ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: “হ্যালো? শুনছেন?”
“হ্যাঁ। বলুন।”
“ওম। জটাজুট সমাযুক্তাঙ্গ অর্ধেন্দু শেখরানং,,,,।”
কলকাতা থেকে প্রায় ৩,৩১০ কিলোমিটার দূরে এক আটপৌরে বঙ্গসন্তান সাত সকালে শুদ্ধাচারে একই মন্ত্র উচ্চারণ করে ষষ্ঠীর কল্পারম্ভ করলেন। জায়গার নাম থাইল্যান্ড। রাস্তার নাম রামক্যান্ট হ্যাং রোড। করোনা আবহে স্রেফ ভিডিও কলে এইভাবে টানা আড়াই ঘণ্টা ধরে কলকাতার পুরোহিতের উদ্যোগে নির্বিঘ্নে মহাষষ্ঠীর পুজো সমাধা হল। পুজো শেষ করে অবিনাশ মাঝির সাময়িক স্বস্তি। সকাল এগারোটার মধ্যে গাড়ি ড্রাইভ করে পৌঁছে গেছেন নিজের কর্মক্ষেত্রে।
পাঁজি মেনে আজ শুক্রবার সপ্তমী থেকে টানা চারদিন এইভাবেই মন্ত্র পড়ে ভক্তিভরে দুর্গাপুজো হবে থাইল্যান্ডে। স্থানীয় প্রশাসনের কড়া নজরদারি ও নির্দেশ, কোনও ভাবেই পুজোকে কেন্দ্র করে ভিড় করা যাবে না। তাই ইচ্ছে থাকলেও আগমনী মোহনা ক্লাবের এই পুজোয় এবার তেমন বাঙালি অংশ নিতে পারছেন না। বলে কয়ে কোভিড বিধিনিষেধ মেনে মাত্র ১৫টি বাঙালি পরিবারের জনা পঞ্চাশেক হাজির হবেন বলে জানিয়েছেন ক্লাব প্রেসিডেন্ট অবিনাশবাবু।
ফি বছর দুর্গাপুজোর এক সপ্তাহ আগে থাইল্যান্ডে হাজির হন নিতাই চক্রবর্তী। থাইল্যান্ডে বাঙালি সংগঠনের পুজো ওঁর কাছে এক অন্য স্বাদ। একইসঙ্গে রথ দেখা আর পুজো। বিদেশ ভ্রমণ আর মহাপুজো দুটোই হয়। কিন্তু এবার অতিমারী করোনার দাপট বুঝতে পেরে কয়েকমাস আগেই আগমনী মোহনা ক্লাবের সদস্যদের দুশ্চিন্তা শুরু হয়। কীভাবে পুজো হবে? আর কেই বা পুজো করবেন? তবে হাল ছাড়েননি নিতাই চক্রবর্তী। একমাস ধরে রোজ নিয়ম করে মোবাইলে পুজোর সমস্ত উপকরণ জোগারের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী সব উপাচার জোগাড় হয়েছে।
কোভিড আতঙ্কে থাইল্যান্ড অধরা। তবে মানিকতলা হরতকি বাগানে নিজের বাড়ির মন্দিরে বসেই থাইল্যান্ডের মোহনা ক্লাবের মহাপুজোর তন্ত্রধারক হয়ে মন্ত্র পড়েছেন। সামনে খোলা ল্যাপটপে ভেসে উঠছে তিন হাজার মাইল দূরের পুজোর ছবি। চন্ডীস্তোত্র ভেসে এসেছে স্পষ্ট।
প্রায় ছাব্বিশ বছর থাইল্যান্ডের বাসিন্দা অবিনাশ মাঝি পেশায় ফিনান্সিয়াল কনসালটেন্ট। সতেরো বছরের পুরোনো পুজো। বাড়িতে মন্দির থাকলেও এতদিন ক্লাবেই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পুজো হয়েছে। কিন্তু এবার সেসব বন্ধ। তাই পঞ্চমীর সকালে স্থানীয় মন্দিরে ভূমি পুজো করে সেই মাটি বাড়ির মন্দিরে আনা হয়েছে। এদিনের ষষ্ঠী পুজো সেরে অফিস। অবিনাশবাবুর কথায়, “হতে পারে করোনা ভাইরাসের দাপট। তবে পুজো হবেই। আসলে এই পুজো বাঙালির। আমাদের সঙ্গে এই পুজোয় সমানভাবে অংশ নেন বাংলাদেশিরাও।” স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ বিকেল থেকে সব বন্ধ। তাই পালা করে এলাকার বাঙালি পরিবার চারদিন আসবেন। এদিন বিকেলে মোবাইলে যোগাযোগ করতেই উচ্ছসিত প্রৌঢ় অবিনাশবাবু বলেছেন “মহাসপ্তমীতে পুজোর সময় একটাই প্রার্থনা করব। সবাই ভালো থাকুন। দ্রুত অবস্থা স্বাভাবিক হলে একবার কলকাতায় যেতেই হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.