সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: থিম, অভিনবত্বের বিচারে সেরার লড়াই পুজোর ক’টা দিন ছিল মণ্ডপে মণ্ডপে। এবার একদম শেষ প্রহরে সেই লড়াই চলে এসেছে রেড রোডে। এক্কেবারে রাজপথে অগুনতি মানুষের ভিড়ে নিজেদের ছাপিয়ে সেরার তকমা পেতে লড়াইয়ের জায়গা পুজোর কার্নিভ্যাল। এই লড়াইয়ের মূল পৃষ্ঠপোষক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সামনেই আজ, শুক্রবার রেড রোডে বিশেষ শোভাযাত্রায় অংশ নেবে অন্তত ৭৫টি পুজো কমিটি।
শুধুমাত্র বড়, নামী, প্রচারের আলোয় থাকা পুজো কমিটিগুলিই নয়, এই লড়াইয়ে স্থান পেয়েছে কলকাতা ও শহরতলির প্রত্যন্ত এলাকার প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকা ছোট পুজোও। বাঙালির এই উৎসবে মুছে গেছে ছোট-বড়র অদৃশ্য ভেদাভেদও। পুজোর কার্নিভ্যালে চমক দিতে প্রায় সব কমিটিই ‘থিম’ গোপন রাখছে। শেষবেলার প্রতিযোগিতা হিসাবে আজ, শুক্রবার রেড রোডের কার্নিভ্যালকেই মেগা মঞ্চ হিসাবে ধরছে তারা। তবে বেশিরভাগ উদ্যোক্তা পুজোর থিমকেই কার্নিভ্যালের থিমের সঙ্গে মিশিয়ে দেবেন। বিকেল চারটের কিছু পরেই শুরু হয়ে যাবে এই বিশেষ শোভাযাত্রা। মুখ্যমন্ত্রী নিজে মূল মঞ্চে থাকবেন। এদিনও তিনি গোটা ব্যবস্থাপনার তদারকি করেছেন।
আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কেও। তেমনই পাশের বিশেষ মঞ্চে থাকবেন বিদেশি রাষ্ট্রদূত-সহ প্রতিনিধিরা। তবে এই কার্নিভ্যালে ‘পাস’ পাওয়ার ব্যাপারেও সাধারণ মানুষের মধ্যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। অনেকেই পুজো উদে্যাক্তা বা মন্ত্রী-বিধায়কদের ধরছেন, যদি একটা পাস পাওয়া যায়। যদিও কোনও আমন্ত্রণপত্র ছাড়াও এই শোভাযাত্রা দেখা যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে তো বটেই, আরও নানা চ্যানেল, ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে চতুর্থ কার্নিভ্যাল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের বিসর্জন শোভাযাত্রা।
গত কয়েক বছর ধরে এই কার্নিভ্যাল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একসঙ্গে সেরা পুজোগুলো অনুভব করা যাচ্ছে। এবারেও দক্ষিণের শহরতলির পুজো বা উত্তরের বরানগরের পুজো, মেটিয়াবুরুজ, হাওড়া শিবপুরের পুজোও অংশ নেবে। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণেও সেরার পুরস্কার দিচ্ছে রাজ্য। দেশ-বিদেশের অতিথিরা হাজির থাকেন কার্নিভালের মঞ্চে। সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে বিশেষ অতিথিদের বসার জন্যে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজারের বেশি মানুষের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অতিথি হিসাবে থাকবেন প্রায় চার হাজার মানুষ। রাত বারোটা থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রেড রোড।
লাভার্স লেন, কুইন্স ওয়ে, এসপ্ল্যানেড র্যাম্প বন্ধ রাখা হবে। গাড়ির যাত্রাপথ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বেশ কিছু রাস্তায়। গভর্নমেন্ট প্লেস, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ, চৌরঙ্গি রোড, ক্যাথিড্রাল রোড, কুইন্স ওয়ে, মেয়ো রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, আর এন মুখার্জি রোড, ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিট ছাড়াও প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য রাস্তায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এগুলিতে পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও থাকছে। দুপুর দুটোর মধ্যে রেড রোডে পৌঁছে যাওয়ার জন্য কমিটিগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের তরফে। রেড রোডের দু’পাশে দু’টি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুরের পোড়ামাটির শিল্প-সুষমার ছাপ প্রতি স্থানে। রেড রোডের দু’পাশে আলোকসজ্জায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে।
শোভাযাত্রার শুরুতেই থাকবে পুলিশের টর্নেডো টিম। প্রতিটি পুজো কমিটি তিনটি ট্রেলার বা লরিতে চাপিয়ে ট্যাবলো ও প্রতিমা নিয়ে আসবেন। প্রতি কমিটি ৫০ জনের দল নিয়ে শোভাযাত্রায় হেঁটে যাবেন। প্রতি ক্ষেত্রে সময় ধার্য করা হয়েছে দু’মিনিট। একদম সামনে থাকবে একটি করে পাইলট কার। আলোকসজ্জাতেও প্রতি কমিটি অভিনবত্ব আনতে চেয়েছে। শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব বৃহস্পতিবারই প্রতিমার আসল সোনার গয়না নামিয়ে নকল গয়নার সাজে সাজিয়েছে। সুরুচির থিম ‘উৎসব সবার’। ন’পাড়া দাদাভাই সংঘ চমক দিতে চাইছে। উত্তর শহরতলির ক্লাবগুলি খুব সকালেই ফোর্ট উইলিয়ামের দিকে রাস্তায় প্রতিমা নিয়ে চলে যাবে। টালা ব্রিজ বন্ধের কারণে সময়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে চাইছে না তারা।
রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প, যেমন রূপশ্রী, কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, খাদ্যসাথী, পথসাথী, যুবশ্রী, দিদিকে বলো আলোকসজ্জার মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। গতবার এই শোভাযাত্রায় পুজো উদ্যোক্তাদের তরফে অভিজিৎ, ঋতুপর্ণা, সুরজিৎ, অদিতি মুন্সিরা ছিলেন। এবারও তেমন চমক রাখবেন উদ্যোক্তারা। উৎসব ঘিরে কড়া নিরাপত্তাও থাকবে। সাদা পোশাকের পুলিশ ভিড়ে মিশে থাকবে। এ ছাড়া ওয়াচ টাওয়ার থেকেও চালানো হবে নজরদারি।
ছবি : পিন্টু প্রধান
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.