সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মানুষ আর বন্যপ্রাণের সহাবস্থানের আদর্শ পরিবেশ আজকের দিনে তেমন অনুকূল নয়। ফলে পরস্পরের মধ্যে বেঁচে থাকার একটা অদৃশ্য লড়াই চলতেই থাকে। জঙ্গল এলাকার মানুষজনের কাছে অনবরত এই লড়াই আরও কঠিন। সেই সংগ্রামের সঙ্গী হয়ে বন্যপ্রাণ এবং মনুষ্যজাতির একটা মেলবন্ধন, পারস্পরিক সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরির চেষ্টায় নিরন্তর কাজ করে চলেছে ব্যাঘ্র সংরক্ষণ সংস্থা ‘শের’। রাজ্যের প্রত্যন্ত বনাঞ্চলের বাসিন্দা, যাঁদের রোজ সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতে হয়, তেমনই বেশ কয়েকটি কচিকাঁচাকে একটু অন্যভাবে প্রকৃতির পাঠ দিতে তৎপর ‘শের’ এবং ‘বন্দিপুর প্রকৃতি প্রেমিক সমিতি’। এদের যৌথ উদ্যোগে এবার প্রথম খুদেরা নিজেদের এলাকা থেকে বেরিয়ে শহর কলকাতার বৃহত্তর জগতে পা রাখল। দিনভর পুজোমণ্ডপ দর্শন করে নতুন অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে ফিরল।
বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ নিয়ে কাজের সূত্রেই ‘শের’ এবং ‘বন্দিপুর প্রকৃতি প্রেমিক সমিতি’র সদস্যরা দেখেছেন, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে হরিপাল ব্লক ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার আদিবাসী ও অন্যান্য জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত অনেক মানুষই প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছেন। তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্নভাবে প্রকৃতির উপর তাঁদের প্রভাব ও নির্ভরতা অপরিসীম। সে জলার মাছ ধরাই হোক, বা মাঠের ইঁদুর মারা – প্রকৃতি থেকে খাদ্যের অনেকটা অংশ সংগ্রহ করতে অভ্যস্ত এঁরা। এগুলো কখনও প্রয়োজন, কখনও শুধুই অভ্যেসবশত করা হয়। কোথাও বা জড়িয়ে থাকে ঐতিহ্যের ইতিহাসও। যেমন, প্রথাগত শিকার উৎসবের সময় এঁরা কটাস, গন্ধগোকুল, ভাম ইত্যাদি শিকার করে থাকেন, যা প্রকৃতির স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করে জীবজগতকে বড়সড় ক্ষতির মুখে দাঁড় করায়।
অপরদিকে, আবার এই মানুষগুলোই গাছপালা,জীবজন্তু পরিবেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, বিভিন্ন ঔষধি গাছের প্রাত্যহিক ব্যবহারিক জীবনে কী গুণাগুণ – তা অন্য সকলের থেকে অনেক বেশি জানেন। জীববৈচিত্র বাঁচিয়ে রাখতে এঁদের সহযোগিতা অপরিহার্য। এইরকম কয়েকটি জনজাতি হরিপাল ব্লকের আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বাগানবাটি, দঁক, কাসিমেরপুর, বাগানপাড়া, জেজুর – এসব জায়গায় মূলত তাঁদের বসবাস। এই সমস্ত পরিবারের খুদে সদস্যদের নিয়ে এই পুজোয় কিছু সামাজিক অনুষ্ঠান, পুজোমণ্ডপ ভ্রমণের আয়োজন করা হয়েছিল ‘শের’ এবং ‘বন্দিপুর প্রকৃতি প্রেমিক সমিতি’র তরফে। যাঁদের কাছে কলকাতার ঠাকুর দর্শন কল্পনাতীত। তারাই দেখে গেল শহরের বিভিন্ন বিখ্যাত পুজো। মূল উদ্যোক্তা ‘শের’-এর প্রতিষ্ঠাতা জয়দীপ কুণ্ডু।
আর দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে এই জনসংযোগের মাধ্যমে ছোটদের বোঝানো হয়, শিকার উৎসবে শুধু প্রথা বজায় রাখতেই বন্যপ্রাণকে নিহত করাটা কতটা ক্ষতিকারক বর্তমান পরিবেশের প্রেক্ষাপটে।এর ফলে তাঁরা নিজেরা সচেতন হওয়ার পাশাপাশি মা,বাবাদেরও এসব বোঝাতে সক্ষম হবে বলে আশা বন্যপ্রাণ সংরক্ষকদের। এসব জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমেই বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে এঁদের ভূমিকা আরও সদর্থক করে তুলতে উদ্যোগী ‘শের’ ও ‘বন্দিপুর প্রকৃতি প্রেমিক সমিতি’। শুধু একদিন এমন আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নয়, বছরভর এভাবেই এসব আদিবাসী সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে, তাঁদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করে উদ্যোক্তারা নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন, এই শুভেচ্ছা তাঁদের সকলের জন্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.