ইসারপারের শারদ সম্প্রীতি। তিথি মেনে, শাস্ত্রমতে এই প্রথমবার উমা আরাধনায় মেতে উঠবেন জার্মানির মিউনিখ শহরের বাঙালিরা। প্রবাস জীবনে কোথা থেকে পেলেন এই অনুপ্রেরণা, কীভাবেই বা প্রস্তুতি নিচ্ছেন – সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের জন্য মিউনিখ থেকে কলম ধরলেন অনুভব দাশগুপ্ত।
দক্ষিণ জার্মানির সমৃদ্ধ বাভারিয়া রাজ্যের রাজধানী মিউনিখ। ইসার নদীর তীরে অবস্থিত, পাগলা রাজা লুডউইগ ও ফুটবল সম্রাট কায়সার ফ্রানজ বেকেনবাওয়ারের জন্মস্থান এই ইতিহাস সমৃদ্ধ প্রাচীন শহর বহু শতাব্দী ধরে বহু উল্লেখযোগ্য ঘটনার সাক্ষী। এই শহরের গর্ব যেমন ফুটবল, বেদনা ১৯৭২ সালের অলিম্পিক হত্যাকাণ্ড, তেমনই কুখ্যাত গত শতাব্দীর প্রথমার্ধে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন রাজনৈতিক উত্থান।
এই সব নিয়েই মিউনিখ, আর মিউনিখ নিয়ে কিছু ঘর বাঙালি। বিদেশে বাঙালিয়ানা খাোঁজার চেষ্টায় যাদের যৌথ প্রয়াস – সম্প্রীতি মিউনিখ – একটি ক্রমর্বধমান যৌথ পরিবার।
২০১৪ সালে সম্প্রীতি মিউনিখের পথ চলা শুরু বিজয়া সম্মিলনী দিয়ে। তারপর ইসার দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। রূপায়িত হয়েছে বহু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এসেছেন সাহানা বাজপায়ী, সৌরেন্দ্র, সৌম্যজিৎ। হয়েছে দারুণ সব ছোটদের অনুষ্ঠান, পিকনিক, বসন্তোৎসব। এমনকী ২০১৮ সাল থেকে সরস্বতী পুজোও। বাকি রয়ে গেছে খালি বাঙালির সেরা পার্বণ – শারদোৎসব!
“চার বছর হয়ে গেল অ্যাসোসিয়েশন চলছে, মিউনিখের একমাত্র ভারতীয় বাঙালি সংগঠন, বচ্ছর বচ্ছর নিয়ম করে বৈশাখী আর দীপাবলীর অনুষ্ঠান করছি, শুকনো বিজয়া সম্মিলনীতে করে আর ভাল্লাগছে না, চলো না শুরু করি।”
এটা সত্যি কেউ এভাবে মুখে বলছিল কি না, মনে পড়ে না। কিন্তু মনে মনে যে সব্বাই বলেছিল, তা নিয়েও কোনও সন্দেহ নেই। আর এই সম্মিলিত মনের ডাকেই শুরু হল পরিকল্পনা। ২০১৯এ সম্প্রীতির পাঁচ বছরের জন্মদিন – আর পাঁচে পা দিয়েই হবে সম্প্রীতির নতুন যাত্রা শুরু – শারদ সম্প্রীতি!
প্রথম পুজো, বহু অজানা অনুচ্ছেদ – অনুষ্ঠান ভবন নির্বাচন, ঠাকুরের বায়না,কলকাতার পুরোহিতের আসার ব্যবস্থা, ফুল কোথা থেকে আসবে, কলাগাছ কোথা থেকে পাওয়া যাবে, যজ্ঞ কিভাবে হবে, সে বহু অনুত্তরিত প্রশ্ন। কিন্তু প্রাথমিক প্রশ্ন, পুঁজি। সদস্যদের বাৎসরিক দান থেকে কোনওরকমে সংগঠন চলে, দুর্গাপুজো সম্ভব নয়।
কিন্তু এ বাধাও লঙ্ঘন হল, এগিয়ে এলেন সমস্ত সদস্য। অভূতপূর্ব সমর্থনে গড়ে উঠল পুঁজি। কুমোরটুলির অমরনাথ ও কৌশিক ঘোষের কাছে বায়না দেওয়া হল ঠাকুরের। সঙ্গে জয়ঢাক। মা জাহাজে চেপে সাত সমুদ্র পাড়ি দিলেন এপ্রিলের শেষে। ১০ই জুন পৌঁছেছেন তাঁর বিদেশি পরিবারের কাছে। পুজো হচ্ছে, পুজো হবে, আসছে বছর আবারও হবে।
থাকবে নতুন জামা, আনন্দমেলা, নাচ, গান, ভোগ, নৈশভোজ আর প্রাণভরা আনন্দ। থাকবেন বহু সদস্যের মা-বাবা, অভিভাবকরূপে। আর থাকবে সম্প্রীতির ছোটরা, যাদের কাছে পুরনো প্রজন্মের উপহার এটাই।
আগামী ৪ থেকে ৮ অক্টোবর, ২০১৯। মিউনিখে প্রথমবার কোনও ভারতীয় বাঙালি সংগঠন নিয়ম মেনে পালন করবে সর্বজনীন দুর্গোৎসব – শারদ সম্প্রীতি ২০১৯।
বোধন থেকে বিসর্জন, সবার কাছে নিমন্ত্রণ!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.