Advertisement
Advertisement
পুজো

স্বয়ং অন্নপূর্ণা, দুর্গা নিজেই রাঁধুনি ৫০০ বছরের এই বনেদি পুজোয়

১৫২০ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় এই পুজো।

Know amazing facts of Nadia's ghosh bari's Durga Puja
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:September 23, 2019 12:27 pm
  • Updated:September 23, 2019 2:44 pm  

পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন নদিয়ার ঘোষবাড়ির পুজো৷

বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: ঘি মাখানো আতপচাল, কাঁচা আনাজ আর নানান ধরনের মশলাপাতি ভোগের সঙ্গে রাখা হয় দেবী মূর্তির সামনে। এই বিশ্বাসে যে, নিজে হাতে রান্না করে দুর্গা পরিবারের ক্ষু্ন্নিবৃত্তির আয়োজন করবেন। ৫০০ বছর ধরে এই বিশ্বাস লালন করে চলেছেন নদিয়ার ঘোষবাড়ি। ১৫২০ খ্রিস্টাব্দে নদিয়ার রানাঘাটে এই পুজোর সূচনা করেন চৈতন্যচরণ ঘোষ। অবশ্য রানাঘাট তখনও রানাঘাট হয়নি। নাম ছিল ব্রহ্মডাঙা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: বীরভূমের স্নাতক ছাত্রীর হাতে রূপ পাচ্ছেন দুর্গা, মেয়ের কৃতিত্বে গর্বিত পিতা]

শুরুর পর থেকে পশুবলির জন্য বিখ্যাত ছিল ঘোষবাড়ির পুজো। নবমীর দিন ৫১টি পাঁঠা বলি দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। সন্ধিপুজোয় মোষ বলি দেওয়া হত। দূর-দূরান্তের গ্রাম থেকে সেই বলি দেখতে আসতেন মানুষজন। আনুমানিক ১৯৩০ সাল। এক স্বপ্নাদেশের ফলে বলি প্রথা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। সে গল্পও বড় অদ্ভুত।

ঘোষ পরিবারের সদস্যা ব্রজবালা। স্বপ্নে দেবী মূর্তিকে দেখতে পান। ঘোষ পরিবারের বর্তমান সদস্যরা জানিয়েছেন, স্বপ্নে দেখা দিয়ে দেবী বলি দিতে নিষেধ করেন। তা না মানলে অনর্থ ঘটে যাবে বলে দৈববাণী করে শুনতে পান ব্রজবালা। সকালে স্বপ্নের কথা জানাজানি হয়। তবে পুজোর ঘনঘটায় বিষয়টাতে কেউ আমল দেননি। স্বপ্নে পাওয়া দৈববাণীর সত্যাসত্য নিয়ে দোলাচলে থাকা ঘোষ শতাব্দীর উপর চলতে থাকা রীতি ভাঙতে সাহস দেখায়নি। এরপর নিয়ম মেনেই পুজো চলতে থাকে। ছাগ–পাঁঠা–মহিষ বলির রীতিও বহাল থাকে। আর বিপত্তিটা ঘটে সেবছরই। ব্রজবালার শ্বশুর রামগোপাল ঘোষ তখন গৃহকর্তা। দেবীপক্ষ চলাকালীন প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হলেন। দিনকয়েক ভুগে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন রামগোপাল। দৈববাণী ফলে গেল। তৎক্ষণাৎ কুল পুরোহিতের পরামর্শে বলি প্রথায় ছেদ টানল ঘোষ পরিবার। পাকাপাকিভাবে বন্ধ হল পশুবলি।

ghosh bari ranaghat

 

ঘোষেদের পৈতৃক জমিদারি ছিল অবশ্য হুগলি জেলার আখনা গ্রামে। কিন্তু সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বে ঘোষ পরিবারের মধ্যে বিভাজন ঘটে। জমিদার চৈতন্যচরণ ঘোষ তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ১৫২০ খ্রিস্টাব্দে নদিয়ার ব্রহ্মডাঙায় চলে আসেন। গৃহদেবতা লক্ষ্মী-জনার্দনকে সঙ্গে নিয়ে ব্রহ্মডাঙায় এসে তিনি রাতারাতি মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন। সেই বছরই শুরু করেন ঘোষ পরিবারের দুর্গাপুজো। জাঁকজমকের মধ্য দিয়েই সেই পুজো শুরু হয়েছিল। চৈতন্যচরণ ঘোষের কোনও সন্তান ছিল না। তাই পরে তাঁর ভাই মকরন্দ ঘোষ পুজোর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এরপর থেকে তাঁর বংশধররাই এই পুজো করে আসছেন। অবশ্য কালের নিয়মের প্রভাব পড়েছিল ঘোষবংশেও। শরিকদের মধ্যে ভাগাভাগির পর অনেকেই নিজেদের সম্পত্তি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যান। তার প্রভাবে দেবীমায়ের পুজোর জাঁকজমকে বেশ কিছুটা ভাটা পড়ে।

[আরও পড়ুন: তীব্র দহনজ্বালা থেকে পৃথিবীকে মুক্তির পথ দেখাবে খিদিরপুরের ২৫ পল্লির পুজো]

ঘোষবংশের ২৯ তম পুরুষ রঙ্গিত ঘোষ বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। এদিন রঙ্গিত ঘোষ জানালেন, “মাত্র তেরো বছর বয়সেই আমি পুজোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলাম। শরিকদের মধ্যে অনেকেই এখন আর সেইভাবে যোগাযোগ রাখেন না। পুজোর খবরও নেন না। তবে আমাদের বংশের বর্তমান প্রজন্মের মেয়েদের পরিবারের অনেকেই এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। পুজোয় তাঁরা সবাই যোগ দেন। এছাড়াও, স্থানীয় বেশ কয়েকজন মানুষের সহযোগিতায় আমাদের এই পুজো এবার ৫০০ বছরে পা দিল।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement