সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: একদিকে কথাকলি নৃত্যভঙ্গিমা। তার পাশে সারি সারি গজরাজ। এদের ঘিরে পাথরের অপরূপ কারুকাজে খোদাই করা নানা মূর্তি। মাঝখানে দুর্গার বাহন। প্রবেশপথে রঙ্গনাথ মন্দিরের পাশেই বড় রথ। মূল মীনাক্ষী দেউলের নাটমন্দিরে রঙাবাহারি ঝাড়বাতি। পাশেই দুর্গাযন্ত্র। দু’পাশে ভৈরব। মাঝের বাতিস্তম্ভ থেকে আলো ঠিকরে পড়ছে সবকটি দেউলে। পুরুলিয়ার ভামুরিয়া যেন একটুকরো দক্ষিণ ভারত!
শিল্পী অনির্বাণ দাসের ভাবনায় মণ্ডপজুড়ে দক্ষিণী সংস্কৃতি। তাই পুরুলিয়ার ভামুরিয়া বাথানেশ্বর সর্বজনীন দুর্গোৎসব পুজো কমিটির থিম ‘দখিনা হাওয়া’। মন্দিরের শৈলী দেখে চোখ ফেরানোই যাচ্ছে না। চতুর্থীর সন্ধ্যায় এই পুজোর দরজা খুলে গেল একসময়ের হার্টথ্রব, বলিউড অভিনেত্রী জুহি চাওলার হাত ধরে। সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ অভিনেত্রীর হাতে যখন প্রদীপ জ্বলল, মনে হল, এক নক্ষত্র স্পর্শে জ্বলে উঠল দেবীপূজার আলো। তিনি বললেন, দুর্গাপুজো নিয়ে বিশেষ ধারণা ছিল না। কিন্তু ভামুরিয়ায় এসে বাংলার সেরা উৎসব সম্পর্কে অনেকটাই জানা হল। সব দেখে তিনি আপ্লুত। আর মণ্ডপের বাইরে তখন তাঁকে দেখতে উপচে পড়া ভিড় জনতার।
এই ভিড়ভাট্টার মধ্যেই কথা হচ্ছিল শিল্পী অনির্বাণ দাসের সঙ্গে। বললেন, “মন্দিরের শৈলীতে এই মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। মণ্ডপে প্রবেশ করলেই বোঝা যাবে কীভাবে আমরা দক্ষিণ ভারতের সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছি। স্থাপত্য, পুরাকীর্তি থেকে ঐতিহ্য–বিশ্বাস। সব মিলেমিশে গিয়েছে। তাই তো মণ্ডপজুড়ে দখিনা হাওয়া।”
শুধুমাত্র প্লাই আর ফাইবারের কাজে যেভাবে মণ্ডপে স্থাপত্যগুলো তুলে ধরা হয়েছে দেখে মনে হচ্ছে সবটাই পাথরে খোদাই করা। মহিষাসুরমর্দিনী, শিব–পার্বতী, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী ও নবগ্রহের মূর্তি। মায়াবি আলোয় যেন চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। এ তো গেল বাইরে স্থাপত্যকীর্তি। মণ্ডপের ভিতরে ঢুকে চোখে পড়ছে, দক্ষিণ ভারতের মন্দিরগুলির মতো ছোট্ট জলাশয়। যেখানে মানত করা ঘন্টা ঝোলানো। চারপাশের বাহারি আলোয় এই জলাশয়ও আলাদা শোভা পেয়েছে। মণ্ডপের প্রবেশপথে চল্লিশ ফুট উঁচু রঙ্গনাথ মন্দিরেও সুন্দর কারুকাজে তৈরি অসংখ্য ছোট–ছোট মূর্তি। আর ষাট ফুটের মীনাক্ষী মন্দিরে অধিষ্ঠান দেবী দুর্গা ও তাঁর ছেলেমেয়েদের। প্রতিমাতেও দক্ষিণী ছোঁয়া।
ভামুরিয়ার এই চোখধাঁধানো পুজোমণ্ডপে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ ও শিবের জন্য তৈরি হয়েছে পৃথক মন্দির। আয়োজকরা বলছেন, পুজো হবে এখানেও। সহশিল্পী ভাস্কর সরকারের কথায়, “এই কারুকাজ তুলে ধরতে কাঠ, প্লাই আর ফাইবার ছাড়া সেভাবে কিছুই ব্যবহার হয়নি। পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই মা উমার এই মণ্ডপ একেবারেই ইকো–ফ্রেন্ডলি।” সন্ধ্যায় মণ্ডপের উদ্বোধনেও দক্ষিণী নৃত্যকলা আপনাকে সেই দক্ষিন–ভূমেই নিয়ে যাবে, এমনই দাবি আয়োজকদের।
দেখুন ভিডিও:
ছবি: অমিত সিং দেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.