড়ির পাশাপাশি দেখানো হয়েছে এক ধনীর বাড়ি। যে বাড়িতে দুর্গাপুজো হত। ওই বাড়ির মেয়ে ছিল অপুর দিদি দুর্গার বান্ধবী। ছবির সেট অনুসরণ করে ধনী ও দরিদ্রের এই বৈপরীত্যকে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।’’
প্যান্ডেলে থাকবে দু’টি দুর্গা প্রতিমা। সত্যজিতের ছবিতে দেখানো দুর্গাপ্রতিমার অনুসরণে একটি মূর্তি, যাঁর হাতে কাশফুল। আর থাকবে মায়ের মৃণ্ময়ী মূর্তি। দ্বিতীয় মূর্তিটি পুজোয় ব্যবহৃত হবে। মূর্তি তৈরি করছেন শিল্পী গোপাল পাল। আর পুজোর এই থিমকে ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব স্বপন পালের হাতে। দর্শনার্থীরা যখন প্যান্ডেল থেকে বেরোবেন তখনও থাকছে চমক। অপু-দুর্গার ট্রেন দেখার সেই বিশ্ববিখ্যাত দৃশ্যের সাক্ষী হওয়ার সুযোগ হবে তাঁদের। নকল কাশবন আর সেই সঙ্গে ট্রেনের প্রকাণ্ড ছবি। চোখের সামনে আবারও জীবন্ত হবে পাঁচের দশকে তৈরি হওয়া এক ক্লাসিক ছবির অনতিক্রম্য দৃশ্য। এমন অভিনব প্রয়াসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন স্বয়ং সত্যজিৎ পুত্র চিত্র পরিচালক সন্দীপ রায়।
করোনাকালে পুজোর বাজেট অন্যবারের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ হয়ে গিয়েছে। তবুও অন্যবারের মতো সমাজসেবামূলক ভাবনাকে এবারও সঙ্গে নিয়ে চলছে অরবিন্দ সেতু সর্বজনীন। দুশোজন পথশিশুকে জামাকাপড় দেওয়ার পরিকল্পনার পাশাপাশি থাকবে মেডিক্যাল ক্যাম্পও। এদিকে করোনার কারণে মানা হচ্ছে বাড়তি সতর্কতাও। প্যান্ডেলে থাকবে স্যানিটাইজার চ্যানেল, থার্মাল স্ক্রিনিং। পুজোয় ব্যবহৃত হবে গোটা ফল। দর্শনার্থীদের উদ্দেশে মিন্টুবাবুর বক্তব্য, ‘‘রাতেই যে আসতে হবে তার মানে নেই। দিনের যে কোনও সময় আসুন। গাইডলাইন মেনে চলুন। সুস্থ থাকুন।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.